• এসআইআর আতঙ্ক, মা-বাবার খোঁজ বেড়েছে বৃদ্ধাশ্রমে
    আজকাল | ১২ নভেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: এক সময় যেসব মা-বাবাকে সমাজের প্রান্তে সরিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁদেরই সন্তানরা আজ আবার খোঁজ নিচ্ছেন। তবে ভালবাসার টান কারণ নয়। স্রেফ প্রয়োজনে। এসআইআর চালু হতেই রাজ্যের বিভিন্ন বৃদ্ধাশ্রমে দেখা গেছে এক নতুন দৃশ্য। বহু বছর যাঁদের খবর কেউ নেননি, সেই বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের হঠাৎ ফোন করছেন সন্তানরা। কেউ আসছেন দেখা করতে। কেউ বা আসছেন কাগজপত্র নিতে। 

    রানাঘাট পুরাতন চাপড়ায় জগদীশ মেমোরিয়াল বৃদ্ধাশ্রমে এই পরিবর্তন সবচেয়ে স্পষ্ট। সম্পাদক গৌর হরি সরকার জানান, 'আমাদের আশ্রমে প্রায় ৪৪ জন বৃদ্ধ, বৃদ্ধা রয়েছেন। নদিয়া, বর্ধমান এমনকী কলকাতা থেকেও অনেকে এখানে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু এসআইআর চালু হওয়ার পর থেকেই হঠাৎ করেই সন্তানদের আগ্রহ বেড়েছে। আগে যাঁদের দেখা মিলত না, এখন তাঁরাই প্রায় প্রতিদিন ফোন করছেন।' 

    পাঁচ বছর ধরে এই আশ্রমে কর্মরত রুমা দেবনাথও একই চিত্র দেখছেন। তিনি বলেন, 'আগে অনেকেই নিজের বাবা-মায়ের খোঁজ নিতেন না। কিন্তু এখন অনেকে এসে জানতে চাইছেন, মা-বাবা কেমন আছেন, কিছু লাগবে কি না।' তবে এই যত্নের আড়ালে যে স্বার্থের গন্ধ লুকিয়ে আছে, তা কেউই অস্বীকার করছেন না। ধারণা, ভোটার তালিকায় বাবা-মায়ের নাম রাখা এখন প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। কারণ সেই নামেই জড়িয়ে রয়েছে সন্তানদের ভবিষ্যৎ বা রাজনৈতিক স্বার্থ। 

    অন্যদিকে বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দাদের মনে মিশ্র অনুভূতি। কেউ আনন্দে চোখের জল ফেলছেন সন্তানদের ফিরে পেয়ে, কেউ আবার চুপচাপ তাকিয়ে রয়েছেন দূরে। তবুও তাঁদের মুখে একটাই কথা, 'ছেলেমেয়েরা যেন ভাল থাকে।'এই দৃশ্য যেন সমাজকে নতুন করে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় ভালবাসা কি শুধুই প্রয়োজনে জাগে? নাকি এসআইআর-এর মতো এক নীতিই মনুষ্যত্বকে ফিরিয়ে আনবে, যদিও স্বার্থের পথ ধরে? 

    প্রসঙ্গত, দেশের ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বর্তমানে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন অভিযান চলছে। এই সময়ে প্রতিটি বিএলওকে নির্দিষ্ট বুথ এলাকার অন্তর্গত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভোটার তথ্য হালনাগাদ করতে হয়। 

    বিহারের পর বাংলাতেও চালু হয়েছে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর প্রক্রিয়া। যার জেরে অনেকের মধ্যেই আতঙ্ক লক্ষ্য করা গিয়েছে। সম্প্রতি রাজ্য জুড়ে কয়েকটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় মৃতের পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে, এসআইআর-এর কারণেই মৃত্যু হয়েছে। 

    এসআইআর আতঙ্কে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে আগরপাড়ায়। প্রদীপ করের মৃত্যুতে প্রতিবেশীরা দাবি করেছিলেন, তাঁর ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে। তবুও তিনি আতঙ্কিত ছিলেন। তাই নিজেকে শেষ করে দেন। গত বুধবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙড়ের জয়পুর এলাকার যুবক সফিকুল গাজি (৩৫) এসআইআর আতঙ্কে আত্মঘাতী হয়েছেন বলে তাঁর পরিবারের দাবি। তাঁরা স্ত্রী জানান, গত কয়েক দিন ধরে আতঙ্কে ছিলেন স্বামী। বার বার বলছিলেন, তাঁর কোনও পরিচয়পত্র নেই। ভাই-বাপ কেউ নেই। স্ত্রী বার বার অভয় দেওয়ার চেষ্টা করলেও গত বুধবার সকালে তিনি নিজেকে শেষ করে দেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বহরমপুর থানার অন্তর্গত গান্ধী কলোনী এলাকায় গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন এক ব্যবসায়ী। সেক্ষেত্রেও পরিবাররে দাবি ছিল, আত্মহত্যার কারণ এসআইআর আতঙ্ক। ২০০২ সালে ভোটার তালিকায় নাম না থাকায় ‘দেশ ছাড়তে হবে’ এই আতঙ্কে গত ৪ নভেম্বর কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হন মুর্শিদাবাদের কান্দির মোহন শেখ (৫৫)।
  • Link to this news (আজকাল)