• দিল্লি বিস্ফোরণের নেপথ্যে মেডিকেল মডিউল, জঙ্গি নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে কাশ্মীর থেকে লখনউ, আত্মঘাতী হামলারই ইঙ্গিত
    বর্তমান | ১২ নভেম্বর ২০২৫
  • সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি: কর্ণাটকের ইয়াসিন ভাটকলের জঙ্গি সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনের সবথেকে সক্রিয় মডেল ছিল দ্বারভাঙ্গা মডিউল। বিহারের এই আপাত শান্ত মফস্‌সল শহরের একটি বিশেষ জনপদে গড়ে উঠেছিল জঙ্গি ঘাঁটি। হিজবুলের মোডাস অপারেন্ডি ছিল, গাড়ি, সাইকেল, বাস অথবা ট্রেনে বিস্ফোরক রাখা এবং নানাবিধ ডিটোনেটরের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটানো। ওটা অতীত। আর বর্তমান? কাশ্মীর থেকে ফরিদাবাদ হয়ে সাহারানপুর এবং লখনউ পর্যন্ত ছড়ানো নতুন এক জঙ্গি গ্রুপ—ফরিদাবাদ মডিউল। আদতে যা হয়ে উঠেছে ‘মেডিকেল মডিউল’। ফরিদাবাদের এপিসেন্টার আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল ইউনিট। একের পর এক ডাক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তো বটেই, ভাইস চ্যান্সেলরও সন্দেহের তিরে। দিল্লি বিস্ফোরণের পরই ফরিদাবাদের আল ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ডাক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে জঙ্গি কার্যকলাপে। এই তিন ডাক্তারের নাম—মুজাম্মিল শাকিল, উমর মহম্মদ ও শাহিন শাহিদ। চতুর্থ পারভেজ আনসারি পলাতক। সে-ও ডাক্তার। বাড়ি লখনউ। মুজাম্মিল দু’টি রুমের ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিল। অথচ সে থাকত ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের হস্টেলে। শাহিন নামে মহিলা ডাক্তারের সঙ্গে তদন্তকারীরা সংযোগ পাচ্ছে কার? জয়েশ-ই-মহম্মদের মহিলা ইউনিট জামাত-উল-মোমিনাতের। শাহিন নাকি এই ইউনিটেরই ইন্ডিয়া সেলের অন্যতম। নজর করার মতো বিষয় হল, জামাত-উল-মোমিনাতের কমান্ডার সাদিয়া আজহার। তার পরিচয়, সে মাসুদ আজহারের বোন। শাহিন শাহিদ লখনউয়ের বাসিন্দা। আল-ফালাহতে কর্মরত। ফরিদাবাদ ও সাহারানপুর থেকে এর আগে গ্রেফতার হয়েছে দুই ডাক্তার। তাদের জেরা করে উদ্ধার হয়েছে ২৯০০ কেজি বিস্ফোরক তৈরির উপকরণ। পুলওয়ামা থেকে হেপাজতে নেওয়া হয়েছে সাজ্জাদ আহমেদ নামে এক সন্দেহভাজনকে। সে উমর মহম্মদ ওরফে নবির ‘বন্ধু’। কে এই উমর? মেডিকেল মডিউলের অন্যতম সদস্য। আল-ফালাহর ডাক্তার। পুলিশের সন্দেহ, ফরিদাবাদের গ্রেফতারির পরই উমর প্ল্যান করেছিল দিল্লিতে ঢুকে বিস্ফোরণের। তার নামে রেজিস্ট্রেশন হওয়া গাড়ি আই-২০তেই বিস্ফোরণ হয়েছে সোমবার সন্ধ্যায়। লালকেল্লার সামনে। সেই গাড়ির চালক কি উমর নিজেই ছিল? প্রাথমিকভাবে পুলিশ সেটাই মনে করছে। আর যদি এই সন্দেহ সত্যি হয়, তাহলে দিল্লিতে হওয়া ভয়াবহ বিস্ফোরণ ছিল আত্মঘাতী হামলা। অর্থাৎ লোন উলফ হিসেবে গাড়িতে বসে ডিটোনেটর দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে উমরই। ডাঃ উমর নবি কাশ্মীরের পুলওয়ামার কোলি এলাকার বাসিন্দা। ২০১৯ সালে পুলওয়ামারই তরুণ আদিল আহমেদ দার মারুতি ভ্যানে আরডিএক্স নিয়ে এসে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর কনভয়ের একটি বাসকে ধাক্কা মারে। সেই বিস্ফোরণে ৪২ জন সিআরপিএফ জওয়ানের মৃত্যু হয়েছিল। এবারও আত্মঘাতী কোনও জঙ্গি (হয়তো উমর নিজে) সেই ধাঁচের ঘটনা ঘটিয়েছে বলেই সন্দেহ। 

    আই-২০ গাড়িটি প্রায় তিন ঘণ্টা পার্ক করা ছিল লালকেল্লার কাছেই। সন্ধ্যা ৬টা ৪৮ নাগাদ সেটি পার্কিং স্লট থেকে টাকা মিটিয়ে বের হয়। সামনেই লালকেল্লা মেট্রো স্টেশন। প্রবল যানজট। চার মিনিট পর ওই গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে। কিন্তু প্রশ্ন হল, কোথা থেকে ওই গাড়ি এসেছিল? দিল্লি পুলিশের পাশাপাশি তদন্তে নেমে পড়েছে এনআইএ। দেখা যাচ্ছে, ফরিদাবাদ-দিল্লি সীমানার বদরপুর থেকে গাড়ি দিল্লিতে ঢুকেছে সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ। অর্থাৎ ধরে নেওয়া যায়, এই গাড়ি ছিল আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সোমবার সকালে যখন দুই ডাক্তারের গ্রেফতারি এবং বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের খবর জানা যায়... ততক্ষণে আই-২০ গাড়ি নিয়ে দিল্লিতে ঢুকে পড়েছে চালক। বিকেলের মধ্যেই লালকেল্লার সামনে। কিন্তু ২৯০০ কেজি বিস্ফোরক দিয়ে কী করার প্ল্যান ছিল? ধৃতদের জেরা এবং জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ইনপুট থেকে দিল্লি পুলিশ জেনেছে রাজধানীতে সিরিয়াল ব্লাস্টের পরিকল্পনার কথা। তাহলে কি বার্তা দেওয়ার ছিল যে, তোমরা পাক অধিকৃত কাশ্মীরে গিয়ে মারবে... আর আমরা তোমাদের রাজধানীতেই ঢুকে পড়েছি?

    রহস্য হল, হতাহতদের শরীরে স্প্লিন্টার নেই। ঘটনাস্থলে ক্রেটার তৈরি হয়নি। তাহলে বিস্ফোরকের চরিত্র কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ফুয়েল অয়েল। কিন্তু অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিজে বিস্ফোরক নয়। বিস্ফোরণে দরকার একটি ডিটোনেটর বা ব্লাস্টিং এজেন্ট! তাহলে সেটি কী ছিল? রহস্য শেষ হচ্ছে না! 
  • Link to this news (বর্তমান)