অর্ণবাংশু নিয়োগী: SSC জট যেন কাটছেই না। নবম দশমের শিক্ষকতা করা একজন প্রার্থী একাদশ দ্বাদশের পরীক্ষায় অভিজ্ঞতার জন্য ১০ নম্বর পাবেন? কিসের অভিজ্ঞতা? কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের হওয়া মামলা গ্রহণ করল হাইকোর্ট।
দ্বাদশের ফলাফল ইতিমধ্যে প্রকাশ হয়েছে। তার মধ্যেই কমিশনের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শিক্ষকতা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ১০ নম্বর দেওয়া হবে। কিন্তু যারা একাদশ দ্বাদশে ক্লাস করায়নি, যারা নবম দশম শিক্ষকতা করেছেন তাদেরকে আদৌ সেই অভিজ্ঞতা আছে? মামলাকারীর আইনজীবী আশীষ কুমার চৌধুরী বলেন, 'উচু ক্লাসে যারা পড়াননি তারা কী ভাবে অভিজ্ঞতার জন্য দশ নম্বর পেতে পারেন? তারা তো নিচু ক্লাসে শিক্ষকতা করেছেন!'
আইনজীবীর আরও বক্তব্য, যাঁরা যোগ্য শিক্ষক বলে চিহ্নিত তাদেরকে কেন আবার ডেমো দিতে হবে যে শিক্ষকতা কী ভাবে করতে হয়? এটা তাদের পক্ষে সম্মানজনক নয়।
ইতিমধ্যে একটি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা নির্দেশ দিয়েছেন, লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলেও তা কার্যকর করা ক্ষেত্রে নির্ভর করবে মামলার পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত। সুতরাং ফল প্রকাশ হলেও কবে চাকরি পাবেন যোগ্য শিক্ষকরা তা এখন সময়ের অপেক্ষা!
গত সেপ্টেম্বর মাসেই স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগের পরীক্ষা হয়। পরীক্ষার ৫৪ দিনের মাথায় সেই ফল প্রকাশিত হয়। এবছর রাজ্যের উচ্চমাধ্যমিক স্তর অর্থাৎ একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে শিক্ষকের শূন্যপদ মোট ১২ হাজার ৫১৪ জনের। আবেদন করেছিলেন ২ লক্ষ ৪৬ হাজার ৫৪৩ জন। ফল বেরলেও নিয়োগ প্রক্রিয়ার ভবিষ্যত ঝুলে রয়েছে অভিজ্ঞতার নিরিখে অতিরিক্ত নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে দায়ের হওয়া মামলার ইস্যুতে। ওই মামলার ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ পর্ব শুরু করা যাবে না, এমনই নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
নভেম্বরের শুরুতেই সেই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে কমিশন। নানা জটিলতায় দীর্ঘদিন কোনও পরীক্ষা নেয়নি এসএসসি। আইনি জটে দীর্ঘ সময় আটকে ছিল নিয়োগ। অবশেষে সেই জট কাটিয়ে পরীক্ষা হয়েছে। তাই এই ফলাফল ঘিরে আগ্রহ ছিল দীর্ঘদিনের। ফলাফল বেরলেও ফের মামলা হল সেই পরীক্ষা নিয়েই।
এসএসসি-তে নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হয় গত ১৮ সেপ্টেম্বর। গত ৭ নভেম্বর সেই পরীক্ষা ফল বেরোয়। চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের অভিযোগ, সেই পরীক্ষার প্রশ্ন ছিল ভুলে-ভরা। প্রশ্ন ভুলের অভিযোগেই এবার মামলা দায়ের করা হয়েছে হাইকোর্টে। বিচারপতি অমৃতা সিনহার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। মামলা দায়ের করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। একাধিক বিষয়ের প্রশ্নে ভুল ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।
আবেদনকারীর আইনজীবী ফিরদৌস শামিমের অভিযোগ, এডুকেশন বিষয়ে দুটো প্রশ্ন ভুল ছিল। ইতিহাসের একটি প্রশ্ন ভুল ছিল ও ভূগোলের তিনটি প্রশ্ন ভুল ছিল।
শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে এ রাজ্যে মামলার শেষ নেই। কখনও টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ, কখনও ওএমআর জালিয়াতির অভিযোগ, আবার কখনও প্রশ্নপত্রে ভুলের অভিযোগ। প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সব স্তরেই এই অভিযোগ উঠেছে, মামলাও হয়েছে। বিচারপতি সিনহার বেঞ্চে উঠেছে এমন একাধিক মামলা। এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নতুন করে নিয়োগের পরীক্ষা হলেও ফের হল মামলা। আবারও বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চে।