মাসিক এক হাজার টাকা বার্ধক্য ভাতা চালু রাখতে দিতে হবে ডিজিটাল লাইফ সার্টিফিকেট। আধার নম্বর দিয়ে এবং রেটিনা স্ক্যান করিয়ে বেঁচে থাকার প্রমাণ দিতে হবে প্রত্যেক প্রাপককে৷ গত সেপ্টেম্বরে জেলার পুরসভাগুলির কাছে এমনই নির্দেশ আসে রাজ্য নগরোন্নয়ন পর্ষদের তরফ থেকে। চিঠিতে জানানো হয়, কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রামোন্নয়ন দফতরের নির্দেশে এ কাজ করা হচ্ছে৷ সেপ্টেম্বরের ১২-২৪ তারিখের মধ্যে এ কাজ শেষ করারও নির্দেশ দেওয়া হয় চিঠিতে৷ যদিও উৎসবের মরসুম শেষ হলেই কাজে হাত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিউড়ি পুরসভা। সে মতো নভেম্বরের শুরু থেকেই কাজ শুরু করল তারা। কিন্তু এসআইআর চলাকালীন এ দায়িত্ব সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন পুর প্রতিনিধিরা।
সিউড়ি শহরের পুর প্রতিনিধিদের দাবি, সরকারি পেনশনভোগীদের এখনও শুধুমাত্র কাগজে সই করে বেঁচে থাকার প্রমাণ দিলেই চলে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বয়স্ক মানুষদের লাইনে দাঁড় করিয়ে আধার কার্ড মিলিয়ে দেখে বা রেটিনা স্ক্যান করে বেঁচে থাকার প্রমাণ দিতে হচ্ছে৷ অভিযোগ, নতুন নির্দেশে বয়স্ক ভাতা প্রাপকদের সমস্যার মুখে ফেলছে কেন্দ্র৷ যদিও মৃত, স্থানান্তরিত, ভুয়ো প্রাপকদের চিহ্নিত করতে এ প্রক্রিয়া বলে জানিয়েছে কেন্দ্র।
মঙ্গলবার সিউড়ি পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ত্রাণ সমিতি ক্লাবে এই ডিজিটাল লাইফ সার্টিফিকেটের শিবির আয়োজিত হয়েছিল। সেখানেই নিজের মাকে নিয়ে এসেছিলেন আতাউর রহমান। তিনি বলেন, “আমাদের সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। মা একেবারেই হাঁটাচলা করতে পারেন না। তা সত্ত্বেও তাঁকে এ শিবিরে আনতে হয়েছে। এসেও কোনও লাভ হল না৷ মায়ের চোখ ঘোলাটে হয়ে গিয়েছে। তাই রেটিনা স্ক্যান করা গেল না৷ এ বার কী হবে, জানা নেই।”
ওই ওয়ার্ডের পুর প্রতিনিধি দেবদাস সাহা বলেন, “এক দিকে এসআইআর নিয়ে আমাদের পাড়ার কোনায় কোনায় ঘুরতে হচ্ছে। তারই মাঝে এ কাজও করতে হচ্ছে৷ অনেক বয়স্ক মানুষই এতে সমস্যায় পড়ছেন। আমরা তাঁদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করার কথা ভাবছি।”
সিউড়ির পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “একটার পরে একটা বিষয়কে সামনে এনে মানুষকে অকাজে ব্যস্ত রাখাই এদের মূল উদ্দেশ্য। যদিও দলের নির্দেশে আমরা যতটা সম্ভব বয়স্ক মানুষদের কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করছি৷ যেটুকু সমস্যা হচ্ছে, তার সার্বিক দায় কেন্দ্রের।”
বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি বাবন দাস বলেন, “এখনই এই কাজ করতে হত না। এসআইআরের আগে বা পরেও করা যেত। আসলে এই তৃণমূল বার্ধক্য ভাতার ক্ষেত্রে এত দু’নম্বরী করেছে বলেই এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে৷ এর পরে বিরাট সংখ্যায় ভুয়ো প্রাপকের নাম বাদ যাবে।”