• নাশকতা? নিশানায় দিল্লি, লালকেল্লার কাছে বিস্ফোরণ, নিহত ৯, দেশজুড়ে হাই অ্যালার্ট
    বর্তমান | ১১ নভেম্বর ২০২৫
  • সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি: রাজধানী দিল্লিতে ফিরে এল জঙ্গি হামলার আতঙ্ক! সোমবার ভরসন্ধ্যায় লালকেল্লার সামনে এক চলন্ত গাড়ির মধ্যে আচমকা বিস্ফোরণ। আর তাতেই কেঁপে উঠল পুরোনো দিল্লির বিস্তীর্ণ অঞ্চল। রাত পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছে। ছিন্নভিন্ন একাধিক হতভাগ্যের শরীর। হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ২০ জন। গোটা দিল্লিই শুধু নয়, দেশজুড়ে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এমনকি, ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত এলাকাতেও। আর প্রতি মুহূর্তে মাথাচাড়া দিয়েছে একটাই প্রশ্ন, দিল্লির এই বিস্ফোরণ আসলে কি নাশকতা? জঙ্গি হামলা? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এদিন রাতে স্পষ্ট বলেছেন, ‘আমরা সবরকম সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছি। কোনও সম্ভাবনাই উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।’ তিনি রাতে ঘটনাস্থলেও যান। স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জঙ্গি যোগের সন্দেহ অগ্রাহ্য না করায় আরও বেশি করে জল্পনা ও চর্চা শুরু হয়েছে—তাহলে কি অপারেশন সিন্দুরের বদলার প্রতিজ্ঞা পূরণ শুরু করল লস্কর-জয়েশ? পাক অধিকৃত কাশ্মীরে একের পর এক জঙ্গি শিবির ধ্বংসের বদলা? 

    দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিট নাগাদ লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের ১ নম্বর মেট্রো স্টেশনের সামনের রাস্তায় অত্যন্ত ধীরগতিতে যাওয়া একটি গাড়িতে প্রথমে বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর ভয়াবহ বিস্ফোরণের অভিঘাতে চকিতে ওই গাড়ির পিছনে ও আশপাশে থাকা তাবৎ গাড়িতে ছড়িয়ে যায় আগুন। লালকেল্লার ঠিক বিপরীত দিকের রাস্তা গিয়েছে চাঁদনি চকের দিকে। সর্বদাই এই গোটা অঞ্চল ভিড়ে ও গাড়িতে ঠাসা। এই তথ্য থেকেই উঠে আসছে একঝাঁক প্রশ্ন ও সন্দেহ। ওই গাড়িতেই কি বিস্ফোরক রাখা ছিল? সেটি কি? নেহাৎ গ্যাস সিলিন্ডার? নাকি সঙ্গে আইইডি! শুধু সিলিন্ডার বিস্ফোরণের অভিঘাতে এই তীব্র বিস্ফোরণ এবং মৃত্যুর সংখ্যার সামঞ্জস্য পাওয়া যাচ্ছে না। যেখানে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেখানে বিস্ফোরণে ভস্মীভূত গাড়িগুলির পাশেই পাওয়া গিয়েছে কার্তুজ। কিন্তু সবথেকে উদ্বেগজনক যে তথ্য উঠে আসছে, সেটি হল—যে চলন্ত গাড়িতে ওই বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেখানে অন্তত তিন জন যাত্রী ছিল। হুন্ডাই আই-টুয়েন্টি গাড়ির সওয়ারীরা কী নিয়ে যাচ্ছিলেন? তারা কি শুধুই দুর্ঘটনার শিকার? নাকি তারা আত্মঘাতী বাহিনী? 

    ২০০১ সালের পার্লামেন্ট অ্যাটাকের পর আর আত্মঘাতী বাহিনীর হামলা দিল্লিতে হয়নি। গাড়িতে বিস্ফোরণ এবং রাজধানী দিল্লি। এই মোডাস অপারেন্ডির সঙ্গে ফিরে আসছে হিজবুল মুজাহিদিনের অতীত কর্মকাণ্ড। ২০০৫ সালের দীপাবলির আগের রাতে পাহাড়গঞ্জ, লাজপত নগর, গোবিন্দপুরীর বিস্ফোরণে ২১০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। বিস্ফোরক রাখা হয়েছিল গাড়িতে ও বাসে। ২০১১ সালে দিল্লি হাইকোর্টের রিসেপশনে রাখা হয় আরডিএক্স। বিস্ফোরণে ৫ জনের মৃত্যু হয়। ফের একই সূত্রে লালকেল্লা ও নাশকতার ইঙ্গিত। মনে করিয়ে দিচ্ছে লস্করের অতীত হামলাও। ২০০০ সালে এই লালকেল্লার মধ্যেই চলেছিল গুলি। হরিয়ানা রেজিস্ট্রেশনের ওই আই-টুয়েন্টি গাড়ির ‘মালিক’ সলমনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তার অবশ্য দাবি, গাড়ি সে আগেই বিক্রি করে দিয়েছিল। তাতে অবশ্য রেহাই মেলেনি। কারণ পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, তারিক নামে পুলওয়ামার এক বাসিন্দা সেই গাড়ি কেনে। ফলে জঙ্গি যোগের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তা না হলে ঘটনাস্থলে দিল্লি পুলিশের পাশাপাশি তড়িঘড়ি এনআইএ, এনএসজি, এটিএস এবং ফরেনসিকের স্পেশাল টিম পৌঁছে যেত না। হরিয়ানার সীমান্তবর্তী ফরিদাবাদ থেকেই সকালে পাওয়া গিয়েছে প্রায় তিন হাজার কেজি বিস্ফোরক তৈরির উপকরণ! গ্রেফতার হয় তিন ডাক্তারও। তারা সামাজিক কাজের আড়ালে পেশাদার ও শিক্ষাজগতকে কাজে লাগিয়ে অর্থ সংগ্রহ করত। নিজেদের মধ্যে আলোচনা চালাত এনক্রিপ্টেড চ্যানেলের মাধ্যমে। এতদিন সাধারণ যুবকদের মগজধোলাই করে ভারতবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত করত জঙ্গি সংগঠনগুলি। মনে করা হচ্ছে, অপারেশন সিন্দুরের পর সেই কৌশলে বদল এসেছে। দেখা যাচ্ছে, সমাজের তথাকথিত উঁচুতলাতেও তৈরি হয়েছে ‘স্লিপার সেল’। গত শুক্রবারও তিন আইএস জঙ্গিকে পাকড়াও করেছিল গুজরাত এটিএস। তাদের মধ্যেও একজন ডাক্তার। এই ‘হোয়াইট কলার টেরর’-এর জাল কতটা ছড়িয়েছে, খোঁজ শুরু হয়েছে তারই। তাই সন্ধ্যার ঘটনা প্রশ্ন তুলছে, এ কি নিছক অগ্নিকাণ্ড? নাকি সকাল ও সন্ধ্যা একই সুতোয় গাঁথা?
  • Link to this news (বর্তমান)