• মমতাকে সাম্মানিক ডি’লিট দিল জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৩ নভেম্বর ২০২৫
  • সমাজে নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ অবদানের জন্য ফের আন্তর্জাতিক স্তরে সম্মানিত হলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার তাঁকে সাম্মানিক ডি’লিট প্রদান করল জাপানের ওকায়ামা বিশ্ববিদ্যালয়। বুধবার জাপানের ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা কলকাতায় এসে তাঁকে সম্মানিত করেন। এদিন আলিপুরের ধনধান্য অডিটোরিয়ামে সেই বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী এই সম্মান প্রাপ্তির পর তিনি সেটিকে মা-মাটি-মানুষকে উৎসর্গ করেন।

    প্রসঙ্গত রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক উদ্ভাবনী শক্তিতে মমতা সারা ভারতে অতি সুপরিচিত। তাঁর মস্তিষ্ক প্রণীত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প শুধু রাজ্যে নয়, দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নজর কেড়েছে। তাঁর বিভিন্ন প্রকল্পের অনুকরণে বিজেপি শাসিত অনেক রাজ্য নতুন নতুন প্রকল্প চালু করেছে বলে রাজনৈতিক মহলে বারবার দাবি করা হয়েছে। সেই প্রকল্পগুলির মধ্যে কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্য সাথী, লক্ষ্মীর ভান্ডার অন্যতম। একইভাবে রাজ্যের উন্নয়ন ক্ষেত্রে মমতার এই উদ্ভাবনী ক্ষমতা আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসিত হয়েছে বারবার। এজন্য বিভিন্ন সময়ে তাঁকে সম্মানিতও করা হয়েছে। এবার জাপানের ওকায়ামা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর সাফল্যের মুকুটে আরও একটি নতুন পালক যুক্ত করে দিল।

    বুধবার মমতা এই সম্মান গ্রহণের সময় বলেন, ‘বাংলায় আসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানাই ধন্যবাদ। আমি সত্যি অভিভূত। শান্তি, সম্প্রীতি, সংস্কৃতির জন্য জাপান সকলের কাছে উদাহরণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক পড়ুয়ার জন্য আমার শুভকামনা।’

    এদিনের অনুষ্ঠান মঞ্চে সম্মান গ্রহণের সময় মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বিশেষ বক্তৃতায় জাপান ও বাংলার পারস্পরিক সম্পর্ক ও ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বাংলা-জাপানের বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে কাজ করে। যা আমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং পড়ুয়াদের জন্য খুবই ভালো। জাপানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বহু পুরনো। গত ৭ বছর শিল্প সম্মেলনে জাপানের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন। আশা করি এবার তাঁদের পাশে পাব। ওকায়ামা বিশ্ববিদ্য়ালয়ের প্রতিনিধিরাও বিশ্ব বাংলা শিল্প সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে আশা করি। আমন্ত্রণপত্র অবশ্যই পাঠানো হবে।’

    তিনি এই সম্মান গ্রহণের তিনি বাংলা ও জাপানের পরম্পরার কথা তুলে ধরতে গিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে একাধিক মনীষীর প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। মমতা বলেন, ‘একসময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাপানে গিয়েছিলেন। সকলের মনে রয়েছে। স্বাধীনতার আগে স্বামী বিবেকানন্দ জাপানে গিয়েছিলেন। রাসবিহারী বসু, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুও গিয়েছিলেন। নেতাজির মৃত্যু নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে। তবে ইতিহাস ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনে আপনাদের একটি ইউনিট রয়েছে।’

    রাজ্যের উন্নয়নের জন্য এতসব সম্মানপ্রাপ্তির পরেও এখনও আগের মতোই একেবারে যে ‘ঘরের মেয়ে’র মতো জীবন কাটাতে চান, সে কথাও সাফ জানিয়ে দেন জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘আমি ভিআইপি নয়, এলআইপির মতো জীবন কাটাতে চাই।’ তবে কেন জাপানের এই রাজ্যে এসে মুখ্যমন্ত্রীকে সম্মানিত করলেন, তাঁর কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি আগামী বছর জাপানে যাওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন।

    মুখ্যমন্ত্রী জাপানের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা এত ইতিবাচক। নভেম্বরে এই অনুষ্ঠান হবে বলে জানিয়েছিলেন। আমাকে বলা হয়েছিল আপনি জাপানে না আসলে, আমরা যাব। আপনারাই বলুন কীভাবে প্রত্যাখ্যান করব? কীভাবে বলব আসবেন না? তাই তো তাঁদের অভ্যর্থনা জানাই। এটা একজন মানুষ হিসাবে নৈতিকতা। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। সত্য়ি আপনাদের দেখে আমি মুগ্ধ।’ এভাবে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

    সব কাজের মধ্যে মমতার পাখির চোখ রাজ্যে আরও বিনিয়োগ বাড়ানো। সেজন্য জাপানের বাণিজ্যিক ও শিল্প সংস্থার এ রাজ্যে আরও বিনিয়োগ এনে কর্ম সংস্থান বাড়ানো। সেজন্য কথা প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বাংলায় বহু বিদেশি সংস্থা কাজ করেছে, বিনিয়োগ করছে। মিৎসুবিসি, টাটা, জাইকা। সিলিকন ভ্যালিতে অনেকে বিনিয়োগ করছে। ওয়েবেল ও ফুজি শপও হাতে হাত মিলিয়ে বিনিয়োগ। আজ থেকে নয়। জাপানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বহু পুরনো। জাপান খুব সুন্দর দেশ। আপনাদের স্বাস্থ্যচর্চার কৌশল শেখার মতো। হিরোশিমা, নাগাসাকির মতো ঘটনা ঘটার পরেও আপনারা ফের জাপানকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলেছেন।’
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)