জিএসটি মেনে নেওয়া বড় ভুল ছিল! বকেয়া অর্থ নিয়ে কেন্দ্রকে বিঁধে বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা, রাজ্যের টাকা ফেরানোর দাবি
আনন্দবাজার | ১০ নভেম্বর ২০২৫
কেন্দ্রের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের অভিন্ন কর কাঠামো জিএসটি মেনে নেওয়া তাঁদের ‘বড় ভুল’ ছিল বলে মেনে নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘জিএসটি মেনে নেওয়া বড় ব্লান্ডার হয়েছিল!’’
এত দিন জিএসটির ভাগের টাকার দাবিতে একাধিক বার সরব হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা। কিন্তু এই প্রথম পুরনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ‘ভুল’ কবুল করলেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় ‘ইতিবাচক’ মনোভাব নিয়েই তাঁর নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার জিএসটি মেনে নিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি মনে করছেন, ওই মেনে নেওয়া ‘বড় ব্লান্ডার’ হয়েছিল।
অবশ্য রাজনৈতিক মহলের অনেকের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকার যদি দেশ জুড়ে করকাঠামোয় সংস্কার করতে চায়, তা হলে তা কোনও রাজ্যের আপত্তির উপর নির্ভর করে না। পশ্চিমবঙ্গ সরকার না-মানলেও তা চালু হতই। থেমে থাকত না। তাঁদের বক্তব্য, মমতার মতো পোড়খাওয়া রাজনীতিক সে বিষয়টি যে জানেন না, তা নয়। কিন্তু মমতা ‘বড় ব্লান্ডার’ বলেছেন ‘রাজনৈতিক’ কারণে। বোঝাতে চেয়েছেন, তিনি ‘ইতিবাচক’ মানসিকতা নিয়ে জিএসটি মেনে নিলেও কেন্দ্র সে বাবদে রাজ্যের ভাগের টাকা দিচ্ছে না।
ঘটনাচক্রে, তিন দশকের মাথায় বঙ্গ রাজনীতিতে ফিরল ইংরেজি শব্দ ‘ব্লান্ডার’। ১৯৯৬ সালে যে শব্দ উচ্চারণ করেছিলেন তৎকালীন বাম সরকারের মুখ্যমন্ত্রী অধুনাপ্রয়াত জ্যোতি বসু, ২০২৫ সালের নভেম্বরে সেই ‘ব্লান্ডার’ শব্দটিই শোনা গেল বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। দু’জনের শব্দ ব্যবহারের প্রেক্ষাপটও একই— নিজেদের সিদ্ধান্তের সমালোচনা।
অকংগ্রেসি দলগুলি জ্যোতিবাবুকে প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রস্তাব দিয়েছিল ১৯৯৬ সালে, যা প্রত্যাখ্যান করেছিল তাঁর দল সিপিএমের সর্বোচ্চ কমিটি। সেই সিদ্ধান্তকে ‘হিস্টোরিক্যাল ব্লান্ডার’ (ঐতিহাসিক ভুল) বলেছিলেন জ্যোতিবাবু। আর বিজেপি সরকারের অভিন্ন করকাঠামো জিএসটি মেনে নেওয়াকে ‘বড় ব্লান্ডার’ বললেন মমতা। সোমবার উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। দুর্যোগের পরে ত্রাণ ও পুনর্গঠন নিয়ে উত্তরবঙ্গের প্রশাসনিক ভবন ‘উত্তরকন্যা’য় তাঁর বৈঠক ছিল। সেখানেই মমতা বলেন, ‘‘জিএসটি মেনে নেওয়া বড় ব্লান্ডার হয়েছিল।’’
মুখ্যমন্ত্রী এ-ও জানান যে, জিএসটি যখন শুরু হয়, তখন রাজ্যের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র তাঁকে অভিন্ন করকাঠামো সম্পর্কে বুঝিয়েছিলেন। তার পরে প্রথম রাজনৈতিক দল হিসাবে তৃণমূল এবং রাজ্য সরকার হিসাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার জিএসটি-কে সমর্থন করেছিল। কিন্তু জিএসটির নামে রাজ্যগুলি থেকে টাকা তুলে নিয়ে গেলেও রাজ্যের ভাগের টাকা কেন্দ্র দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘অন্য রাজ্যকে টাকা দিচ্ছে। বিজেপির রাজ্যে সব খরচ করছে। কিন্তু বাংলার ভাগের টাকা না-দিয়ে সব নিয়ে চলে যাচ্ছে। আমি মনে করি রাজ্যের কর রাজ্যকে ফেরত দেওয়া উচিত।” মমতা আরও বলেন, ‘‘টাকা তো দেয়ইনি, উল্টে আমাদের রাজ্য থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে চলে গিয়েছে।’’
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা, গ্রাম সড়ক যোজনা, জলজীবন মিশনের মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির টাকা বাংলাকে দেওয়া হচ্ছে না বলে ধারাবাহিক ভাবে সরব তৃণমূল। লোকসভা ভোটের আগে ১০০ দিনের কাজের বকেয়া মজুরি মেটাতে রাজ্য নিজের কোষাগার থেকেই ৫৯ লক্ষ মানুষের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়েছিল। সোমবার মমতা বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গে এত বড় বিপর্যয়ের পরেও একটা টাকাও দেয়নি কেন্দ্র। সব আমাদের করতে হয়েছে।’’