• মুছে গিয়েছে মাওবাদের আতঙ্ক, ২৫ বছর পর ভোট দেবে বিহারের চোরমারা গ্রাম
    প্রতিদিন | ১১ নভেম্বর ২০২৫
  • সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মাওবাদের ভয়াবহ অতীতকে দূরে সরিয়ে ২৫ বছর পর গণতন্ত্রের উৎসবে সামিল হচ্ছে বিহারের চোরমারা গ্রাম। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ভোট দেবেন এই গ্রামের বাসিন্দারা। মাওবাদীমুক্ত ভারতের লক্ষ্যে বিহারের জামুই জেলায় অবস্থিত এই গ্রাম গোটা দেশের কাছে এক নজির।

    কয়েক দশক আগেও বিহারের এই অঞ্চল পুরোপুরি ছিল মাওবাদীদের অধীনে। ২৫ বছর ধরে এখানকার মানুষ দেখে এসেছে হিংসা ও মৃত্যু। বাকি পৃথিবীর থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন এই গ্রামের মানুষ আতঙ্কে বাড়ি থেকে বের হত না। তবে মোদি সরকারের মাওবাদমুক্ত ভারত গঠনের লক্ষ্যে চোরমারাতেও মোতায়েন করা হয় নিরাপত্তাবাহিনী। লাগাতার অভিযানের পর মাওবাদ মুক্ত হয়েছে এই গ্রামও। চমকপ্রদ বিষয় হল, এই গ্রামের যে স্কুল একসময় মাওবাদীরা বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছিল সেই স্কুল পুনরায় নির্মাণ করে সেখানেই হতে চলেছে ভোটগ্রহণ। সোমবার চোরমারা প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ২২০ নম্বর ভোটকেন্দ্র হিসেবে স্থাপন করা হয়েছে। মঙ্গলবার এখানে এসে ভোট দেবেন গ্রামবাসীরা।

    একসময় এখানকার মাওবাদী কমান্ডার বালেশ্বর কোডার পুত্র সঞ্জয় কোডা বলেন, “এই গ্রাম একটা সময় মাওবাদীদের কবলে ছিল। আমার বাবা ছিলেন মাওবাদী কমান্ডার। সবাই তাঁকে ভয় পেত। এমনকী আমিও। তবে আজ আমি খুশি যে এখানকার মানুষ এতবছর পর ভোট দেবেন। আমি নিজে ভোটকেন্দ্র প্রস্তুতিতে হাত লাগিয়েছি।” সঞ্জয় কোডার স্ত্রী এখন চোরমারা স্কুলে শিক্ষিকা। তিনি বলেন, “সেই ভয়াবহ আতঙ্ক এখন অতীত। আমার শ্বশুর একজন মাওবাদী কমান্ডার ছিলেন। পরে তিনি আত্মসমর্পণ করেন। অবশেষে আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছি এর চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে না।”

    মাওবাদকে সামনে থেকে দেখা দেখা গ্রামেরই এক বৃদ্ধা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “সে ভয়াবহ দিন আজও আমাকে দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করে। আমার চোখের সামনে মাওবাদীরা ১০ জনকে খুন করেছিল। রাতে গ্রাম থেকে লোকজনকে তুলে নিয়ে যেত মাওবাদীরা। শিশুদের তাদের সঙ্গে যোগ দিতে বাধ্য করা হত।” তবে দুঃসময় কেটে গেলেও সতর্কতায় আজও কোনও খামতি নেই এই গ্রামে। এখনও এখানে গ্রামে মোতায়েন রয়েছে নিরাপত্তাবাহিনী। ভয়াবহতাকে পিছনে ফেলে নতুন করে জল, বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাটের মতো উন্নয়নের চাহিদা নিয়ে আগামিকাল ভোটকেন্দ্রে পা রাখবেন চোরগ্রামের মানুষ।
  • Link to this news (প্রতিদিন)