• ফারুকের খোঁজে ছুটছেন শৈলেন্দ্র, শিবার জন্য দোয়া চাইছেন উজিফারা
    বর্তমান | ১২ নভেম্বর ২০২৫
  • দিব্যেন্দু বিশ্বাস, নয়াদিল্লি: অন্তত সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্তও একে অপরকে চিনতেন না। দু’টি পরিবারের মধ্যে আত্মীয়তা তো অনেক দূর অস্ত! কোনও যোগসূত্রই ছিল না। সোমবার সন্ধ্যায় লালকেল্লার সামনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ আচমকাই পালটে দিয়েছে গোটা ছবি। মঙ্গলবার থেকে একে অন্যের অন্যতম ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে দু’টি পরিবার। দিল্লি বিস্ফোরণে গুরুতর জখম হয়ে যাঁরা বর্তমানে লোক নায়ক হাসপাতালে ভর্তি আছেন, মহম্মদ ফারুক এবং শিবা জয়সওয়াল তাঁদের অন্যতম। ফারুক সাহেব হাসপাতালে চিকিৎসারত, শুধু এই খবরটুকু ছাড়া তাঁর পরিবারের কাছে আর কোনও তথ্য নেই। অন্যদিকে শিবার মামা শৈলেন্দ্র পেশায় আইনজীবী। ফলে হাসপাতালের ভিতরে তাঁর যোগাযোগ কিছুটা বেশি। তাতেই ভরসা পাচ্ছে ফারুকের পরিবার। ‘ফারুক কোথায়?’ ‘তিনি কেমন আছেন?’ নিজের ‘সোর্স’ কাজে লাগিয়ে এলএনজেপি হাসপাতালে ফারুকের পরিবারের জন্যও ছোটাছুটি করছেন অ্যাডভোকেট শৈলেন্দ্র। ভিতর থেকে খবর এনে দিচ্ছেন। আশ্বস্তও করছেন। এদিকে তাঁর ভাগ্নে শিবার জন্য ‘দোয়া’ করতে ভুলছে না ফারুকের পরিবার। 

    মঙ্গলবার হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে শিবার মামা শৈলেন্দ্র জয়সওয়াল যাবতীয় ক্ষোভ উগড়ে দিলেন হাসপাতালের নিজস্ব পরিকাঠামোর উপর। বুকের কাছে মোবাইলে ভাগ্নের ছবি দেখিয়ে বলছিলেন, ‘হাসপাতালের অনুসন্ধান কেন্দ্রে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের আরও প্রশিক্ষণ দরকার। শখ করে কেউ হাসপাতালে আসেন না। অথচ কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে রীতিমতো বিরক্ত হয়ে উত্তর দিচ্ছেন তাঁরা। নিরাপত্তাকর্মীরা সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সকলের কি চেনাজানা থাকবে? নাকি প্রত্যেকের আত্মীয় সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন নেই?’ মহম্মদ ফারুকের ভাইপো বছর পনেরোর উজিফার অভিযোগ, ‘এখনও পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে জেঠুর শারীরিক পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি। অন্যরা সহযোগিতা করছেন বলে কিছু খবর পাচ্ছি।’ ফারুকের টিভি, ফ্রিজ সারাইয়ের দোকান রয়েছে দরিয়াগঞ্জে। তাঁদের বাড়িও সেখানে। সোমবার সন্ধ্যায় টিভি, ফ্রিজ সারাইয়ের মালপত্র কিনতে ফারুক এসেছিলেন লালকেল্লা এলাকায়। তারপরই বিপর্যয়। দেওরিয়া থেকে শিবা এসেছিল দিল্লির কালকাজিতে মামাবাড়িতে। কাপড়ের ব্যবসায়ী শিবা বাড়িতে বলে বেরিয়েছিল, তিনি চাঁদনি চক বাজারে যাচ্ছেন। সন্ধ্যায় টিভিতে বিস্ফোরণের খবর দেখে শিবার পরিবার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ চেষ্টা করেন। শেষে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তাঁর খোঁজ মিলেছে এলএনজেপি হাসপাতালে। 

    শৈলেন্দ্র বলছিলেন, ‘আমি ভাগ্নের সঙ্গে দেখা করে এসেছি। মুখের অনেকটা পুড়ে গিয়েছে। কিন্তু প্রাণে বেঁচে রয়েছে। এটুকুই যথেষ্ট।’ বেঁচে আছি - প্রিয়জনের কাছ থেকে শুধু এটুকু শোনার জন্য আকুল হলেও সকলের সেই সৌভাগ্য হয়নি। বিস্ফোরণে ই-রিকশচালক জুম্মানের মাথার খুলি অর্ধেক উড়ে গিয়েছে। দেহের নিম্নাংশের হদিশ মেলেনি। পরনের জামা এবং ছিন্নভিন্ন শরীরের কিছু অংশ দেখে বাবাকে শনাক্ত করেছে জুম্মানের ১২ বছরের ছেলে। মঙ্গলবার ভাইপোর দেহ নিতে এলএনজেপি হাসপাতাল মর্গের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন জুম্মানের কাকা মহম্মদ ইদ্রিশ। বললেন, ‘মাসচারেক হল নতুন ই-রিকশ কিনেছিল ছেলেটা। ঋণ পরিশোধ করতে এখনও ঢের বাকি। পরিবারে ওই একমাত্র রোজগেরে ছিল। কীভাবে সংসার চলবে?’ কড়া নিরাপত্তার বলয়ে মুড়ে ফেলা এলএনজেপি হাসপাতাল এবং মর্গে নতুন জীবন ও হতাশা একাকার হয়ে গিয়েছে। নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)