• বাংলায় নির্ভয়ে শীতবস্ত্র বিক্রি করছেন ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যের শতাধিক ব্যবসায়ী
    বর্তমান | ১১ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: বাংলা বললেই ভিন রাজ্যে জুটেছে ‘বাংলাদেশি’ তকমা। বিশেষ করে বিজেপিশাসিত কিছু রাজ্যে। কিন্তু সেই বিজেপি শাসিত রাজ্যের বাসিন্দারাই বাংলায় এসে হাসিমুখে ব্যবসা করছেন। আর স্বস্তির সুরে বলছেন, বাংলা নিরাপদ।

    শীতের শুরুতেই কলকাতা লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়েছে রাস্তার ধারে শীতবস্ত্র বিক্রির ধুম। কোথাও ত্রিপল টাঙিয়ে, কোথাও ফাঁকা জায়গায় বাঁশ বেঁধে হয়েছে নানা মাপের অস্থায়ী দোকান। তাতে সাজানো কম্বল, শাল থেকে ব্ল্যাঙ্কেট। কেউ আবার ভ্যানগাড়িতে মাল রেখে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছেন। এই দোকানগুলির মালিকরা এসেছেন ভিনরাজ্য থেকে। এঁদের মধ্যে অনেকেই উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। কাশ্মীর থেকেও এসেছেন অনেকে। প্রায় তিনশো জন ব্যবসায়ী একসঙ্গে এসেছেন এবার। তাঁদের কেউ কেউ বারাসতেও দোকান বসিয়েছেন। সাবলীল বাংলায় কথা তাঁরা বলতে পারেন না। আধা হিন্দি ও বাংলা মিশিয়ে কথা বলছেন। দরদাম করে চলছে বিক্রিবাটা। তবে, দামেও বিস্তর ফারাক। তাঁদের কাছে রয়েছে ১০-১৫ টাকা থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত দামের জিনিসও। সকাল থেকে খোলা হয় দোকান। রাত ১০টায় বন্ধ হয়। টিম করে বারাসতের টাকি রোড, যশোর রোড, জাতীয় সড়ক, মধ্যমগ্রাম, দত্তপুকুর সহ বিভিন্ন এলাকায় পসরা সাজিয়ে বসেছেন এই ‘পরিযায়ী’ বিক্রেতারা। দোকানেই তাঁরা রাত কাটান। যাঁরা বাইরে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছেন, তাঁরাও রাতে অস্থায়ী দোকানেই থাকেন।

    উত্তরপ্রদেশের মাহমুদাবাদের বাসিন্দা সুভান আলি বারাসতের কদম্বগাছিতে দোকান খুলেছেন। তিনি বলেন, এখানকার মানুষ খুব ভালো। দাম ঠিক রাখলে সবাই হাসিমুখে কিনছেন। কোথাও ভয় বা সমস্যা নেই। রোজ চার হাজার টাকার মতো ব্যবসা হচ্ছে। এলাকার বাসিন্দারাও যথেষ্ট সাহায্য করছেন। যোগীরাজ্য থেকে এসেছেন? বলতেই একটা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখা গেল চোখে-মুখে। কাশ্মীর থেকে আসা ইউনুস খান বলেন, সারা বছর উলের কাজ করি। শীত নামলেই বাংলায় চলে আসি। এখানে মানুষ ধর্ম, রাজনীতি বা জাত নিয়ে কিছু বলে না। উত্তরপ্রদেশের মুকেশ যাদব দোকান করেছেন বারাসত শহর লাগোয়া যশোর রোডে। বললেন, দোকান বসাতে সমস্যা হয়নি। মানুষ জায়গা করে দিয়েছেন। রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমতে পারি। এরপর তাঁর সংযোজন, আমি হিন্দিতে কথা বলছি বলে কেউ কিছুই বলেন না। এদেশে সবার সমান অধিকার থাকা উচিত।

    বারাসতের এক টোটো চালক নারায়ণ কর্মকার বলেন, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশের এক ব্যবসায়ীকে নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরি। ভাড়া ঠিক করা আছে ৬০০ টাকা। খাবারের খরচ নিজস্ব। কাজের চাপও কম। আর ভিন রাজ্যের এই ব্যবসায়ীদের থেকে দরদাম করে জিনিস কিনতে পেরে খুশি এখানকার বাসিন্দারও।
  • Link to this news (বর্তমান)