• সকালে বিস্ফোরক উদ্ধার, তোলপাড়, কাশ্মীর যোগ, গ্রেফতার ৩ ডাক্তার
    বর্তমান | ১১ নভেম্বর ২০২৫
  • ফরিদাবাদ: দিল্লি থেকে হরিয়ানার ফরিদাবাদের দূরত্ব কতটা? মেরেকেটে ৩০ কিলোমিটার। দেশের রাজধানীর প্রায় নাকের ডগায় বসেই বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক জমা করেছিল জঙ্গিরা। সোমবার সকালেই দুই ডাক্তারের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় প্রায় তিনহাজার কেজি বিস্ফোরক। সঙ্গে একে-৪৭ সহ একাধিক অ্যাসল্ট রাইফেল, বিদেশি পিস্তল, কার্তুজ, ম্যাগাজিন, টাইমার সহ আইইডি তৈরির নানা সামগ্রী। আর তারপর.. সন্ধ্যাতেই লালকেল্লা চত্বর কেঁপে উঠল এক ভয়াবহ বিস্ফোরণে। যে গাড়িটিতে প্রথম বিস্ফোরণ হয়, সেটিও হরিয়ানার। ফলে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে গোটা দেশে। রাজধানীর মতো সুরক্ষিত অঞ্চলের এত কাছে কীভাবে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক মজুত করল জঙ্গিরা? উঠে গিয়েছে সেই প্রশ্নও।

    জঙ্গিদের একটি হুমকি পোস্টারের সূত্র ধরে এদিন সকালে নাশকতার ছক বানচাল করে জম্মু-কাশ্মীর, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশ পুলিশের যৌথ তদন্তকারী টিম। গত ১৫ দিন ধরে চলা এই অভিযানে হদিশ মিলেছে কুখ্যাত পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন জয়েশ-ই-মহম্মদের ‘স্লিপার সেলে’র। মোট আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর বিষয় হল, ধৃতদের মধ্যে তিনজন চিকিত্সক। একজন আবার মহিলা। তিন চিকিৎসকের নাম মুজাম্মিল আহমেদ গনি, আদিল মাজিদ রাঠের ও শাহিন শাহিদ। প্রথম দু’জন কাশ্মীরের ও শাহিন লখনউয়ের বাসিন্দা। প্রত্যেকে জয়েশ-ই-মহম্মদ এবং অপর জঙ্গি সংগঠন আনসার গাজওয়াতুল হিন্দের হয়ে কাজ করত। তাদের সঙ্গে পাকিস্তানের একাধিক ব্যক্তির যোগাযোগের প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে।

    ঘটনার সূত্রপাত গত ২৭ অক্টোবর। শ্রীনগরের রাস্তায় জইশের পোস্টার সাঁটানোর অভিযোগ ওঠে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে পুলওয়ামার বাসিন্দা মুজাম্মিল ও কাজিগুন্দের বাসিন্দা আদিলের সন্ধান পায় কাশ্মীর পুলিশ। ফরিদাবাদের আল ফালাহ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের চিকিত্সক মুজাম্মিলকেই প্রথমে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জেরা করেই খোঁজ মেলে সাহারানপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তার আদিলের। গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত সে অনন্তনাগের সরকারি মেডিকেল কলেজে কর্মরত ছিল। জেরায় আদিল জানায়, অনন্তনাগের হাসপাতালের লকারে একটি একে-৪৭ রাইফেল রয়েছে। টানা জিজ্ঞাসাবাদের মুখে মুজাম্মিলও স্বীকার করে ফরিদাবাদের ভাড়া বাড়িতে প্রচুর বিস্ফোরক মজুতের কথা।

    রবিবার ধোজ এলাকায় ভাড়া নেওয়া ওই বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ৩৫০ কেজি বিস্ফোরক, ২০টি টাইমার, হ্যান্ডগান, অ্যাসল্ট রাইফেল উদ্ধার হয়। সাড়ে তিন বছর ধরে সেটির ভাড়া মেটাচ্ছে মুজাম্মিল। সপ্তাহ দুয়েক আগেই সে ওই বিস্ফোরক হাতে পায়। পরে তাগা গ্রামে তার আরও একটি ভাড়া বাড়ির সন্ধান মেলে। সেখানে আটটি বড়ো এবং চারটি ছোটো সুটকেসে পাওয়া যায় আরও ২৫৬৩ কেজি বিস্ফোরক। এই বিস্ফোরকের বেশিরভাগই অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বলে খবর। কারণ, ফরিদাবাদের পুলিশ কমিশনার সত্যেন্দ্রকুমার গুপ্তা জানিয়েছেন, ওই বিস্ফোরক আরডিএক্স নয়। এর বেশি কোনও মন্তব্য করতে তিনি রাজি হননি। ওই ভাড়া বাড়ির মালিক এক মৌলানা। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মুজাম্মিলের সঙ্গে একই হাসপাতালে কর্মরত শাহিন নামে ওই মহিলা চিকিত্সকেরও খোঁজ পান তদন্তকারীরা। তাঁর মারুতি সুইফট গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে আরও একটি একে-৪৭ রাইফেল, পিস্তল ও প্রচুর কার্তুজ উদ্ধার হয়। শাহিনকে ইতিমধ্যেই শ্রীনগর নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)