শুভঙ্কর বসু, কাটিহার: কিং নাকি কিং মেকার? বিহারের রাজনীতিতে পা রাখা ইস্তক ভোট কুশলী পিকে বা প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে চর্চা চলছে। বিহারের গন্ডি পেরিয়ে তা পৌঁছেছে জাতীয় স্তরেও। তিনিই কি এবার বিহারের ভোটে এক্স ফ্যাক্টর? এই প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে ভোটের বাক্স খুললে। আর এই ফলাফলের উপরই নির্ভর করছে পিকে-র রাজনৈতিক ভবিষ্যত।
বিহারে প্রথম দফায় ১২১ আসনে ভোট হয়েছে। এবার দ্বিতীয় দফার ১২২ আসনের নির্বাচনকেই পাখির চোখ করেছেন প্রশান্ত। জন সুরাজ দল গড়ার পর থেকে নতুন বার্তা দিয়ে বিহারবাসীর মন জয় করতে চেয়েছেন পিকে। বরাবরই বলছেন, শুধু মুসলিম ভোট দিয়ে বিজেপিকে হারানো যাবে না। মুসলিমদের উচিত মহাত্মা গান্ধী ও আম্বেদকরের ভাবধারায় বিশ্বাসীদের সঙ্গে হাত মেলানো। অর্থাৎ কংগ্রেস ও আরজেডির ভোটব্যাংকে থাবা বসানোই পিকের লক্ষ্য।
দ্বিতীয় দফায় ভোটগ্রহণে বিশেষ নজর সীমাঞ্চলে। বিহারের ১৭ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যার বেশিরভাগই রয়েছে এখানে। আর বেশ কিছুদিন ধরেই এই অঞ্চলের মুসলিম ভোটারদের মধ্যে প্রভাব বিস্তারে সচেষ্ট পিকে। বিভিন্ন জনসভায় সংখ্যালঘুদের প্রতি তাঁর বার্তা, ‘এবার জাত-ধর্ম দেখে নয়। নিজেদের সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভোট দিন।’ আর পরিকল্পনামতো কাটিহার, পূর্ণিয়া, কিষাণগঞ্জের মতো জেলায় ব্যাপক প্রচার চালিয়েছে জন সুরাজ। তাৎপর্যপূর্ণভাবে মধ্য বিহারে এভাবে প্রচারে ঝাঁপায়নি তারা।
সীমাঞ্চলের এই জেলাগুলিতে ২০২০ সালে ওয়েইসির দল মিম পাঁচটি আসনে জিতে ছিল। এবারও ২৫ টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে মিম। তবে এবার তারা ততটা দাগ কাটতে পারছে না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বদলে তৃতীয় বিকল্প হয়ে এবার উঠে এসেছে পিকের দল।
সীমাঞ্চলে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ, যা বিহারের অন্য কোন অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি। রাজনীতিবিদদের মতে সীমাঞ্চল ‘সুইং জোন’। পিকের পাখির চোখ এই সংখ্যালঘু ভোট। প্রচারে তিনি বারবার বলছেন, এতদিন মুসলিমরা একচেটিয়া একটি দলকেই ভোট দিয়ে আসছেন। কিন্তু বিনিময়ে তারা তেমন কিছু পাননি। শিক্ষা, রোজগার, উন্নয়ন- কোন ক্ষেত্রেই মুসলিমদের তেমন কোনও উন্নতি হয়নি। তাই এবার নিজেদের ভবিষ্যৎ ভেবে মুসলিমদের ভোট দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন পিকে। যদিও কাটিহারের জন সুরাজ প্রার্থী গাজি শারিকের কথায়, তাঁরা জাত-ধর্মের ভিত্তিতে নয়, বরং কাজ ও যোগ্যতা ভিত্তিতে রাজনীতি করতে এসেছেন। রাজনৈতিক মহল বলছেন, ভোট পরবর্তী পর্বে নিজের প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে সীমাঞ্চলেই বাজি ধরেছেন পিকে। এখানে কিছু আসন জিতে নিতে পারলে দর কষাকষির জমি তৈরি হবে। আর এর মাধ্যমে বিহারের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের পথ উন্মক্ত হয়ে যাবে তাঁর সামনে।