• নদিয়ার ভোটার তালিকায় নাম বাংলাদেশের শিক্ষক দম্পতির
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১২ নভেম্বর ২০২৫
  • দুই দেশের ভোটার তালিকাতেই নাম বাংলাদেশের শিক্ষক দম্পতির। নাগরিক পরিচয় ব্যবহার করে একসঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারতের সরকারি সুবিধা ভোগ! নদিয়ার বগুলায় এমন এক দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতেই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অভিযোগের তীর প্রশাসনের দিকে— কীভাবে এত দিন ধরে এদের কার্যকলাপ প্রশাসনের নজর এড়িয়ে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন জোরালো হয়েছে।

    ঘটনার সত্যতা প্রকাশ্যে আসে কৃষ্ণগঞ্জের মাজদিয়া নঘাটার বাসিন্দা মৌসুমী বিশ্বাসের একটি অভিযোগকে কেন্দ্র করে। বছর খানেক আগে তাঁর বিয়ে হয়েছিল বগুলার কলেজপাড়ার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ বিশ্বাসের সঙ্গে। বধূর দাবি, বিশ্বজিৎ কলকাতা পুরসভার কর্মী। কিন্তু বিয়ের কয়েকদিন পরই স্বামীকে নিয়মিত ওষুধ খেতে দেখে ‘রোগ গোপন করে বিয়ে’ দেওয়ার অভিযোগ করেন তিনি। সেই সূত্রেই দাম্পত্যে মনোমালিন্য তৈরি হয় এবং তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এরপরই মৌসুমী হাঁসখালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

    ওই বধূর বিস্ফোরক দাবি, তাঁর শ্বশুর সুনীল বিশ্বাস বাংলাদেশের নাগরিক। ননদ শিউলি বিশ্বাস ও তাঁর স্বামীও বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দির বাসিন্দা এবং দু’জনেই সেখানকার স্কুলশিক্ষক। তবুও তাঁদের নাম রয়েছে ভারতের ভোটার তালিকাতেও! শুধু তাই নয়, পরিচয় ভাঁড়িয়ে ননদ লক্ষ্মীর ভাণ্ডার–সহ রাজ্য সরকারের বহু সুবিধা নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ তাঁর।

    বধূ আরও জানান, তাঁদের দুই সন্তানকে নদিয়ার গাড়াপোতার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছে। প্রতি বছর তারা পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বাস্তবে তারা বাস করে বাংলাদেশে এবং পড়াশোনাও করে সেখানেই। ফলে কীভাবে স্কুলে তাঁদের উপস্থিতি ‘নিয়মমাফিক’ দেখানো হচ্ছে, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

    আরও বিস্ময়কর অভিযোগ, এসআইআর প্রক্রিয়ার আবহে শ্বশুর সুনীল বিশ্বাস মেডিক্যাল ভিসায় বাংলাদেশ থেকে বগুলায় এসে বসবাস করছেন। ফলে তাঁর অবস্থান এবং নথিপত্র নিয়েও সন্দেহ গভীর হয়েছে।

    বিষয়টি সামনে আসতেই এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বহুদিন ধরেই ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল। বধূর শাশুড়ি জবারানি বিশ্বাস অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তাঁর কোনও মেয়েই নেই। শুধুই দুই ছেলে। কিন্তু পাড়া–প্রতিবেশীরা বলছেন, ওই পরিবারের দুই ছেলে ও এক মেয়ে অর্থাৎ শাশুড়ির দাবি ভুয়ো।

    এদিকে স্থানীয় তৃণমূল নেতা অনুপ দাস বলেন, ‘এক ব্যক্তি দুই দেশে বসবাস করে দুই দেশের সুবিধা নেবে— এটা ভয়ংকর অন্যায়। প্রশাসন নিশ্চয়ই কঠোর ব্যবস্থা নেবে।’ বিজেপির জেলা নেতা অমিত প্রামাণিক দাবি করেন, ‘যে আশঙ্কা করছিলাম, তাই সত্যি হল। এ কারণেই এসআইআর প্রয়োজন। দুই দেশের নাগরিক হয়ে দুই দেশের সুবিধা নেওয়া, আইনের বড় অপব্যবহার।’

    অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর ইতিমধ্যেই তৎপর হয়েছে। নথিপত্র, ভোটার–তালিকা, স্কুলের রেকর্ড— সব কিছুই এখন তদন্তের আওতায়। স্থানীয়দের আশা, এ ধরনের জাল পরিচয়ের মাধ্যমে সুবিধা নেওয়া চক্রের সম্পূর্ণ হদিশ মিলবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেবে প্রশাসন।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)