অবশেষে বন্দিত্ব ঘুচছে পার্থের! নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জামিন ৩ বছর ৩ মাস ১৮ দিন পরে, বাড়ি ফিরতে পারেন মঙ্গলবার
আনন্দবাজার | ১০ নভেম্বর ২০২৫
অবশেষে জেলমুক্তি হতে চলেছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। সোমবার বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক পার্থকে জেলমুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর পর আদালতের নথি মুখ্য বিচারবিভাগীয় আধিকারিকের কাছে পৌঁছোবে। নথি পৌঁছোবে প্রেসিডেন্সি জেল কর্তৃপক্ষের কাছেও। তার পর জেলমুক্ত হতে আর কোনও বাধা থাকার কথা নয় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর।
শারীরিক নানা সমস্যায় কাবু পার্থ বেশ কয়েক মাস ধরেই বাইপাসের ধারের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাই জেলমুক্তির বিষয়টি জানানো হবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও। সোমবার হাসপাতাল থেকেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে আদালতের শুনানিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। জেলমুক্তির নির্দেশ শুনে হাসতেও দেখা যায় তাঁকে। তবে জেলমুক্তির প্রক্রিয়া মিটতে মিটতে মঙ্গলবার হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ৩ বছর ৩ মাস ১৮ দিন পর মঙ্গলবারই নিজের বাড়িতে ফিরতে পারেন পার্থ। পায়ের সমস্যায় ভুগছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। জেলমুক্ত হওয়ার পর বাড়িতে কী ভাবে তাঁর চিকিৎসা চলবে, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে।
নিয়োগ মামলায় ২০২২ সালের ২৩ জুলাই কলকাতার নাকতলার বাড়ি থেকে পার্থকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট কয়েক মাস আগেই বলে দিয়েছিল যে, সিবিআইয়ের মামলায় বিচারপর্ব শুরু হলেই পার্থ, এসএসসির তৎকালীন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য ও উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহের শর্তাধীন জামিন মঞ্জুর করা যাবে। ১৪ নভেম্বরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করে চূড়ান্ত জামিন মঞ্জুর করার নির্দেশও দেয় শীর্ষ আদালত।
তার পরেই মামলার চার্জ গঠন করে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করেন আলিপুর সিবিআই বিশেষ আদালতের বিচারক। প্রথম দফায় আট জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে বলে নিম্ন আদালতে সিদ্ধান্ত হয়। সিবিআইয়ের তরফে আট জন সাক্ষীর নাম প্রস্তাব করা হয়। সোমবার অষ্টম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শেষ হয়েছে।
২০২২ সালের জুলাই মাসে স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় পার্থকে প্রথম গ্রেফতার করেছিল ইডি। সেই থেকে তিনি জেলে। কখনও কখনও চিকিৎসার প্রয়োজনে হাসপাতালে। এর আগে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ইডির মামলায় তাঁকে জামিন দেওয়া হয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত সিবিআইয়ের মামলা থেকেও তিনি জামিন পেয়েছেন। সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশে শিক্ষক নিয়োগের মামলায় আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালত সাত হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে পার্থের জামিন মঞ্জুর করে। শুধুমাত্র এসএসসির গ্রুপ সির মামলায় পার্থের চূড়ান্ত জামিন মঞ্জুর হয়নি এত দিন। তবে সেই মামলাতেও সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শেষ হওয়ায় জেলমুক্তির ক্ষেত্রে আর বাধা রইল না পার্থের।
পার্থ এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে দু’টি ফ্ল্যাট থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা নগদ উদ্ধার করেছিল ইডি। সোনাদানা, বাড়ি মিলিয়ে প্রায় ৬০ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। এর পর গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি-সহ একাধিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নাম জড়ায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর। ইডির পর তাঁকে সিবিআই-ও গ্রেফতার করে। গঠন করা হয় চার্জশিট। পার্থ-ঘনিষ্ঠ অর্পিতা ইতিমধ্যে জামিন পেয়ে গিয়েছেন। কিন্তু পার্থ জেলবন্দিই ছিলেন। বার বার জামিন চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। দেখিয়েছেন শারীরিক অসুস্থতার কারণও।
প্রাথমিকে নিয়োগ মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে গত ২৭ ডিসেম্বর চার্জশিট জমা দিয়েছিল সিবিআই। তাতে পার্থ ছাড়াও অয়ন শীল, সন্তু গঙ্গোপাধ্যায়দের নাম রয়েছে। এই মামলায় রাজসাক্ষী হয়েছিলেন পার্থের জামাই কল্যাণময় ভট্টাচার্য। রাজসাক্ষী হওয়ার পর অভিযুক্তদের তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। নিয়োগ মামলায় অনেকেই জামিন পেয়ে গিয়েছেন। কেন পার্থকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না, আদালতে বার বার সে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁর আইনজীবীরা। এই সংক্রান্ত আবেদনের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের যুক্তি ছিল, পার্থ নিয়োগ দুর্নীতির ‘মূল মাথা’। মন্ত্রিত্ব হারালেও তিনি প্রভাবশালী। তাই তিনি জেল থেকে বেরোলে তদন্তে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।