ডিজিটাল গ্রেফতারির প্রতারণার টাকাও কি ব্যবসায়ীর অ্যাকাউন্টে, উত্তর খুঁজছে পুলিশ
আনন্দবাজার | ১১ নভেম্বর ২০২৫
শুধু ভুয়ো লগ্নি-অ্যাপে নয়, ডিজিটাল গ্রেফতারি-সহ একাধিক সাইবার প্রতারণার টাকা কি ঢুকেছিল কলকাতার এক নামী ব্যবসায়ী এবং তাঁর পরিবারের তৈরি করা বিভিন্ন ভুয়োঅ্যাকাউন্টে? প্রাথমিক তদন্তের পরে এই প্রশ্নই উঁকি দিচ্ছে রাজ্য পুলিশের সাইবার শাখার তদন্তকারীদের মনে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই গত বৃহস্পতিবার তদন্তকারীদের একটি দল ওই ব্যবসায়ীর বাসভবন এবং অফিসে হানা দিয়েছিল। সূত্রের খবর, সেখান থেকে দুবাইয়েরএকটি সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে, যা ওই ব্যবসায়ীর মোবাইলে ছিল বলে অভিযোগ। সেই সঙ্গে তদন্তকারীরা ছ’টি মোবাইল, সাতটি রাউটার, বিভিন্ন নামের চারটি প্যান কার্ড, ১২টি পেন ড্রাইভ-সহ একাধিক নথি এবং বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি বাজেয়াপ্ত করেছেন।
এক তদন্তকারী আধিকারিক জানান, প্রাথমিক ভাবে ওই ব্যবসায়ী ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে ৩১৭ কোটি টাকার সাইবার জালিয়াতির অভিযোগ মিলেছে। ওই টাকা ব্যবসায়ীর পরিবারের মালিকানাধীন ১৪৮টি শেল কোম্পানির অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যা ক্রিপ্টোকারেন্সিতেরূপান্তরিত করা হয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রের খবর। পাশাপাশি, ওই ব্যবসায়ী ও তাঁর পরিজনদের বিরুদ্ধে ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টালে’ (এনসিআরপি) ১৩৭৯টি অভিযোগ নথিভুক্তহয়েছে বলে ওই তদন্তকারী অফিসার জানান।
পুলিশের অনুমান, এই প্রতারণা চক্রটি দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও সক্রিয়। সারা দেশ থেকে এই চক্রের বিরুদ্ধে যে ১৩৭৯ জন অভিযোগ দায়ের করেছেন, তাঁদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা রয়েছেন ১০০ জনেরও বেশি। তদন্তকারীদের আরও ধারণা, এই চক্রের সঙ্গে সাইবার অপরাধ জগতের কয়েক জন দুষ্কৃতীরও যোগ থাকতে পারে। তাদের মধ্যে এক জনকে কলকাতা পুলিশ এর আগে গ্রেফতারও করেছিল।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, বিনিয়োগের নামে প্রায় ৯৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার একটি অভিযোগ গত বছর বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানায় জমা পড়েছিল। তার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে রাজ্য পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখা। তাতেই গোয়েন্দারা বেশ কিছু ভুয়ো অ্যাকাউন্টের সন্ধান পান, যেখানে ওই প্রতারণার টাকাঢুকেছিল। তদন্তকারীরা আরও জানতে পারেন, যে সংস্থার নামে ওই অ্যাকাউন্ট, সেটির পরিচালন সমিতিও রয়েছে ভুয়ো নামে। এর পরেই পুলিশ ওই ব্যবসায়ী এবং তাঁর পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে প্রতারণা-সহ একাধিক ধারায় ব্যারাকপুর সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের করে তদন্তে নামে।
এক পুলিশকর্তা জানান, এখনও পর্যন্ত তদন্তে যে সব নথি এবং তথ্য মিলেছে, তাতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের গ্রেফতার করার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। ওই সব নথি যাচাই করা হচ্ছে। পাশাপাশি, মোট কত টাকা ব্যবসায়ী ও তাঁর পরিজনদের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে, তা-ও দেখা হচ্ছে।