অর্ণবাংশু নিয়োগী: এসআইআর (SIR in Bengal) প্রক্রিয়ার মধ্যেই সিএএ (CAA) নিয়ে বড় সিদ্ধান্তের কথা জানাল কেন্দ্রীয় সরকার (Govt of India)। এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার করা মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট সেই সিদ্ধান্ত জানাল কেন্দ্র। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) নিয়ে 'আত্মদীপ সংগঠনের' করা মামলায় তাহলে বড় স্বস্তি পেলেন আবেদনকারীরা। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পাল ও বিচারপতি চৈতালি চ্যাটার্জির ডিভিশন বেঞ্চে শুনানিতে কেন্দ্র জানায়, এই মামলায় যুক্ত আবেদনকারীদের সমস্ত আবেদন দশ দিনের মধ্যে বিবেচনা করা হবে (Centre assures consideration within 10 days)। মতুয়া ও অন্যান্য আবেদনকারীদের জন্য এই রায়ে খুশির হাওয়া।
দেশজুড়ে যেখানে প্রায় পঞ্চাশ হাজার নাগরিকত্বের আবেদন ঝুলে আছে, সেখানে আপাতত শুধু পশ্চিমবঙ্গের আবেদনকারীদের জন্যই এই আশ্বাস দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আদালতে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে এ কথা জানান এডিশনাল সলিসিটার জেনারেল (ASG) অশোক চক্রবর্তী। পশ্চিমবঙ্গ থেকে যে সব মানুষ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন অনুসারে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন, তাঁদের আবেদন ১০ দিনের মধ্যে বিবেচনা করা হলে বলে জানানো হয়েছে কেন্দ্রের তরফে।
তিনি জানান, 'CAA-র মূল উদ্দেশ্য প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে বেআইনি ভাবে আগতদের চিহ্নিত করা। এই মামলায় যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁদের আবেদনের বিষয়টি দশ দিনের মধ্যে বিবেচনা করা হবে।' সিএএ অনুসারে যাঁরা নাগরিকত্বের আবেদন করেছেন, তাঁদের সেই আবেদন যাতে এসআইআর-এ গণ্য করা হয়, সেই আবেদন জানানো হয়েছিল এক এনজিও-র তরফে। আবেদন করার পর মাসখানেক কেটে গেলেও অনেকে এখনও উত্তর পাননি। ফলে, এসআইআর শুরু হয়ে যাওয়ায় তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন। আজ, সোমবার ছিল সেই মামলার শুনানি।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব আদালতে জানান, শুধুমাত্র এই মামলার সঙ্গে যুক্ত আবেদনকারীদের আবেদনই আপাতত খতিয়ে দেখা হবে। দেশের অন্যান্য প্রান্তে যেসব একই ধরনের মামলা বিচারাধীন রয়েছে, সেখানে এই নির্দেশ প্রযোজ্য হবে না।
রাজ্যের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই বিষয়ে রাজ্যের কোনও ভূমিকা নেই। কমিশনই সমস্ত কাজ করছে। কেন্দ্রের অভিযোগ, রাজ্য নব্বই দিনের মধ্যে আবেদন পাঠানোর কথা থাকলেও তা পাঠানো হয়নি।
অন্যদিকে, মামলাকারীর আইনজীবী মৈনাক বসু বলেন, 'এই জনস্বার্থ মামলায় দেশের সব আবেদনকারীর পক্ষেই কথা বলা হয়েছে। প্রায় পঞ্চাশ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। এগুলোর ভবিষ্যৎ কী হবে, তা কেন্দ্র জানাক— অনুমোদন দিক বা বাতিল করুক, অন্তত সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক।'
তিনি আরও বলেন, 'এনুমারেশন ফর্মে CAA আবেদনকারীদের জন্য কোনও নির্দিষ্ট অপশন রাখা হয়নি। তাই এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া জরুরি।' এদিন দুপুরে ফের শুনানি হবে এই মামলার।
প্রসঙ্গত, SIR নিয়ে দায়ের করা একটি জনস্বার্থ মামলা আজই খারিজ করল কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
'নাগরিকত্বের আবেদন করা মানেই কোনও অধিকার জন্মায় না'- মন্তব্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির।
'যাঁরা নাগরিকত্বের আবেদন জানিয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের বিষয়বস্তু আলাদা। ফলে জনস্বার্থ মামলায় এর বিচার করা সম্ভব না'- জানালেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি।
'যাঁরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানিয়েছেন তারা চাইলে আলাদা করে সমাধান খুঁজতেই পারেন' -জানালেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। নাগরিকত্বের আবেদন জানানোর নথি যেন SIR এর ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য হয় সেই আবেদন জানিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে একটি সংগঠন সেই মামলায় এই নির্দেশ।
এখন প্রশ্ন হল, যাঁরা নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন, তাঁদের জন্য কি এসআইআর-এ নতুন কোনও ফর্ম দেওয়া হবে? নাকি যে ফর্ম আছে, তার সঙ্গে কোনও নথি দিয়ে জমা করতে হবে। এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেদিকেই তাকিয়ে আছেন আবেদনকারীরা।