নিজস্ব প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা: দিল্লিতে বিস্ফোরণ, নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে। সোমবার সন্ধ্যায় ওই ঘটনার পর উত্তরবঙ্গজুড়ে জারি হয় হাই অ্যালার্ট। কোথাও নিরাপত্তা নিয়ে কোনও ধরনের খামতি রাখতে নারাজ পুলিশ থেকে শুরু করে বিএসএফ, এসএসবি। উত্তরবঙ্গের ভুটান, নেপাল, বাংলাদেশ সীমান্তের পাশাপাশি আন্তঃরাজ্য সীমানা ব্যবহার করে সড়ক পথে আসা যানবাহন দাঁড় করিয়ে শুরু হয়েছে নাকা তল্লাশি। কোচবিহার থেকে শিলিগুড়ি সর্বত্রই একই ছবি ধরা পড়ছে। এনজেপি স্টেশনে জিআরপি-আরপিএফ চালাচ্ছে বাড়তি নজরদারি। কোচবিহার রাসমেলার ভিড়ে মিশে থাকছেন পুলিশকর্মীরা।
সোমবার রাত থেকেই এনজেপি স্টেশন, বাগডোগরা বিমানবন্দর, মহানন্দা সেতু সহ সর্বত্র শুরু হয়েছে পুলিশের নাকা চেকিং। মঙ্গলবারও আরপিএফ, জিআরপি একযোগে এনজেপি, শিলিগুড়ি জংশন, নিউ কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার জংশন স্টেশনের প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে এবং দূরপাল্লার ট্রেনগুলির কামরায় স্নিফার ডগ নিয়ে তল্লাশি চলায়। হ্যান্ডহেল্ড মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে যাত্রীদের ব্যাগ চেকিং করা হয়। তবে এনজেপি স্টেশনের ফুটওভার ব্রিজের লাগেজ স্ক্যানার বহুদিন ধরে অকেজো থাকায় প্রশ্ন ওঠে। আরপিএফের এনজেপির ইনস্পেকটর মুকেশকুমার রজক বলেন, লাগেজ স্ক্যানার কাজ না করলেও আমাদের অন্যান্য যেসব সরঞ্জাম এবং স্নিফার ডগ আছে তা দিয়েই নজরদারি চলছে। এতে কোনও সমস্যা হচ্ছে না। পার্কিং জোনকেও নজরদারির আওতায় রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে, ভারত-নেপাল সীমান্ত পানিট্যাঙ্কিতে নজরদারি বাড়িয়েছে এসএসবি। কয়েকদিন আগে বিহারে একদল পাকিস্তানি জঙ্গি অনুপ্রবেশের খবর মিলেছিল। নেপাল হয়ে ওই জঙ্গিরা ভারতে প্রবেশ করেছিল বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছিল। স্বভাবতই দিল্লিতে বিস্ফোরণের পরও সেই বিষয়টি নতুন করে ভাবাচ্ছে। তাই পানিট্যাঙ্কি সীমান্তে এসএসবি অ্যালার্ট রয়েছে। ফুলবাড়িতে বাংলাদেশ সীমান্তে টহল বাড়িয়েছে বিএসএফ।
কোচবিহার জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিনহাটা, সিতাই, মেখলিগঞ্জ, মাথাভাঙা, শীতলকুচি, তুফাগঞ্জের মতো সীমান্তবর্তী এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কোচবিহার শহরে চলছে রাসমেলা। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মেলায় এবং মদনমোহন মন্দিরে আসছে। কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকে সতর্ক নজর রেখেছে পুলিশ। বাড়ানো হয়েছে নাকা চেকিং। জেলার বিভিন্ন হোটেলেও তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি স্নিফার ডগও নামানো হয়েছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার সন্দীপ কাররা বলেন, নিরাপত্তার বিষয়ে সবরকমের ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে। নাকা চেকিং, হোটেলে চেকিং চলছেই। রাসমেলার নিরাপত্তাও বিশেষভাবে দেখা হচ্ছে।
আলিপুরদুয়ার জেলার ভারত-ভুটান সীমান্তজুড়ে নাকা চেকিং বাড়িয়েছে পুলিশ। অন্যদিকে, উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল বিভিন্ন জনবহুল স্টেশনে নজরদারি বাড়িয়েছে। দূরপাল্লার ট্রেনগুলিতে আসা যাত্রীদের লাগেজেও তল্লাশি চলানো হচ্ছে। বায়ুসেনা ঘাঁটি থাকার কারণে হাসিমারা স্টেশনে বিশেষ নজরদারি বাড়িয়েছে রেল। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কপিঞ্জলকিশোর শর্মা বলেন, সমস্ত স্টেশনে নজরদারি বাড়িয়েছি আমরা। আলিপুরদুয়ারের এসপি ওয়াই রঘুবংশী বলেন, দিল্লির বিস্ফোরণের জন্য ভারত-ভুটান আন্তর্জাতিক সীমান্ত ও অসম-বাংলা সীমানায় নাকা চেকিং বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
কুমারগ্রাম ব্লকের অসম-বাংলা সীমানার পাকরিগুড়ি নাকা পয়েন্টে নজরদারি আরও বাড়িয়েছে কুমারগ্রাম থানা। অতিরিক্ত পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। অসমের দিক আসা প্রতিটি যানবাহন দাঁড় করিয়ে চলছে তল্লাশি। সোমবার রাতেই নাকা পয়েন্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন করেন আলিপুরদুয়ারের এসপি সহ কুমারগ্রাম থানার আইসি শমীক চট্টোপাধ্যায়, বারোবিশা পুলিশ ফাঁড়ির ওসি জগৎজ্যোতি রায়। জলপাইগুড়িতেও বাস, ছোট গাড়ি, লরি দাঁড় করিয়ে চলছে চেকিং। জলপাইগুড়ি রোড স্টেশন পরিদর্শন করেন আলিপুরদুয়ারের ডিআরএম দেবেন্দ্র কুমার। বেলাকোবার বটতলা মোড়ে বেলাকোবা ফাঁড়ির পুলিশ এবং হাতি মোড়ে রাজগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশ রাতভর নাকা চেকিং চালায়। এককথায় উত্তরবঙ্গকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে।