• বাঁচানো গেল না ধনেখালির মহিলাকে
    আনন্দবাজার | ১১ নভেম্বর ২০২৫
  • এসআইআর আবহে রাজ্যে ফের দুই মৃত্যু। ফলে, রাজনৈতিক তরজাও অব্যাহত।

    দু’দিন ধরে চেষ্টা চললেও, হুগলির ধনেখালির সোমসপুরের বিষ খাওয়া আশা সোরেনকে (২৮) বাঁচানো গেল না। সোমবার দুপুরে এসএসকেএম হাসপাতালে তিনি মারা যান। এসআইআর-আতঙ্কেই ছ’বছরের মেয়েকে শনিবার বিষ খাইয়ে আশা নিজেও খান বলে দাবি তাঁর পরিজন এবং তৃণমূলের। বাড়ির লোকেরা জানান, শিশুটি ওই হাসপাতালেই আইসিইউ-তে রয়েছে। সে বিপন্মুক্ত নয়। একই আতঙ্কে এ দিন নদিয়াতেও এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি।

    শ্বশুরবাড়িতে অশান্তির কারণে পাঁচ বছর ধরে মেয়েকে নিয়ে ধনেখালিতে বাপেরবাড়িতে থাকছিলেন আশা। দিন কয়েক আগে, বাপেরবাড়ির অন্যদের এসআইআরের গণনা-পত্র আসে। তাঁর গণনা-পত্র শ্বশুরবাড়িতে দেওয়া হবে বলে আশা জানতে পারেন। পরিজনদের দাবি, এতেই তিনি এসআইআরে নাম থাকবে কি না, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হন। কেননা, তাঁর নথিপত্র রয়েছে শ্বশুরবাড়িতে। আশার বাবা রবীন মুর্মু বলেন, ‘‘বলেছিলাম, শ্বশুরবাড়ি থেকে কাগজপত্র আনা হবে। মাথায় কী ঢুকেছিল জানি না, নিজেকে শেষ করল! নাতনিকেও বিষ খাওয়াল!’’ শনিবারই দু’জনকে এসএসকেএমে ভর্তি করানো হয়েছিল। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্রের দাবি, ‘‘বিজেপি বাংলা জুড়ে যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, এই মৃত্যু তার প্রমাণ।’’

    নদিয়ার তাহেরপুর থানার কালীনারায়ণপুর পাহাড়পুর পঞ্চায়েতের কৃষ্ণপুর চক মণ্ডলপাড়ার বাসিন্দা বৃদ্ধ শ্যামল সাহাকে (৭২) এ দিন সকালে ঘরের বিছানায় নিথর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরিবারের দাবি, বছর তিরিশ আগে বাংলাদেশ থেকে এ দেশে আসেন শ্যামল। ২০০২ সালের ভোটার-তালিকায় তাঁর নাম ছিল না। ২০০৭ সালে নাম ওঠে। এসআইআর চালু হওয়ার পর থেকে তিনি আতঙ্কে ভুগছিলেন। স্ত্রী শেফালি বলেন, ‘‘এসআইআর চালু হতে চিন্তায় ছিলেন। বার বার বলতেন, ‘আমাদের কী হবে! কে জানে, কোথায় পাঠিয়ে দেবে’! ওই আতঙ্কেই চলে গেলেন!’’ ডাক্তার জানান, হৃদরোগে মৃত্য হয়েছে শ্যামলের। তবে রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার বলেন, ‘‘এসআইআর নিয়ে কারও ভয়ের কারণ নেই।’’

    পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) নমিতা হাঁসদার মৃত্যুতে কাজে বাড়তি চাপের অভিযোগ ওঠায় এ দিন তাঁর বাড়িতে যায় ব্লক প্রশাসনের একটি দল। দলের প্রতিনিধিরা জানান, বিষয়টির তদন্ত চলছে। যা জানানোর নির্বাচন কমিশনকে জানানো হবে। বিএলও-দের সংগঠনের তরফে জেলার বিভিন্ন ব্লক অফিসে মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, কাজে বাড়তি চাপ না দেওয়া এবং নিরাপত্তা-সহ বিভিন্ন দাবিতে স্মাকরলিপি দেওয়া হয়।

    মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে শিলিগুড়িতে বিজেপিকে বিঁধে বলেন, ‘‘কেন তোমাদের জন্য অত মৃত্যু হয়? জানতে চাই। শকুনিবাবুরা, লজ্জা করে না! এত মানুষের প্রাণ কাড়ছ!’’

    নদিয়ায় গিয়ে রাজ্য বিজেপি সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘তৃণমূলের তরফে হাসপাতাল, শ্মশান সর্বত্র বলে দেওয়া হয়েছে, কেউ যদি মদ্যপ অবস্থায় বাইক চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা যান সেটাও এসআইয়ের কারণে। নির্বাচন কমিশন রাজহাঁস হয়ে নেমে পড়েছে দুধ আর জল আলাদা করতে। সেটাই সহ্য হচ্ছে না।’’

    পুরুলিয়ায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘এসআইআর নিয়ে বিজেপি ও তৃণমূল দু’দলই আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। ভোটের আবহে মানুষ যাতে কাজ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন না তুলে এসআইআর নিয়ে মেতে থাকেন, তাই এ সব করা।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)