• ঋণে দেউলিয়া, মহিলাদের ক্ষোভের আঁচে আজ বিহারে শেষ দফার ভোট
    বর্তমান | ১১ নভেম্বর ২০২৫
  • শুভঙ্কর বসু, পূর্ণিয়া: স্বামীর চিকিৎসার জন্য মাইক্রোফিনান্স কোম্পানির থেকে এক লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন পূর্ণিয়ার মঞ্জুলা। আয় নেই। তাই সময়মতো সেই টাকা শোধ করতে পারেননি। ভোটের আগে মহিলা রোজগার যোজনায় ১০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। যেদিন টাকা হাতে পান, সেদিনই ছোঁ মেরে নিয়ে গিয়েছে স্বল্প ঋণদানকারী সংস্থা বা মাইক্রো ফিনান্সের এজেন্টরা। এখনও বাড়ি বয়ে এসে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে তারা।

    মেয়ের বিয়ের জন্য ফিউশন ব্যাংক নামক একটি মাইক্রোফিনান্স কোম্পানির থেকে দু’লাখ টাকা লোন নিয়েছিলেন বাহাদুরপুরের সরলা। ‘হর রোজ কল করকে গন্দা গালিয়া দেতে থে কোম্পানিওয়ালে। মজবুর হোকে খুদকা জান হি লে লিয়া উনহোনে।’... বলছিলেন সরলা। থানায় রিপোর্ট লেখাতে গেলে উলটে তাঁকে ভাগিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

    পূর্ণিয়ার সরলা থেকে তাঞ্জুম বা কিষানগঞ্জের সুরাইয়া, শবনম কিংবা কাটিহারের অনিতা। ওঁরা সকলেই নীতীশ কুমারের সরকারি প্রকল্প ‘জীবিকা’র মাধ্যমে‌ মাইক্রোফিনান্স কোম্পানির থেকে লোন করেছিলেন। ভেবেছিলেন, আর গ্রামের মহাজনের লাল চোখ দেখতে হবে না। টাকা শোধ করতে দেরি হলে দায় নেবে সরকার। কিন্তু কোথায় কী? ওঁদের পাশে সরকার নেই। সময় মতো ঋণ শোধ করতে না পারায় চক্রবৃদ্ধি হারে সুদের বোঝায় আজ সকলেই দেউলিয়া। বিহারের সীমাঞ্চলের জেলাগুলিতে গ্রামকে গ্রাম একই চিত্র। সরকার হাত তুলে নিয়েছে। মহিলাদের কথায় ঝরে পড়ছে একরাশ ক্ষোভ। আর সেই ক্ষোভের আঁচেই আজ, মঙ্গলবার বিহারে দ্বিতীয় এবং শেষ দফার নির্বাচন। ২০ জেলার ১২২টি আসনে। এই পর্বে প্রার্থী মোট ১৩০২ জন। সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৭০ লক্ষ ভোটারের মধ্যে পুরুষ ১ কোটি ৯৫ লক্ষ এবং মহিলার সংখ্যা ১ কোটি ৭৪ লক্ষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দফার ভোটেই নির্ধারিত হবে, কার দখলে থাকবে পাটলিপুত্রের রাজ দরবার।

    ২০০৫ সালে এসেছিলেন সরকারে। আর মহিলাদের স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে ২০০৬ সালে ‘জীবিকা’ প্রকল্প চালু করেছিলেন নীতীশ। পাশাপাশি এই প্রকল্পের আওতায় মাইক্রোফিনান্স কোম্পানিগুলিকে সংযুক্ত করে মহিলাদের ঋণদানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারি এই প্রকল্পের আওতায় ঋণ নেওয়ার পর দেনার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছেন বহু মহিলা। তাঁদের খোঁজ এখন আর রাখে না সরকার। বিশেষত আরারিয়া, কিষানগঞ্জ, পূর্ণিয়া, কাটিহারের মত সীমাঞ্চলের জেলাগুলির প্রায় প্রতিটি গ্রামে গেলেই এমন মহিলাদের খোঁজ মিলবে। 

    ‘সরকারি প্রকল্প হলেও এই কোম্পানিগুলির উপর কোনও নজরদারি নেই সরকারের। গ্রামের বহু মহিলা এই দিনের কারণেই পরিযায়ী হতে বাধ্য হয়েছেন।’ বলছিলেন স্থানীয় আরজেডি নেতা কুমার। বিরোধী মহাজোটের পূর্ণিয়ার প্রার্থী জিতেন্দ্র কুমারের কথায়, ‘মাইক্রোফিনান্স কোম্পানিগুলি ভুল বুঝিয়ে কাগজে সই করিয়ে নেয়। ফলে না জেনে ফাঁদে পড়েন মহিলারা।’ 

    আসলে সরলা, অনিতারা যে চড়া সুদে ঋণ নিচ্ছেন, তা তারা জানতেই পারছেন না। এখন গুনতে হচ্ছে ২১ থেকে ২২ শতাংশ সুদ। কাটিহারের অনিতা বলছিলেন, ‘ঋণ নেওয়ার সময় কোম্পানির লোক শুধু মাসিক কিস্তি কত দিতে হবে, সেটুকুই জানায়।’... ‘ভারী আফদকে কারণ হি কোই লোন লেতা হ্যায়। অউর উসকা ফায়দা উঠাতা হ্যায় মাইক্রোওয়ালে। সরকার ভি চুপ।’ অনিতার অভিযোগ, মহিলা রোজগার যোজনার টাকা এ তল্লাটের কেউ পায়নি। পাবেও না। 

    বরাবরই মহিলাদের সমর্থন বা ভোটই নীতীশের নির্ণায়ক। আর সেই মহিলাদের ক্ষোভের আঁচেই আজ নির্ধারিত হবে ভোট ভাগ্য। সীমাঞ্চলের। বিহারেরও।
  • Link to this news (বর্তমান)