পুনর্বাসনের নামে ৪ লক্ষ টাকায় স্টল বিক্রি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের
বর্তমান | ১১ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাকপুর: একে চার লক্ষ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে দোকান, তার উপর আবার মাসে মাসে গুনতে হবে ৫০০ টাকা করে। বারাকপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের এই তুঘলকি সিদ্ধান্তে যার পর নাই অসন্তুষ্ট হকাররা। বোর্ডের তৈরি করে দেওয়া টাউন ভেন্ডিং কমিটি ১০৮ জন স্ট্রিট ভেন্ডারের জন্য পুনর্বাসনের যে ব্যবস্থা করেছে, তাতে এই দাম বেঁধে দিয়েছে তারা। ইতিমধ্যেই কয়েকজন হকারকে স্টল বণ্টন করা হয়েছে। তবে সব দোকান এখনও চালু হয়নি।
বারাকপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় স্টেট ব্যাংক মোড়ের কাছে রাস্তার উপর বহু বছর ধরে ব্যবসা করতেন হকাররা। তাঁদের স্থায়ী পুনর্বাসনের পরিকল্পনা করে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড। সেইমতো হকারদের সঙ্গে আলোচনাও করে তারা।
স্থায়ী ঘর তৈরি করে দেওয়ার কথা থাকলেও শেষ অবধি রাস্তার ধারে টিন ও ফাইবার দিয়ে স্টল তৈরি করা হয়েছে। এক একটি স্টলের মাপ ১০ ফুট বাই ১২ ফুট। তবে পাকা ঘর না হওয়ায় দোকানিদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এই দোকানগুলি হকারদের চার লক্ষ টাকা করে বিক্রি করা হয়েছে। একলপ্তে ওই টাকা দিতে না পারলে ইনস্টলমেন্টের ব্যবস্থা রয়েছে, তবে তার জন্য গুনতে হবে বাড়তি টাকা। এই মার্কেটের নাম দেওয়া হয়েছে শহিদ বিন্দি তেওয়ারি ভেন্ডিং জোন। মঙ্গল পান্ডের আগে বীর সেনা বিন্দি তেওয়ারিকে ফাঁসি দিয়েছিল ব্রিটিশরা। তিনি ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁকে স্মরণ করেই মার্কেটের এই নামকরণ। তাঁর নামে একটি মন্দিরও রয়েছে ক্যান্টনমেন্ট এলাকায়।
দোকান পেলেও খুশি নন ব্যবসায়ীরা। রাজা গুপ্ত নামের এক প্রবীণ দোকানি বললেন, আমি ৪৫ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছি। আমাকে চার লক্ষ টাকা দিয়ে স্টল কিনতে হয়েছে। ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা নগদ দিয়েছি। বাকিটা ঋণ করতে হয়েছে। নাহলে টাকার পরিমাণ আরও বেড়ে যেত। কিন্তু দোকান কেনার পর কেন আবার মাসে মাসে ৫০০ টাকা দিতে হবে? প্রশ্ন তুলেছেন ওই দোকানি। তাঁর কথায়, স্থায়ী কাঠামো হয়নি, ছাদও ঢালাই করা হয়নি। টিন আর ফাইবারের ঘর কতদিন টিকবে, জানি না।
ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিনের হকার সমস্যার সমাধান হল। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী টাউন ভেন্ডিং কমিটি গঠিত হয়েছে। তারা স্ট্রিট ভেন্ডারদের সঙ্গে কথা বলে দোকান বণ্টন করেছে। একেকটি দোকান তৈরি করতে যা খরচ হয়েছে, সেটুকুই নেওয়া হয়েছে। হকারদের মতে, দোকানের জন্য যে দাম নেওয়া হল, তা বাজারদরের থেকে অনেক বেশি। এই মার্কেট কতটা সচল হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে হকারদের একাংশ। নিজস্ব চিত্র