সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট হওয়া ফোটো, ভিডিয়ো এআই দিয়ে তৈরি? যাচাই করতে ৫ কোটির ‘ওয়ার-রুম’ লালবাজারের
বর্তমান | ১১ নভেম্বর ২০২৫
স্বার্ণিক দাস, কলকাতা: ‘তিস্তার উপর করোনেশন ব্রিজ ভেঙে পড়েছে’— সম্প্রতি কেউ একজন চাঞ্চল্যকর ভিডিয়োটি পোস্ট করেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায় সেই ভিডিও। প্রাথমিকভাবে উত্তেজনা, আতঙ্ক ছড়ায়। পরে সামনে আসে আসল ঘটনা। জানা যায়, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই ব্যবহার করে কেউ বা কারা ভিডিয়োটি বানিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘রিচ’ বাড়াতে এআই নির্মিত ভুয়ো ফটো, ভিডিয়ো পোস্ট এখন ‘ট্রেন্ড’ বলা চলে। এই কৌশলই অনেক ক্ষেত্রে অসাধু কারবারে ব্যবহৃত হচ্ছে। চলছে ব্ল্যাকমেলিং। বিশেষত, মহিলাদের মুখাবয়ব ব্যবহার করে এআই’র সাহায্যে ভুয়ো ছবি, ভিডিয়ো বানিয়ে মোটা টাকা হাতানোর অভিযোগ সামনে আসছে। এই ধরনের প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ দমনে এবার কোমর বেঁধে নামল লালবাজার। সাড়ে ৫ কোটি টাকা খরচে ঢেলে সাজা হচ্ছে কলকাতা পুলিশের সাইবার বিভাগ। তৈরি হচ্ছে ডিজিটাল ইন্টেলিজেন্স ওয়ার্ক স্টেশন। যেখানে কোনও ভিডিও এআই দিয়ে তৈরি কি না, এক নিমেষে জানা যাবে। কী উপায়ে সেটি তৈরি হল এবং নেপথ্যে কে, জানা যাবে সেই তথ্যও। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট হওয়া ভিডিওর উৎসও জানা যাবে সহজে।
সাইবার বিভাগ সূত্রে খবর, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ১৫টির বেশি ক্যাটিগরি বা বিভাগ রয়েছে। সব ক্যাটিগরির এআই কাজে লাগিয়েই ভুয়ো ছবি বা ভিডিও তৈরির মতো অপকর্মগুলি করা যায়। লালবাজারের নয়া প্রযুক্তি যে কোনও ভুয়ো ছবি বা ভিডিয়ো শনাক্ত করতে সক্ষম। শুধু তাই নয়, এখন থেকে কোনও অপরাধের তদন্তে ‘লিড’ পেতে হস্তাক্ষর বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজন হবে না। যে কোনও ধরনের সুইসাইড নোট কিংবা হাতের লেখা শনাক্ত করা যাবে নিমেষে। কোনও নমুনা দিলে সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তি জানিয়ে দেবে, ‘পজিটিভ’ নাকি ‘নেগেটিভ’। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, ইদানিং কোনও অপরাধ সংগঠিত হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্লু হয়ে ওঠে মোবাইল ফোন। ফোনের সিডিআর বা কল ডিটেইলস রেকর্ড, হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট, ভিডিয়ো কলিং, মেসেজ, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ইত্যাদি তদন্তে দিশা দেখায়। ফোন থেকে এসব তথ্য এখন অনেক সহজে সংগ্রহ করতে পারবে সাইবার বিভাগ। তিনটি মোবাইল ফোন একসঙ্গে ট্র্যাক করা যাবে। মোবাইলের উন্নত ও অত্যাধুনিক প্রসেসর থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা সহজ হবে এখন। কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘ইদানিং সাইবার অপরাধের প্রায় ৩০-৩৫ শতাংশ অভিযোগই এআই নির্ভর ক্রাইম সংক্রান্ত। তাই সাইবার ল্যাবকে আরও উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন করে তোলা হচ্ছে। ৫ কোটি ৬৮ হাজার টাকা ব্যয়ে আসছে নতুন কম্পিউটার, ক্যামেরা, ফরেন্সিক ল্যাপটপ, ড্রোন ইত্যাদি।’ অন্য এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘আর্থিক প্রতারণার ক্ষেত্রে দ্রুত অপরাধের উৎসে পৌঁছনো প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অনেকটাই সুবিধা হবে।’