• জালিয়াতির টাকা হাওলার মাধ্যমে বিদেশে পাচার, বিমানবন্দরে ধৃত অন্যতম কিংপিন
    বর্তমান | ১১ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাইবার জালিয়াতি থেকে আসা কোটি কোটি টাকা হাওলার মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হচ্ছিল। পুলিশ জানতে পেরেছিল, পাচারের এই গোটা কারবার দক্ষ হাতে নিয়ন্ত্রণ করছে জনৈক এম ডি সলমন। সে এই চক্রের কিংপিন। তক্কে তক্কে ছিলেন তদন্তকারীরা। কয়েকদিন আগে তাঁদের কাছে খবর আসে, রবিবার সলমন কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে বিদেশে পালানোর চেষ্টা করবে। সেই মতো বিমানবন্দরে পৌঁছে যায় শেক্সপিয়র সরণি থানার পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত সলমনকে। 

    পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৪ সালের নভেম্বরে শেক্সপিয়র সরণি থানায় এক ব্যবসায়ী একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেখানে তিনি জানান, তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ৯৮ লক্ষ টাকা উধাও হয়ে গিয়েছে। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, প্রথমে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর ‘ক্লোন’ করে নেয় প্রতারকরা। তারপর সেই নম্বর থেকে তাঁর কোম্পানির ফিনান্স ডিরেক্টরকে মেসেজ করে তারা। সেই মেসেজে একটি নতুন নম্বর দিয়ে বলা হয়, এরপর থেকে সেই নম্বরে যেন তাঁকে মেসেজ করা হয়। তারপর নতুন নম্বর থেকে একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর পাঠিয়ে সেখানে ৯৮ লক্ষ টাকা ট্রান্সফার করতে বলা হয়। ওই মেসেজ মালিকই পাঠিয়েছেন ধরে নিয়ে সংস্থার ফিনান্স ডিরেক্টর নির্দেশ মতো ৯৮ লক্ষ টাকাই পাঠিয়ে দেন। পরে ব্যবসায়ী নিজে যখন তাঁকে ফোন করেন, তখন গোটা বিষয়টি সামনে আসে। তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথমে একজনকে গ্রেফতার করে। তার অ্যাকাউন্টের সূত্র ধরে জানা যায়, ওই টাকা ঢুকেছে জনৈক এম ডি সলমনের অ্যাকাউন্টে। 

    সেই অ্যাকাউন্টের লেনদেনের নথি বের করে তদন্তকারীরা দেখেন, বিভিন্ন অ্যকাউন্ট থেকে কোটি কোটি টাকা সেখানে ঢুকছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা তুলেও নেওয়া হচ্ছে। পরবর্তী তদন্তে স্পষ্ট হয়, এসবই সাইবার জালিয়াতির টাকা। এম ডি সলমন আদতে একজন হাওলা অপারেটর। তার মাধ্যমে টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। ফরেন মানি এক্সচেঞ্জ অফিসগুলি ব্যবহার করা হচ্ছে টাকা পাচারের জন্য। সেখানে নগদ যাওয়ার পর তা চলে যাচ্ছে দুবাই, কাতার, সিঙ্গাপুর. থাইল্যান্ড সহ বিভিন্ন দেশে। এসব দেশে নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে সলমনের। সেখানে যারা হাওলা কারবার চালাচ্ছে, তাদের সঙ্গেও মেসেজে নিয়মিত কথা হচ্ছে তার। এসবের মধ্যেই পুলিশের কাছে খবর আসে, সলমন বিদেশে পালানোর চেষ্টা করছে। সেই মতো কলকাতা বিমানবন্দর থেকে রবিবার তাকে গ্রেফতার করা হয়। 

    ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা জানতে পারছেন দেশজুড়ে চলা সাইবার জালিয়াতি চক্রের মূল মাথাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। প্রতারকদের অ্যাকাউন্ট ভাড়া দিচ্ছে সে। সেখানে টাকা ঢোকার পর তা তার নিজস্ব অ্যাকাউন্টে আসছে। সেই টাকা তুলে হাওলার মাধ্যমে পাচার করা হচ্ছে বিদেশে। একাংশ ক্রিপ্টো অ্যাকাউন্ট খুলে বিদেশে লগ্নি করা রয়েছে। বাকিটা বিদেশে রিয়েল এস্টেট সহ বিভিন্ন ব্যবসায় খাটানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে ধৃতের কাছ থেকে একাধিক ক্রিপ্টো অ্যাকাউন্টের তথ্য মিলেছে। সেগুলি যাচাই করে দেখছে পুলিশ।
  • Link to this news (বর্তমান)