• প্রশাসনিক বৈঠকে গরহাজির ‘দাবাং বিডিও’, জল্পনা
    আনন্দবাজার | ১১ নভেম্বর ২০২৫
  • এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে খুনের ঘটনায় তাঁর নাম জড়ানোর পরে গোটা বিষয়টির নেপথ্যে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি করেছিলেন জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জের বিডিও প্রশান্ত বর্মণ। ঘটনার কিছু দিন পর থেকে তাঁকে সরকারি কাজেও দেখা যাচ্ছিল। সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রশান্ত জানিয়েছিলেন, যতই ষড়যন্ত্র করা হোক, তিনি ‘দাবাং বিডিও’-ই থাকবেন। সোমবার অবশ্য জলপাইগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভার্চুয়াল প্রশাসনিক বৈঠকে সেই ‘দাবাং বিডিও’-কে দেখা গেল না। স্বর্ণ ব্যবসায়ী স্বপন কামিল্যাকে খুনের ঘটনার পরে ১০ দিন কেটে গেলেও প্রশান্তের নাগাল পেল নাবিধাননগর পুলিশও। তবে, তদন্ত শুরু করে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ যাচাই এবং ধৃত দুই ব্যক্তিকে জেরা করে যে সব তথ্য এখনও পর্যন্ত উঠে এসেছে, তার ভিত্তিতে পুলিশ সূত্রের দাবি, রহস্য-ভেদে অনেকটাই অগ্রগতি হয়েছে।

    এই ঘটনায় মোট ছ’জন জড়িত ছিলেন বলে প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে বিডিও-র কলকাতার গাড়িচালক রাজু ঢালি এবং বিডিও-র পরিচিত তুফান থাপাকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে সূত্রের দাবি।

    তদন্তকারীদের আরও দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে ধৃতেরা যে সব কথা জানিয়েছেন, তাতে নিউ টাউনের একটি বাড়ির দোতলায় পুরো ঘটনাটি ঘটেছে বলে অনুমান। কী ভাবে ওই স্বর্ণ ব্যবসায়ীর মৃত্যু হল এবংমৃত্যুর পরে তাঁর দেহ ফেলা নিয়ে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু সূত্র হাতে পেয়েছেন তদন্তকারীরা। বাকি অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারলে সে বিষয়ে অনেকটাই নিশ্চিতহবে পুলিশ। পাশাপাশি, গোটা ঘটনার সঙ্গে বিডিও প্রশান্তের যোগসূত্রকতটা, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনায় বাকি যাঁরা জড়িত বলে তদন্তে তথ্য মিলেছে, তাঁদের গতিবিধি সম্পর্কেও খোঁজ চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা।

    যে সোনা চুরির অভিযোগ নিয়ে এত কাণ্ড, সেই সোনার মালিক কে, সোনার কোনও নথি রয়েছে কিনা, সোনা আদৌ চুরি হলে কেন পুলিশকে জানানো হল না— এই সব বিষয়ে এখনও ধোঁয়াশায় তদন্তকারীরা। ধৃত তুফান কবে, কেন, কার নির্দেশে কলকাতায় এলেন, কবেই বা ফিরে গেলেন, তা নিয়ে তাঁর বক্তব্যে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত মিলেছে বলে পুলিশ সূত্রের দাবি।

    উল্লেখ্য, অভিযুক্ত বিডিও-কে এখনও কেন গ্রেফতার করা হয়নি, সেই প্রশ্নে ইতিমধ্যেই সুর চড়িয়েছেন বিরোধীরা। সোমবার জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ হলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভার্চুয়াল প্রশাসনিক বৈঠকে জেলাশাসক-সহ প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকদের দেখা গেলেও প্রশান্তকে দেখা যায়নি। যদিও জলপাইগুড়ি সদর এবং ধূপগুড়ি মহকুমার একাধিক বিডিও সভায় হাজির ছিলেন।

    প্রশান্তকে ফোন করা হলেও পাওয়া যায়নি। বিডিও অবশ্য ঘনিষ্ঠ মহলে দাবি করেছেন, তিনি সরকারি কাজে রয়েছেন। কেন প্রশাসনিক বৈঠকে প্রশান্ত অনুপস্থিত ছিলেন, তা নিয়ে জলপাইগুড়ির জেলাশাসক শমা পরভিন মন্তব্য করেননি।

    একটি সরকারি সূত্রের দাবি, নিয়ম মেনে জেলার সব আধিকারিককেই বৈঠকে থাকার জন্য সাধারণ নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে, রাজগঞ্জের বিডিও উপস্থিত থাকলে বিতর্ক দানা বাঁধার আশঙ্কা ছিল। তাই সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হয়েছে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)