অভিব্যক্তি থেকে কণ্ঠস্বর! বিনোদন দুনিয়ার সব বিভাগের অভিনেতা, শিল্পীদের ‘ভাত মারবে’ এআই?
আনন্দবাজার | ১১ নভেম্বর ২০২৫
ঘটনা এক, জর্জ ওয়াশিংটন কুঠার পেয়েই বাবার প্রিয় গাছ কেটে ফেলেছিলেন। পরে দোষ স্বীকার করায় তাঁকে ক্ষমা করে দেন বাবা। এ যুগে ঘটলে কী হত? “বাবা ক্ষমা করতেন না! কারণ, তিনি যে ওই গাছের উপরে বসেছিলেন”, এই বক্তব্য পরিচালক অশোক বিশ্বনাথনের। তাঁর মতে, জর্জ ওয়াশিংটনের গল্প সত্যি। দ্বিতীয়টি, কল্পনা। এআই কল্পনা বিস্তারে সাহায্য করে।
ঘটনা দুই, এআই মুখের অভিব্যক্তি হুবহু নকল করতে পারে? “একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত পারে। তার বেশি নয়”, দাবি পরিচালক-বিজ্ঞানী বেদব্রত পাইনের।
ঘটনা তিন, পরিচালক-অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ‘অডিয়ো বুক’ শুনতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন। ইংরেজি গল্পটি তাঁর পড়া। সেটিই হিন্দিতে শুনতে গিয়ে দেখেন, আকাশ-পাতাল ফারাক! প্রযুক্তি কি সঠিক ভাষা বোঝে? ফলে, এআই-এর ফাঁদে পড়ে গল্প বদলে গিয়েছে!
এ রকম আরও ঘটনা আছে। সবটাই ঘটেছে এআই-এর সৌজন্যে!
এটাই যদি বাস্তব, তা হলে এআই প্রযুক্তি বিনোদন দুনিয়ায় কতটা প্রভাব ফেলতে চলেছে? এই প্রযুক্তি কি বিনোদন দুনিয়ার সব বিভাগের অভিনেতা বা কণ্ঠশিল্পীদের ‘ভাত মারবে’?
যত এআই-এর দাপট বাড়ছে, ততই শঙ্কা ছড়িয়েছে বিশ্বে। বাংলা বিনোদন দুনিয়াও এর বাইরে নেই। বিষয়টি নিয়ে তাই ৩১তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের পঞ্চম দিনে আলোচনায় বসেছিলেন অশোক বিশ্বনাথন, বেদব্রত পাইন, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, রবিরঞ্জন মৈত্র, সানি জোসেফ। প্রত্যেকের আলোচনায় এই প্রশ্ন উঠে এসেছে, প্রযুক্তি কখনও শিল্পীর পরিপূরক হয়ে উঠতে পারে কি না। প্রত্যেকের একটাই দাবি, প্রযুক্তি কখনও শিল্প-সংস্কৃতির ধারক বা বাহক হয়ে উঠতে পারবে না।
উদাহরণ হিসেবে বেদব্রত যেমন বলেছেন, “কোনও পরিচালক তাঁর নতুন ছবি সম্পর্কে কিছু জানাতে চান। তিনি এই প্রযুক্তির সাহায্য নিতে পারেন। একই ভাবে কোনও দৃশ্যগ্রণের আগে চিত্রগ্রাহককে বুঝিয়ে দিতে পারেন, তিনি ঠিক কী চাইছেন। এআই এই সমস্ত বিষয়ে যথেষ্ট সহায়তা করে।” অশোকের কথায়, “টাইপরাইটার থেকে কম্পিউটার— একটার পর একটা প্রযুক্তি এসেছে। আমরা ভয় পেয়েছি, এই বুঝি মানুষ কর্মহারা হল। সেটা হয়নি। কারণ, প্রযুক্তি কখনও মানবিক বা সংবেদনশীল হয়ে উঠতে পারে না।” চিত্রপরিচালক ও চিত্রগ্রাহক রবিরঞ্জনেরও আশ্বাস, প্রযুক্তির সীমা নির্দিষ্ট। সে কখনও মানুষের বিকল্প হয়ে উঠতে পারবে না। এআই দিয়ে তাই কোনও ছবি বানানো হলে সেটা নিষ্প্রাণ দেখাবে। তার পরেও কিছু ক্ষেত্রে এর উপযোগিতা সত্যিই অনস্বীকার্য।
আবার এই দিকটাও সকলে জানিয়েছেন, শিল্পীর মুখ এআই দিয়ে বানিয়ে বারে বারে কোনও কিছুতে ব্যবহার মানে সেই শিল্পীর ক্ষতি। কারণ, প্রযুক্তি দিয়ে চেহারা তৈরির কারণে তিনি কোনও পারিশ্রমিক পাবেন না! পরমব্রতর উপলব্ধি, আগামী দিনে যে কেউ এআইয়ের সাহায্যে চিত্রনাট্য, সংলাপ--সব লিখে ফেলার চেষ্টা করবেন হয়তো। তার পরেও অশোকের আশ্বাস, যতই প্রযুক্তি আসুক, মঞ্চ বা নাটককে কোনও দিন এই প্রযুক্তি গ্রাস করতে পারবে না। অভিনেতা ছাড়া নাটক মঞ্চস্থ করা অসম্ভব।