নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ভোটার তালিকার স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন শুরু হয়ে গিয়েছে। গত একসপ্তাহ ধরে চলছে ইনিউমারেশন পর্ব। সোমবার রাত পর্যন্ত প্রায় ৬ কোটি ফর্ম বাড়ি বাড়ি বিলি করা হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর। ফর্মের একেবারে উপরেই ছাপা রয়েছে ভোটারের ছবি। পাশে একটি বক্সে সাম্প্রতিককালের এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি সাঁটার কথা বলা আছে। তাই স্টুডিওতে যাওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি পড়েছে আম জনতার মধ্যে। জল্পনা চলছে, ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড হতে হবে সাদা রঙের। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। এমনকি ইনিউমারেশন ফর্মে পাসপোর্ট ছবি দিতেই হবে—এমন কোনও বাধ্যবাধকতা পর্যন্ত নেই। সোমবার একথা পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হল পশ্চিমবঙ্গ মুখ্য নির্বাচনি আধিকারিকের (সিইও) অফিসের তরফে।
সিইও অফিসের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘এসআইআর ইনিউমারেশন ফর্ম পূরণ করার গাইডলাইনে কোথাও লেখা নেই যে ছবি দেওয়া বাধ্যতামূলক। সেই কারণে আমরাও জানিয়ে দিতে চাই যে এই বিষয়টি ঐচ্ছিক। অর্থাৎ, ছবি দিতেই হবে এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। তবে যাঁর ইচ্ছা হবে তিনি দিতেই পারেন। সেক্ষেত্রে আমরা কিছু বলব না।’ আর ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড হালকা রঙের হলে ভালো হয় বলেও জানিয়েছেন তিনি। নির্বাচনী আধিকারিক মহলের ব্যাখ্যা, এই তালিকাকে ভিত্তি করে এপিক বা ভোটার কার্ড তৈরি হবে না। ফলে ইনিউমারেশন ফর্মে দেওয়া ছবি ব্যবহার করে এপিক কার্ড তৈরি হবে এই ধারণাও ভুল।
বাড়িতে ইনিউমারেশন ফর্ম আসতেই ২০০২ সালের এসআইআর তালিকায় নিজের নাম খোঁজা শুরু করেছে বঙ্গবাসী। আর তা করতে গিয়েই চক্ষু চড়কগাছ হচ্ছে শয়ে শয়ে মানুষের। কারণ, ২০০২-এর তালিকায় রয়েছে বহু ভুল-ভ্রান্তি। কোথাও নামের বানান ভুল তো কোথাও বদলে গিয়েছে পদবি! এমনকি বহু ক্ষেত্রে স্বামীর জায়গায় স্ত্রীর কিংবা স্ত্রীয়ের জায়গায় স্বামীর নাম রয়েছে। এই নিয়ে কমিশনের কাছে উপচে পড়ছে অভিযোগের পাহাড়। বাড়ছে আতঙ্কও। কারণ, আধার কার্ডের সঙ্গে ভোটার কার্ডে নামের বানানো মিল নেই বহু মানুষের। তাঁদের মধ্যে অনেকে কর্মসূত্রে ভিনরাজ্য কিংবা ভিনদেশের বাসিন্দা। দুই কার্ডের মিল না থাকায় অনলাইনে ইনিউমারেশন ফর্ম পূরণ করতে পারছেন না তাঁরা। শনিবার পরিষেবা শুরুর পর বিগত তিন দিনে অনলাইনে মাত্র এক লক্ষ ফর্ম জমা পড়েছে। প্রশাসনিক মহলের মতে, বর্তমান ডিজিটাল ইন্ডিয়ার যুগে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হওয়া উচিত ছিল। কমিশনের তরফে অবশ্য এই নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে। তাঁদের যুক্তি, ইনিউমারেশন ফর্মের উপরের অংশ বর্তমান ২০২৫-এর ভোটার তালিকা অনুযায়ী পূরণ করতে হবে। আর নীচের অংশে ২০০২ সালের তালিকায় যা নাম-পদবি বা অন্যান্য তথ্য রয়েছে, হুবহু তাই লিখতে হবে। ন্যায্য ভোটার হলে খসড়া তালিকা প্রকাশের পর হিয়ারিংয়ে ডাকলে উপযুক্ত নথি দেখালেই নাম বাদ পড়ার আশঙ্কা থাকবে না। নয়তো পরে ৬ নম্বর ফর্ম পূরণ করে ভোটার তালিকায় নাম তোলার আবেদন করতে হবে।