৩১৭ কোটি টাকার জালিয়াতি, শুধু ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন ১৭০ কোটি, নাম জড়াল পবন রুইয়ার
প্রতিদিন | ১১ নভেম্বর ২০২৫
অর্ণব আইচ: ৩১৭ কোটি টাকার সাইবার জালিয়াতির ঘটনায় শুধু ক্রিপ্টোকারেন্সিতে পাঠানো হয় ১৭০ কোটি টাকা। রাজ্য পুলিশের সাইবার উইংয়ের দাবি, এই বিপুল টাকার সাইবার জালিয়াতির ঘটনায় নাম জড়িয়েছে শিল্পপতি পবন রুইয়ার। এরপরেই দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জে ওই শিল্পপতির বাড়ি, পার্ক সার্কাসের সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউয়ে তাঁর অফিস ও পার্ক স্ট্রিটে তাঁর অফিসেও পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। তিন জায়গা থেকেই উদ্ধার হয়েছে ৬টি মোবাইল, একটি ম্যাকবুক, ১০টি ল্যাপটপ, হার্ড ডিস্ক ও সার্ভার, সাতটি ওয়াইফাই রাউটার, প্রচুর সংখ্যক প্যান কার্ড, চেকবই, ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট, ১২টি পেন ড্রাইভ, শেল কোম্পানি বা ভুয়া সংস্থা সম্পর্কিত প্রচুর নথি। উল্লেখযোগ্যভাবে বেশ কিছু সিমকার্ড উদ্ধার হয়েছে, যেগুলির মধ্যে একটি বড় অংশই দুবাই-সহ বিভিন্ন দেশের। ফলে সাইবার জালিয়াতির বিপুল টাকা ওই শিল্পপতির মাধ্যমে যে বিদেশে পাচার হয়েছে, এই ব্যাপারে পুলিশ অনেকটাই নিশ্চিত। কারণ, ওই সিমকার্ডগুলির সাহায্যেই বিদেশে যোগাযোগের প্রমাণ খুঁজছেন সাইবার উইংয়ের গোয়েন্দারা।
পুলিশ জানিয়েছে, নিউ টাউনের বাসিন্দা এক প্রবীণ তথা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক আধিকারিক গত বছরের এপ্রিলে বিধাননগর কমিশনারেটের সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ২০২৩ সালে তাঁকে একটি হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে যোগ করানো হয়। তাঁকে বলা হয়, শেয়ারে লগ্নি করলে বিপুল টাকা ফেরত পাওয়া যাবে। নিজেদের বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে তারা ভুয়া মোবাইল অ্যাপ ও জাল ওয়েবসাইট তৈরি করে তাঁকে পাঠায়। তিনি জালিয়াতিদের ফাঁদে পা দিয়ে টাকা লগ্নি করতে শুরু করেন। প্রথমদিকে তাঁকে কিছু লভ্যাংশও পাঠিয়ে দেয় সাইবার জালিয়াতরা। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে দফায় দফায় ৯৩ লাখ টাকা লগ্নি করেন তিনি। ক্রমে বিধাননগর থানার কাছ থেকে ওই মামলার তদন্তভার নেয় রাজ্য পুলিশের সাইবার উইং। গত ১ নভেম্বর দুবাই থেকে লন্ডন যাওয়ার ছক কষে দিল্লি বিমানবন্দর থেকে এক ব্যক্তিকে গোয়েন্দারা গ্রেপ্তার করেন।
পুলিশের তদন্তে উঠে আসে যে, এই রাজ্য-সহ সারা দেশজুড়ে ১৩৭৯টি সাইবার জালিয়াতির অভিযোগের ভিত্তিতে একই চক্র ৩১৭ কোটি টাকা হাতিয়েছে। ওই বিপুল টাকা ১৪৮টি শেল কোম্পানি বা ভুয়া সংস্থার মাধ্যমে পাচার হয়েছে। ওই ভুযা সংস্থাগুলির একটি বড় অংশই একই ঠিকানায়। ওই সংস্থাগুলির মাধ্যমে বিপুল টাকা ভাড়ার অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে। ৩১৭ কোটি টাকার মধ্যে প্রায় ১৭০ কোটি টাকাই বিদেশে পাচার করা হয়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে। এর পর গত ৫ নভেম্বর এই ব্যাপারে বারাকপুর কমিশনারেটের সাইবার ক্রাইম থানায় আরও একটি অভিযোগ দায়ের হয়। গোয়েন্দাদের দাবি, সেই সূত্রেই ওই শিল্পপতির সঙ্গে সাইবার জালিয়াতির যোগসূত্রের সন্ধান পান গোয়েন্দারা। ওই শিল্পপতির সংস্থার মাধ্যমেই সাইবার জালিয়াতির টাকা পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ। তারই জেরে তাঁর বাড়ি ও অফিসে তল্লাশি চালানো হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।