নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: ২০১৬ সালে ‘নোটবন্দি’। আর তার ঠিক ন’বছর পর ‘ভোটবন্দি’! স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশনের (এসআইআর) নামে সাধারণ মানুষের ভোটকে বন্দি করাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একমাত্র লক্ষ্য বলে মনে করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার উত্তরবঙ্গের প্রশাসনিক সদর ‘উত্তরকন্যায়’ সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী সাফ বলেন, ‘নোটবন্দির পর এবার মোদির ভোটবন্দি! নোটবন্দির মতোই এটা সাধারণ মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর সবটাই বিজেপির স্বার্থে। মাত্র দু’মাসের মধ্যে এসআইআর করা অসম্ভব। দু’বছর সময় লাগে। এসআইআরের নামে ওরা (বিজেপি) ঘোঁট পাকাচ্ছে। ফেব্রুয়ারিতেই ভোট ঘোষণা করবে।’ দৃশ্যত ক্ষিপ্ত মমতা বলেন, ‘ওদের পতন হবেই। মানুষকে হয়রান করছে! কেন এসআইআর নিয়ে এতো তাড়াহুড়ো?’ মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘অসমে এসআইআর নয় কেন? হারের ভয়ে সেখানকার জন্য আলাদা আইন! আর ডবল ইঞ্জিন যে রাজ্যগুলিতে এসআইআর হচ্ছে, সেগুলিতে ভোট নেই।’
এসআইআর নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গেই তৃণমূল সুপ্রিমো কাঠগড়ায় তুলেছেন জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে। তাঁর কথায়, ‘মানুষের জন্য কাজ করা উচিত নির্বাচন কমিশনের। মানুষ তাদের বস! কিন্তু কমিশন বিজেপির কথা মতো চলছে। গায়ের জোরে এসআইআর করছে।’ এসআইআরের কাজে রাজ্য সরকারের আধিকারিক-কর্মীদের ব্যস্ত রাখায় দৈনন্দিন প্রশাসনিক কাজ ও স্কুলের পঠনপাঠনে সমস্যা হবে বলে মনে করছেন মমতা। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের কথায়, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সরকারি কর্মী-আধিকারিকদের ব্যস্ত রাখা হয়েছে। যাতে তাঁরা তিনমাসের জন্য কাজ করতে না পারে। এটা তো সুপার ইমার্জেন্সি!’ গত ৪ নভেম্বর থেকে এসআইআরের ইউনিমারেশন ফর্ম বিলি শুরু করেছেন বিএলওরা। আনুষ্ঠানিকভাবে ফর্ম বিলির শেষদিন আজ, মঙ্গলবার। কিন্তু এখনও ভোটার তালিকায় থাকা একটা বড় সংখ্যক মানুষের কাছে ফর্ম পৌঁছোয়নি। ইতিমধ্যেই ভোটকর্মী এবং বিএলও ঐক্যমঞ্চ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে ফর্ম বিলির সময়সীমা বাড়ানোর আর্জি জানিয়েছে। সেই প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনেও। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন চাহিদা মতো ইউনিমারেশন ফর্ম। আমাদের কাছে এমন পরিবার নিয়েও খবর আছে... যেখানে সদস্য সংখ্যা আট, অথচ তাঁদের মধ্যে ছ’জনকে ফর্মই দেওয়া হয়নি।’ এসআইআর প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকে এখনও পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ভিটেমাটি উচ্ছেদ হওয়ার আশঙ্কায় আত্মঘাতী ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘১৭ জন ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছেন। তাতে অবশ্য কমিশনের কিছু যায় আসে না। একটা শোকবার্তাও আসেনি কমিশনের।’ তাঁর ঘোষণা—‘এসআইআর বন্ধ করা উচিত। আমি এখনও এই অবস্থানেই রয়েছি।’
এসআইআর নিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সমালোচনায় বিদ্ধ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকেও। মমতা বলেছেন, ‘যে বিহার আপনারা শাসন করেন, সেখানেও অনুপ্রবেশের কথা বলছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আপনার পদত্যাগ করা উচিত। অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে পারেননি। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, সীমান্ত, সিআরপি এবং বিএসএফ, এসবই তো আপনার দায়িত্বে!’ এই পর্বেই মমতার দৃপ্ত ঘোষণা—‘প্রয়োজনে আমার গলা কাটতে পারো, কিন্তু একজন প্রকৃত ভোটারেরও নাম যেন কাটা না যায়!’