আরও বিস্ফোরক! ২ গাড়ি ঘিরে রহস্য, পরিত্যক্ত অবস্থায় মিলল একটি
বর্তমান | ১৩ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: শুধু ডক্টর উমর নবি এবং হুন্ডাই আই-২০ গাড়ি নয়। ষড়যন্ত্রের অঙ্গ আরও দু’টি রহস্যময় গাড়ি। একটি লাল রঙের ইকোস্পোর্ট এবং একটি ব্রেজা। ধৃত ডাক্তারদের জেরা করে পুলিশ ও এনআইএ জানতে পেরেছে এই দুই গাড়ির কথা। ব্রেজার মালিক লখনউয়ের বাসিন্দা ডক্টর শাহিদ শাহিন। সেই গাড়ির খোঁজ মিলছে না। আর ইকোস্পোর্ট? পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে হরিয়ানার খান্ডাওয়ালি গ্রামের কাছে এক ফার্মহাউসে। রেজিস্টেশন ডঃ উমর নবির নামেই। নম্বর, দিল্লির। কিন্তু এসব ছাপিয়ে মোক্ষম প্রশ্নটা হল, আরও বিস্ফোরক কোথাও গোপনে মজুত করা নেই তো?
উমর নবি পুলওয়ামার কোলি এলাকার বাসিন্দা। কর্মস্থল, ফরিদাবাদের আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়। তার অর্থ, দিল্লির ঠিকানা ছিল তার। তা ব্যবহার করেই দিল্লিতে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করানো হয়েছিল। সিলমপুরের ওই ঠিকানায় হানা দিয়ে পুলিশ স্থানীয় দুই বাসিন্দার মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে। যে বিল্ডিং এর ঠিকানা দেওয়া হয়েছিল, সেখানে উমর কবে থেকেছে, তার অবশ্য হদিশ পাওয়া যায়নি।
পুলিশ যে ঘটনা পরম্পরাকে জুড়তে পেরেছে, সেটি হল—১) সোমবার সকালে দুই ডাক্তারের গ্রেপ্তারি এবং ২৯০০ কেজি বিস্ফোরক উপকরণ পাকড়াও হওয়ার খবর পেয়েই আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জয়েশ-ই-ডক্টরস’ আতঙ্কিত ও সতর্ক হয়ে যায়। ২) সম্ভবত এই চক্রের ভাণ্ডারে আরও বিস্ফোরক ও অস্ত্র মজুত ছিল। অন্য কোথাও। সেগুলি দ্রুত সরিয়ে ফেলার তাগিদেই তিনটি গাড়ি তিনদিকে চলে যায়। ৩) আই-২০তে বিস্ফোরক ছিল। তাতেই লালকেল্লার কাছে বিস্ফোরণ ঘটে। কিন্তু প্রশ্ন হল, বাকি দুই গাড়িতেও কি বিস্ফোরক ছিল? পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গাড়িতে কোনও বিস্ফোরক পাওয়া যায়নি। সেটি থেকে বিস্ফোরক অন্য কোথাও সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কি না, সেটাই খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
সবথেকে উদ্বেগজনক যে সূত্র পাওয়া যাচ্ছে—এমন কোনও স্থান আছে, যেখানে অ্যাসেম্বল করে অপারেশনের জন্য পূর্ণাঙ্গ বিস্ফোরক তৈরি করার ব্যবস্থা আছে। হরিয়ানার ফরিদাবাদ এবং উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরের মধ্যবর্তী কোনও তৃতীয় লোকেশন থাকতে পারে। আর একটি সম্ভাবনাও পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না। তা হল, ফরিদাবাদের আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অন্দরেই কোনও ‘মেক শিফট’ বোমা তৈরির ল্যাব গড়ে তোলা হয়েছিল। ফরেনসিক সায়েন্স টিম লালকেল্লার সামনে থেকে ৪০টি নমুনা সংগ্রহ করেছে। যে আই-২০তে বিস্ফোরক রাখা ছিল, তার ধ্বংসস্তূপ থেকেও নেওয়া হয়েছে নমুনা। অন্যতম স্যাম্পল পাওয়া গিয়েছে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। কিন্তু আরও একটি নমুনা উদ্ধার করা হয়েছে, যা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের থেকেও শক্তিশালী। কিন্তু সেটি যে ঠিক কী? এখনও স্পষ্ট জানানো হয়নি। একটি সম্ভাবনার কথা পুলিশ জানিয়েছে। পিইটিএন—যা অর্গানিক নাইট্রেট। এই বিস্ফোরক বড়সড় কনস্ট্রাকশন সাইট, খনি এলাকাতেও ব্যবহার করা হয়। পুলিশের মাথাব্যথার কারণ এখন একটাই—নিখোঁজ গাড়ি এবং আরও বিস্ফোরক এখন কোথায় রয়েছে?
বৃহত্তর প্রশ্ন হল, রাজধানী দিল্লির নাকের ডগায় ফরিদাবাদে এক বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে গড়ে উঠল সন্ত্রাসের এপিসেন্টার? কেন টের পাওয়া গেল না এতদিন? ২৯০০ কেজি বিস্ফোরক বহু পথ পেরিয়ে এসে ফরিদাবাদে আপাত নিরীহ এক ডাক্তার মুজাম্মিলের দু’কামরার ফ্ল্যাটে জমা করা হল, অথচ গোয়েন্দা ও পুলিশ বাহিনী টেরই পেল না!