• মৃতের নামে ফর্ম পূরণ হলে সাজা পরিজনের! কী জানাচ্ছে ইসি?
    এই সময় | ১১ নভেম্বর ২০২৫
  • এই সময়: কোনও মৃত ব্যক্তির নামে এনিউমারেশন ফর্ম পূরণ করা হলে সংশ্লিষ্ট পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সোমবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) অফিস সূত্রে জানানো হয়েছে, এরকম অনিয়ম ধরা পড়লে রিপ্রেজে়ন্টেশন অফ পিপলস অ্যাক্টের (আরপি আইন) ৩২ ধারায় সংশ্লিষ্ট পরিবারের পক্ষে স্বাক্ষরকারী ব্যক্তির এক বছর পর্যন্ত জেলও হতে পারে। ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধন (সার) চলাকালীন‍ কমিশন এই আইনকে প্রয়োজনে কঠোর ভাবে প্রয়োগ করতে চায়। ‘ভোটকর্মী ও বিএলও ঐক্য মঞ্চ’–এর তরফে ইতিমধ্যে অভিযোগ করা হয়েছে, দক্ষিণ কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪পরগনা, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুরে একাধিক বুথে মৃতদের এনিউমারেশন ফর্মও তাঁর পরিবারের হাতে দেওয়ার জন্য স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলির বুথ লেভেল এজেন্টরা (বিএলএ–২) বুথ লেভেল অফিসারদের (বিএলও) উপরে চাপ দিচ্ছেন। ভোটার তালিকায় মৃত ভোটার ইস্যুতে এ দিনই হুগলির তারকেশ্বরে এক মহিলা বিজেপি কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।

    এ দিকে, পূর্ব বর্ধমানে মেমারির চকবলরামপুরের ২৭৮ নম্বর বুথের বিএলও নমিতা হাঁসদার মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর পরিবারকে আর্থিক সাহায্য ও পরিবারের একজনের চাকরির দাবিও জানিয়েছে ঐক্য মঞ্চ। মৃত বিএলও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ছিলেন। রাজ্যের যুগ্ম মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, ‘বিএলও-র মৃত্যু নিয়ে নিয়ে জেলা প্রশাসন থেকে কোনও রিপোর্ট এখনও আসেনি। এলে তখন আলোচনা করে নির্বাচন কমিশনকে জানানো হবে। কমিশনই সিদ্ধান্ত নেবে।’ কর্মরত অবস্থায় মৃত ভোটকর্মীদের আর্থিক সাহায্য দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু ‘সার’ বা ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ করতে গিয়ে মৃত বিএলও–দের আর্থিক সাহায্যের বিষয়ে নির্দিষ্ট কোন‍ও নিয়ম আছে কি না, খতিয়ে দেখছে কমিশন।

    রাজ্যে ‘সার’–এর ফর্ম পূরণ নিয়ে উত্তেজনা অবশ্য অব্যাহত। কলকাতার প্রগতি ময়দান থানা এলাকায় ফর্ম পূরণে স্থানীয়দের সাহায্য করতে গিয়ে বিজেপি কর্মী মেঘনাদ দাস প্রহৃত হয়েছেন তৃণমূল কর্মীদের হাতে— এমন অভিযোগ উঠেছে। যদিও তৃণমূল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডলের বক্তব্য, ‘ফর্ম বিলি থেকে মৃত ও ভূতুড়ে ভোটারের নাম তোলার ক্ষেত্রে প্রাথমিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি নির্বাচন কমিশন বিএলও–দের উপরে চাপিয়েছে। এখন থেকে এনিউমারেশন ফর্ম ডিজিটালি সংরক্ষিত হবে। তাই বিএলও-রা আতঙ্কে রয়েছেন।’

    যদিও সিইও অফিসের কর্তাদের বক্তব্য, এতে বিএলও–দের অযথা আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। মৃত ব্যক্তির নাম ভোটার তালিকায় থাকলে তার এনিউমারেশন ফর্ম বিএলওরা পাবেন। সেই ব্যক্তি মৃত জানার পরেও তিনি হয়তো রাজনৈতিক চাপে পড়ে তাঁর পরিবারের হাতে সেই ফর্ম তুলে দিতে পারেন। কিন্তু তারপরে ওই পরিবার যদি মৃত ব্যক্তির নামে ফর্ম পূরণ করে বিএলও–কে জমা দেন, তা হলে মোবাইল অ্যাপে ডেটা আপলোডের সময়ে ওই এনিউমারেশন ফর্মটি ‘নট রেকমেন্ডড’ বলে জমা দিতে হবে বিএলও–দের। তাঁদের চোখ এড়িয়ে মৃত ব্যক্তির নাম চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ঠাঁই পেলে শুধু বিএলও–ইআরও নন, পরিবারের পক্ষে যে ব্যক্তি ফর্মটি পূরণ করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

    ঐক্য মঞ্চের দাবি, প্রথম দু’দিন কম সংখ্যক এনিউমারেশন ফর্ম পাওয়ায় বিলির কাজ অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবারের মধ্যে সব ফর্ম বিলি করা সম্ভব হবে না। তাই এর সময়সীমা বাড়ানোর আর্জি জানানো হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৫ কোটি ৮৫ লক্ষ এনিউমারেশন ফর্ম বিলি হয়েছে বলে জানিয়েছে সিইও দপ্তর।

  • Link to this news (এই সময়)