• ব্রহ্মস-টেসলা-ডক্টর ডুম! ১৫ সেকেন্ডে শেষ রেল টিকিট, ডিজিটাল দালালরাজে বঞ্চিত যাত্রীরা
    বর্তমান | ১৩ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: বড়দিনে ঘুরতে যাবেন? ৬০ দিন আগে ল্যাপটপ বা মোবাইল নিয়ে বসলেন ট্রেনের টিকিট কাটতে। সকাল ৮টায় আইআরসিটিসি ওয়েবসাইটে টিকিটের উইন্ডো খোলার কথা। তখনও হয়তো আপনি যাত্রীর বিস্তারিত বিবরণ পূরণ করে উঠতে পারেননি। তার মধ্যেই সব ই-টিকিট বুকড! আর পেমেন্ট করার পর আপনার টিকিট ওয়েটিং লিস্টে। এরকম অভিজ্ঞতা এখন কমবেশি প্রায় সবারই। ভুক্তভোগীরা বলছেন, মাত্র ১৫ সেকেন্ডে একটা গোটা ট্রেনের টিকিট বুক কীভাবে সম্ভব? কোনও বিশেষ দিনে নয়, গোটা বছর ধরেই চলছে এই অবস্থা।

    কিন্তু কীভাবে চলছে এই জিনিস? এর নেপথ্যে রয়েছে ব্রহ্মস, টেসলা কিংবা ডক্টর ডুম। যেমন চমকপ্রদ ‘নাম’, তেমনই আকর্ষণীয় ‘কাম’। এইসব বেআইনি সফটওয়্যার দিয়েই ডিজিটাল দালালরাজ চালাচ্ছে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। ফল? দিনের পর দিন বঞ্চিত হয়ে চলেছেন প্রকৃত যাত্রীরা। কারণ, এই সব সফটওয়্যার ব্যবহার করে ‘তুরন্ত’ কেটে নেওয়া কনফার্মড টিকিট বিকোচ্ছে প্রায় আড়াই গুণ বেশি দামে।

    কীভাবে কাজ করছে এই সফটওয়্যার? আরপিএফ সূত্রের খবর, আইআরসিটিসির একাধিক অ্যাকাউন্ট খুলে একসঙ্গে কাজ করা সম্ভব এই সফটওয়্যারে। আর যাঁদের টিকিট কাটা হচ্ছে, তাঁদের বিস্তারিত তথ্য বুকিংয়ের একদিন আগে সংগ্রহ করে রাখছে এই অসাধু ব্যবসায়ীরা। বুকিং উইন্ডো খোলা মাত্রই এসব সফটওয়্যারের মাধ্যমে সেই তথ্য চোখের পলকে ‘অটো ফিল’ হয়ে যাচ্ছে। ফলে মাত্র ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে ই-টিকিট বুকিং। মিলছে কনফার্মড সিটও। আর বুকিং উইন্ডো খোলার দু’-তিন মিনিটের মধ্যেই দীর্ঘ ওয়েটিং লিস্ট চলে আসছে ই-টিকিটে। কারণ, বেআইনি সফটওয়্যারের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারায় মিলছে না কনফার্মড টিকিট। এ নিয়ে একপ্রকার তিতিবিরক্ত, ক্ষিপ্ত যাত্রীরা। 

    ট্রেনের টিকিটে ডিজিটাল দালালরাজের এহেন নয়া পন্থায় একপ্রকার হতভম্ব হয়ে পড়ছেন রেল আধিকারিকরাও। সরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে, অসাধু ব্যবসায়ীরা টিকিটের মূল দামের থেকে দ্বিগুণেরও বেশি ‘চার্জ’ নিচ্ছে কনফার্মড টিকিট পাইয়ে দেওয়ার জন্য। যেমন, ট্রেনের যে স্লিপার ক্লাস টিকিটের দাম যাত্রীপিছু ৮০০ টাকা, তা বিক্রি হচ্ছে প্রায় দু’হাজার টাকায়। টু টিয়ার এসি, থার্ড এসির ক্ষেত্রে খুব স্বাভাবিকভাবেই রেট আরও বেশি। 

    নেটিজেনরা বলছেন, ডক্টর ডুম সফটওয়্যার ব্যবহার করছেন প্রায় ৫০ হাজার ‘ইউজার’। আর সরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে, অসাধু ব্যবসায়ীরা এহেন অবৈধ সফটওয়্যার ব্যবহার করছেন মাসে মাত্র দু’থেকে আড়াই হাজার টাকা ‘ভাড়া’য়! অর্থাৎ, যারা এহেন বেআইনি সফটওয়্যার তৈরি করছে, তারা ‘মান্থলি রেন্ট’-এর মাধ্যমে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীকে তা ব্যবহার করার অনুমতি দিচ্ছে। মাত্র কয়েক হাজার টাকা মূল্যে তা হস্তগত করে বেআইনিভাবে লক্ষ লক্ষ টাকার মুনাফা লুটে নিচ্ছে ডিজিটাল দালালরা।  

    দালালরাজ বন্ধ করতে ইতিমধ্যেই একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে রেলমন্ত্রক। এই অবৈধ সফটওয়্যারের ব্যবহার রুখতেও দেশব্যাপী অভিযানে নেমেছে আরপিএফ। গ্রেফতার করা হয়েছে অনেককে। কিন্তু তাতে কাজের কাজ যে বিশেষ কিছুই হয়নি, মন্ত্রকের এক্স হ্যান্ডলে চোখ রাখলেই তা পরিষ্কার। কোন পদ্ধতিতে, কীভাবে টিকিট কাটলে কনফার্মড হবে, তা নিয়ে প্রতিনিয়ত মত বিনিময় চলছে ভ্রমণের একাধিক গ্রুপে। কারণ ডক্টর ডুম, টেসলা বা ব্রহ্মসের হাতযশে কনফার্মড টিকিট অধরা আম জনতার।
  • Link to this news (বর্তমান)