অর্ণবাংশু নিয়োগী: কাটছে না SSC জট। একের পর এক মামলার জটে SSC। উচু ক্লাসে না পড়িয়ে শুধু অভিজ্ঞতার জন্য ১০ নম্বর? নবম-দশম ক্লাসে শিক্ষকতা করা প্রার্থীদের একাদশ-দ্বাদশের জন্য কেন ১০ নম্বর? এই মর্মে মঙ্গলবারই দায়ের হয়েছিল মামলা। মামলাকারীর আবেদনের গুরুত্ব বুঝে সেই মামলা গ্রহণ করেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। আজই ছিল তার শুনানি। নবম দশমের শিক্ষকতা করা একজন প্রার্থী একাদশ দ্বাদশের পরীক্ষায় অভিজ্ঞতার জন্য কেন ১০ নম্বর পাবেন? কীসের অভিজ্ঞতা? কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেই হাইকোর্টে মামলা (SSC in Kolkata High Court)।
SSC-র অতিরিক্ত '১০ নম্বর' প্রশ্নে আদালত...
শুনানির পর লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলেও কার্যকর না হওয়ার নির্দেশ বহাল রাখলেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা (Justice Amrita Sinha)। অভিজ্ঞ শিক্ষকদের ১০ নম্বর দেওয়া নিয়ে এদিন আদালতের একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়ে কমিশন। নবম-দশম প্রার্থীরা কি একাদশের-দ্বাদশ নিয়োগের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার নিরিখে ১০ নম্বর পেতে পারেন? তাদের তো একাদশ-দ্বাদশে পড়ানোর অভিজ্ঞতা-ই নেই! মামলার মূল প্রশ্ন ছিল এটাই। আদালত স্পষ্ট বলে, "২০২৫-এ নিয়োগের ক্ষেত্রে এটা একটা বড় ইস্যু"। পাশাপাশি বিচারপতি অমৃতা সিনহা, কমিশনের কাছে এও জানতে চান, "যারা ২০১৬ সালে পরীক্ষায় বসেননি তাঁরাও কি ১০ নম্বর পাবেন?"। এদিন শুনানির পর মামলার নথি সব পক্ষকে দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি সিনহা। ২৮ তারিখ SSC-র ১০ নাম্বার সংক্রান্ত সব মামলার আবার শুনানি হবে। আইনজীবী আশীষ কুমার চৌধুরী জানিয়েছেন, আদালত প্রাথমিকভাবে সবার বক্তব্যই শুনেছে। আবার পরে শুনানি আছে। ২৮ তারিখ পরবর্তী শুনানি।
উল্লেখ্য, গত ১৮ সেপ্টেম্বর এসএসসি-তে নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হয়। পরীক্ষার ৫৪ দিনের মাথায় ৭ নভেম্বর সেই ফল প্রকাশিত হয়। তবে নিয়োগ প্রক্রিয়ার ভবিষ্যত ঝুলে রয়েছে কমিশনের অভিজ্ঞতার নিরিখে অতিরিক্ত ১০ নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে হাইকোর্টে দায়ের হওয়া মামলার রায়ের উপর। ইতিমধ্যেই প্রশ্নে ভুল সংক্রান্ত আরও একটি মামলাও চলছে হাইকোর্টে। অভিযোগ, এডুকেশনে ২টো, ইতিহাসে একটি ও ভূগোলে ৩টি প্রশ্ন ভুল ছিল। বিচারপতি অমৃতা সিনহা নির্দেশ দিয়েছেন, লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলেও, প্রশ্নে ভুল সংক্রান্ত মামলার পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তা এখনই কার্যকর হবে না।
এজলাসে মামলা শোনার সুযোগ শেষ...
এদিকে SSC নিয়ে একের পর এক মামলার মধ্যেই বিচারপতি অমৃতা সিনহার বড় নির্দেশ। স্কুল সার্ভিস কমিশনের কোনও মামলা হলেই সকাল থেকে হাইকোর্টে শয়ে শয়ে মামলাকারীরা ভিড় করতেন! কিন্তু এবার এভাবে মামলা শোনার সুযোগ শেষ। বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে এক মামলা চলাকালীন দু-পক্ষের আইনজীবীর মধ্যে তুমুল আইনি লড়াই বাধে। সেইসময় একদল অত্যুৎসাহী হাততালি দিয়ে একপক্ষের আইনজীবীর যুক্তিকে সমর্থন করতেই বিরক্ত বিচারপতি সিনহা মামলার মক্কেলদের বের করে দেন।
তখনই মোবাইল বের করে বর্ষীয়ান আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ দেখান আদালতকে। যেখানে লেখা, মামলা চলাকালীন তাঁদের পক্ষের মক্কেলরা যেন সকাল থেকে এজলাসে ভিড় করে থাকে! সেই নির্দেশ দেওয়া। তাতে আদালতের উপরে চাপ থাকবে বলেও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে ওই মেসেজে। সেই মেসেজ বিচারপতি অমৃতা সিনহার হালকা চালে মন্তব্য, "এইভাবে কী আর চাপ দেওয়া যায়?"
এরপরই তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আগামী দিনে বৃহৎ আকারে জনগণের সঙ্গে যুক্ত এমন মামলায় মক্কেলদের আর এজলাসে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তিনি কলকাতা হাইকোর্টের সেই বিচারপতি, যাঁর এজলাসে সকাল থেকে শেষ পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্নভাবে সব শুনানির লাইভ হয়। সেই লাইভেই শুনে নিতে হবে শুনানি। শুনানির লাইভ দেখেই নিজেদের কৌতূহল মেটানোর পরামর্শ দেন বিচারপতি সিনহা।