১৪ বছরে রাজ্যে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিপ্লব এসেছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে এই বিপ্লব ঘটানো হয়েছে। মঙ্গলবার স্বাস্থ্যভবন থেকে ১১০টি স্বয়ংসম্পূর্ণ ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা যান উদ্বোধন করে এই দাবি করেছেন তিনি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে উন্নত মানের স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই এই মোবাইল মেডিক্যাল ইউনিটের উদ্বোধন করা হয়েছে। এই পরিষেবা চালাতে প্রতিমাসে ২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা খরচ করবে রাজ্য। অন্যদিকে, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গতি আনার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্যভবন থেকে মমতা জানিয়েছেন, মোট ২১০ টি মোবাইল মেডিক্যাল ইউনিট প্রস্তুত রয়েছে। প্রথম দফায় ১১০টি যান উদ্বোধন করা হয়েছে। এই যানগুলি জেলায় জেলায় পৌঁছে যাবে। জেলাবাসীকে আগে থেকেই এই বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই যানের পরিষেবা পাবেন মানুষ। মুখ্যমন্ত্রী জানান, মোবাইল মেডিক্যাল ইউনিটের সাহায্যে বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের সুবিধা হবে। অনেক রোগের চিকিৎসা হবে। কাউকে রেফার করার প্রয়োজন হলে সেক্ষেত্রেও এই যান ব্যবহার করা যাবে। স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মোবাইল মেডিক্যাল ইউনিটগুলি স্বয়ংসম্পূর্ণ। এই যানের মধ্যেই থাকবেন চিকিৎসক, নার্স এবং টেকনেশিয়ানরা। পাশাপাশি এর মধ্যে রয়েছে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, ওষুধপত্র। প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে গিয়ে এই যানগুলি পরিষেবা দেবে। যানগুলিতে হিমোগ্লোবিন, প্রেগন্যান্সি, ম্যালেরিয়া, ইসিজি, ব্লাড সুগার-সহ ৩৫টি শারীরিক পরীক্ষা করা যাবে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের অর্থসংস্থান রাজ্যসভার সাংসদদের অনুদান ও বিদ্যুৎ দপ্তরের সিএসআর তহবিল থেকে করা হয়েছে। রাজ্যসভার সাংসদদের ৬০ কোটি টাকা এবং সিএসআর মিলিয়ে মোট ৮৪ কোটি টাকায় তৈরি হয়েছে এই ইউনিট।
মমতা জানিয়েছেন, তাঁর আমলে রাজ্যে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আমুল পরিবর্তন হয়েছে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিপ্লব এসেছে। তাঁর এই বক্তব্যের সপক্ষে একাধিক পরিসংখ্যান তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্যসাথী, টেলিমেডিসিন পরিষেবা থেকে একাধিক প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন তিনি। মমতা জানিয়েছেন, রাজ্যে নতুন ১৪টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়নে ১৪ বছরে ৭০ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। ৪২টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, ১৩ হাজার ৫০০-র বেশি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। ৭৬টি সিসিইউ তৈরি করা হয়েছে জেলায়। ১১৭টি ন্যায্যমূলের ওষুধের দোকান তৈরি করা হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে ৪০ হাজার বেড বেড়েছে। ব্লাড ব্যাঙ্কের সংখ্যা ৫৮ থেকে বেড়ে হয়েছে ৮৯। ১৫৮টি বিনামূল্যে রোগ নির্ণয় কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য পরিষেবায় মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ৭৬টি সিসিইউ, ৩টি এইচডিইউ, ১৭টি মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাব, ১৩টি মাদার ওয়েটিং হাট তৈরি হয়েছে। বেলুড়ে আয়ুর্বেদিক, যোগা ও ন্যাচারোপ্যাথি ডিগ্রি কলেজ গড়ে তোলা হয়েছে। পাশাপাশি, ৪৯টি ট্রমা কেয়ার সেন্টারও নির্মিত হয়েছে।
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গতি আনার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বার্তা দেন, ‘আমরা প্রায় ১৪ হাজার নিয়োগ করেছি। কিছুদিন কোর্টে কেস থাকায় আটকে ছিল, কিন্তু এখন কেন বিলম্ব? হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডকে বলো, কাজে গতি আনতে হবে। আর যদি না আনে, তোমাকেই আনতে হবে।’