সন্দীপ প্রামাণিক: তিন বছর তিন মাস ১৯ দিন পর নাকতলায় নিজের বাড়িতে ফিরলেন পার্থ। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় (Recruitment Scam Case) দীর্ঘ কারাবাসের পর অবশেষে মঙ্গলবার মুক্তি পেলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। বিগত কিছুদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। সেখান থেকেই আজ ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরলেন।
দুপুর ২টো ২০ নাগাদ বাইপাসের ধারের হাসপাতাল থেকে হুইলচেয়ারে চেপে বাইরে বেরিয়ে আসেন তিনি। তিনি বেরিয়ে আসতেই হাসপাতাল চত্বরে আগে থেকে ভিড় করা অনুগামীরা স্লোগান তোলেন ‘পার্থদা জিন্দাবাদ’। এই সব দৃশ্য দেখে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। কেঁদে ফেলেন তিনি। তবে হাসপাতালে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে কিছু বলেননি তিনি। অসম্মতিসূচক ঘাড় নেড়ে বুঝিয়ে দেন, তিনি কোনও উত্তর দিতে চান না।
সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) নির্দেশে, সিবিআইয়ের জমা দেওয়া আট জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার পরই পার্থর মুক্তির পথ খুলে গেছিল। সোমবার অষ্টম সাক্ষী - এসএসসির (SSC) এক আধিকারিকের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়। এর পরই আদালত জানায়, পার্থর আর জেলবন্দি থাকার প্রয়োজন নেই।
নীলের উপর সাদা ফুলছাপ পাঞ্জাবি পরে বাইরে বেরোন পার্থ। তাঁর মুখে ছিল নীলরঙা মাস্ক। আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল গাড়ি। চালকের পাশের আসনে বসে নাকতলার বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন পার্থ। গাড়ির সঙ্গেই ছুটতে থাকেন পার্থ-অনুগামীরা। ভিতরে বসে হাত জোড় করে নমস্কার জানাতে দেখাতে যায় তাঁকে। ভিড় কাটিয়ে নাকতলার বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয় পার্থের গাড়ি। পার্থকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে সকাল থেকেই তাঁর বহু অনুগামী বাইক নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। পার্থের গাড়ির পিছনে বাইক নিয়ে নাকতলা যান তাঁরা।
বরণ করে পার্থকে বাড়িতে নিয়ে যান তাঁর আত্মীয়রা। অন্যদের সাহায্যে পায়ে হেঁটেই বাড়িতে ঢোকেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। পার্থকে বরণ করেন তাঁর ভাইয়ের স্ত্রী। উপস্থিত ছিলেন পার্থের ভাই এবং তাঁর কন্যা। পার্থ বাড়িতে ঢোকার পর সদর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। দীর্ঘ দিন পর বাড়ি ফিরে নিকটাত্মীয়দের দেখে আবেগতাড়িত হয়ে কেঁদে ফেলেন পার্থ। তাঁকে সান্ত্বনা দেন ভাইয়ের মেয়ে। বাড়ির ভিতরে ঢুকেই মামা, প্রয়াত গীতিকার শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্মরণ করেন পার্থ।
এদিন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আগেবতাড়িত হয়ে পড়েন পার্থ (Partha Chatterjee)। তাঁর চোখ-মুখ দেখে বোঝাই যাচ্ছিল কতটা স্বস্তি পেয়েছেন তিনি। হাসপাতাল থেকে বেরনোর সময়ে তাঁর চোখ ছলছল করছিল, কেঁদে ফেলেছিলেন তিনি। গাড়ি ঘিরে থাকা সংবাদমাধ্যম এবং অনুগামীদের দিকে তাকিয়ে হাত জোড় করেন পার্থ যদিও কিছু বলেননি।
তবে, জেলমুক্ত হওয়ার পর আজ প্রথমবার মুখ খুললেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে জানালেন, আগামী দিনে সত্যের জয় হবে। একই সঙ্গে ওই বিবৃতিতে বিধায়ক পার্থ নিজের বিধানসভার কেন্দ্রের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেছেন, 'আমি বেহালা পশ্চিমের মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। যাঁরা আমাকে সৎ মানুষ মনে করে পর পর পাঁচ বার নির্বাচনে জিতিয়েছেন, আমি তাঁদের কাছেই বিচার চাইতে যাব।' প্রসঙ্গত, পার্থ বেহালা পশ্চিম কেন্দ্রের পাঁচ বারের বিধায়ক। ২০০১ সাল থেকে ওই কেন্দ্রে টানা জয়ী হয়ে আসছেন তিনি। বিবৃতির শুরুতেই পার্থ বলেন, 'আইনের প্রতি আস্থাশীল ছিলাম। প্রাথমিক পর্যায়ে সেই সত্যের জয় হয়েছে। আগামী দিনে সত্যের জয় হবে।'
২০২২ সালের জুলাই মাসে এসএসসি শিক্ষক নিয়োগ মামলায় (Recruitment Scam) পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে ইডি। ওই সময় তাঁর দক্ষিণ কলকাতার নাকতলার বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছিল। দীর্ঘ জেরা শেষে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। একই সঙ্গে পার্থর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকেও উদ্ধার হয়েছিল বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ ও সোনার গয়না। এই ঘটনাই পরবর্তীতে রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র আলোড়ন তোলে।
এর আগে একাধিকবার জামিনের আবেদন করেছিলেন পার্থ, কিন্তু প্রতিবারই আদালত তা খারিজ করে। পরে তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। গত বছর ডিসেম্বর মাসে শীর্ষ আদালত জানায় - শর্তসাপেক্ষে জামিন দেওয়া যেতে পারে, তবে চার্জ গঠন ও গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের জবানবন্দি শেষ হলে তবেই মুক্তি মিলবে। সেই শর্ত পূরণ হওয়াতেই অবশেষে প্রাক্তন মন্ত্রীর ঘরে ফেরার অনুমতি মিলল।