• এসআইআর ফর্ম বিলির সময় ব্রেন স্ট্রোকে মৃত্যু বিএলও-র: ক্ষোভ উগরে দিলেন স্বামী, ৩৬ ঘণ্টা পর বাড়িতে বিডিও
    আনন্দবাজার | ১০ নভেম্বর ২০২৫
  • বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসআইআর ফর্ম বিলির সময়েই অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে পূর্ব বর্ধমানের মেমারির এক বিএলওর। নাম নমিতা হাঁসদা। বিপুল কাজের চাপে তাঁর ব্রেন স্ট্রোক হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের। সেই মৃত্যুর পর ৩৬ ঘণ্টা কেটে গেলেও, এখনও প্রশাসনের কারও দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ করেছিলেন নমিতার স্বামী মাধব হাঁসদার। ঘটনাচক্রে, তার পরেই সোমবার দুপুরে বাড়িতে গেলেন মেমারি ২ নম্বর ব্লকের যুগ্ম বিডিও কুন্তল কুমার মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘মৃতার পরিবার আমাকে বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী তাদের যেন আর্থিক সাহায্য করা হয়।’’

    শনিবার মৃত্যু হয়েছে মেমারির চক বলরামপুরের ২৭৮ নম্বর বুথের বিএলও তথা বছর পঞ্চাশের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী নমিতার। তাঁর মৃত্যুতে নির্বাচন কমিশনের কাছে পরিবারের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে বিএলও-দের সংগঠন। পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক আয়েশা রানি রবিবার বলেছিলেন, “অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছেন। মেমারির চক বলরামপুরের ঘটনাটির খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।”

    পরিবারের দাবি, এসআইআর ফর্ম বিলি নিয়ে প্রচণ্ড চাপের মধ্যেই ঘটনাটি ঘটেছিল। প্রায় প্রতি দিনই ফোনে তাগাদা দেওয়া হত দ্রুত ফর্ম বিলি করার জন্য। অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারের কাজ সামলেই ফর্ম বিতরণে বেরিয়ে পড়তে নমিতাকে। শনিবার বোহার-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের চক বলরামের বাঙালপুকুর এলাকায় ফর্ম বিলি করতে গিয়েই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তড়িঘড়ি কালনা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে রাতে সেখানেই মৃত্যু হয় নমিতার। মৃতার স্বামী বলেন, ‘‘ওকে প্রতি দিন ফোনে তাগাদা দেওয়া হত ফর্ম বিলির জন্য। বাড়ির কাজ, সেন্টারের কাজ সব সামলে রাত অবধি বাইরে থাকতে হত। সেই চাপই ওর মৃত্যু ডেকে এনেছে।”

    মাধব জানান, প্রশাসন সেই ভাবে পাশে না-দাঁড়ালেও, রাজনৈতিক নেতাদের আনাগোনা শুরু হয়েছে বাড়িতে। তাঁর সঙ্গে দেখা করেন মেমারি-২ ব্লকের তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি মহম্মদ ইসমাইল ও বর্তমান সভাপতি হরিসাধন দে। দেখা করতে যান সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তাপস চট্টোপাধ্যায়ও। তাঁরা সকলেই আশ্বাস দিয়েছেন, পরিবারের পাশে থাকবেন তাঁরা।

    মেমারি-২ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি হরিসাধন বলেন, “এই ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক। আমরা পরিবারের পাশে আছি। প্রয়োজনে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে সাহায্যের ব্যবস্থা করা হবে।” সিপিএম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তাপস বলেন, ‘‘এক জন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর উপর এ ভাবে অতিরিক্ত কাজের চাপ চাপিয়ে দেওয়া অন্যায়। এসআইআর-এর নামে মানুষকে নির্যাতন করা হচ্ছে।”

    সোমবার দুপুরে নমিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান সংশ্লিষ্ট এলাকার বিএলও-রা। পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে কমিশনের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন তাঁরা।বিএলও সভ্যচাঁদ মুর্মু এবং সুমন্ত ঘোষ জানান, নমিতার পরিবারের দাবির সঙ্গে তাঁরাও একমত। তাদের ভীষণ কাজের চাপ দেওয়া হচ্ছে। কমিশন নির্দিষ্ট সময়মতো এনুমারেশন ফর্ম দিতে বলছে। কিন্তু সময় একদম কম।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)