• টার্গেট লালকেল্লা-ইন্ডিয়া গেট, ২৬ জানুয়ারি সিরিয়াল ব্লাস্টের প্ল্যান?
    বর্তমান | ১৩ নভেম্বর ২০২৫
  • সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি: লাল রঙের ইকোস্পোর্ট। সাদা ব্রেজা গাড়ি। মৌলবি ইশতিকিয়া। তুরস্ক-আফগানিস্তান। সাধারণতন্ত্র দিবস। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের তারিখ। এই আপাত বিচ্ছিন্ন সূত্রগুলি নিয়েই তদন্তকারীরা দিল্লি বিস্ফোরণের রহস্যের দরজা খুলতে মরিয়া। আসলে বিচ্ছিন্ন নয়, পরস্পরের সঙ্গে সংযোগপূর্ণ এই প্রতিটি ‘ক্লু’। এবং এই যাবতীয় ‘সূত্র’ থেকে উঠে আসছে চরম বিপজ্জনক এক তথ্য—লালকেল্লার সামনের রাস্তায় যে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেটি সম্ভবত ছিল অসতর্কতা এবং আতঙ্কের যোগফলে এক দুর্ঘটনা। আদতে এই বিস্ফোরক সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল অন্য কোনও গোপন লোকেশনে। একটি নয়, একাধিক স্থানে নিরাপদ আশ্রয়ে। কারণ, লক্ষ্য ছিল বৃহত্তর ষড়যন্ত্র। ঩নিছক লালকেল্লা এলাকা নয়, রাজধানী নগরীকে সম্পূর্ণ কাঁপিয়ে দিয়ে বহু প্রাণহানির ‘ব্লু প্রিন্ট’ তৈরিই ছিল। কী সেই প্ল্যান? পুলিশ সূত্রে বলা হচ্ছে, আগামী ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন কিংবা ২০২৬ সালের সাধারণতন্ত্র দিবসে দিল্লিজুড়ে সিরিয়াল বিস্ফোরণ ঘটানো। খোদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাই স্বীকার করে নিয়েছে, দিল্লির বিস্ফোরণ জঙ্গি হামলা।

    যদিও এসব ‘প্ল্যান বি’। প্রথম প্ল্যান ছিল অন্য। ২০০৫ সালে দীপাবলির প্রাক্কালে দিল্লির পাহাড়গঞ্জ, সরোজিনী নগর, গোবিন্দপুরী এলাকায় একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটে। মৃত্যু হয় ২১০ জনের। ২০ বছর পর পুনরায় সেই দীপাবলির উৎসবে‌ই আবার ধারাবাহিক বিস্ফোরণের নীল নকশা আঁকা হয়েছিল। সেই সুযোগ ঘটেনি। কিন্তু কেন? সেটি জানতে চাইছেন তদন্তকারীরা। ধৃত তিন ডাক্তার সহ অন্যদের জেরা করে উঠে আসছে বিকল্প বিস্ফোরণের প্ল্যানের ষড়যন্ত্র। আগামী ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রতিবাদে কিংবা আগামী সাধারণতন্ত্র দিবসে দিল্লিজুড়ে বিস্ফোরণ। যে তারিখকেই চূড়ান্ত করা হোক, লক্ষ্য ছিল সিরিয়াল ব্লাস্ট। ১৯৯৩ সালের মার্চ মাসের মুম্বই বিস্ফোরণ এবং ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসের (২৬/১১) মুম্বই হামলার ধাঁচে। টার্গেট তালিকায় ছিল ইন্ডিয়া গেট, লালকেল্লা, নিউ দিল্লি রেলস্টেশন।

    জানা যাচ্ছে, কাশ্মীরের অনন্তনাগ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যুর জেরে চাকরি যায় সেখানে কর্মরত ডাঃ উমর নবির। সে চলে আসে হরিয়ানার ফরিদাবাদে আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালে। উমর নবি, মুজাম্মিল গনি, শাহিন শাহিদ—তিন চিকিৎসকই সেখানে সহকর্মী ছিল। তারা আবার দু’টি টেলিগ্রাম অ্যাপের বিশেষ গ্রুপের সদস্যও হয়, ফারজান্দান-ই-দারুল উলুম এবং উমর বিন খাত্তাব। দুই গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে একঝাঁক ডাক্তারকে খুঁজে পেয়ে তাঁদের মস্তিষ্ক ধোলাইয়ের মিশনে নামে মৌলবি ইশতিকিয়া এবং ইরফান আহমেদ ওয়াঘা। কর্মহীন, মস্তিষ্কহীন, দরিদ্র জেহাদির তুলনায় ডাক্তার ও উচ্চশিক্ষিত ‘হোয়াইট কলার’ স্লিপার সেল ও এজেন্ট পাওয়া বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কাশ্মীরের আজাদির জন্য জেহাদে যোগ দেওয়ার প্ররোচনা দেওয়া হয় উমরদের। জয়েশ-ই-মহম্মদের মহিলা ইউনিট আবার যোগাযোগ করে ডাঃ শাহিদ শাহিনের সঙ্গে। গ্রুপের অন্যতম সদস্য সাহারানপুরের ডাঃ আদিল আহমেদ। শুরু হয় প্ল্যান। বড় কিছু করতে হবে। এবং সেটা রাজধানী দিল্লিতেই। 

    মুজাম্মিল এবং উমরের পাসপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, তারা একসঙ্গে তুরস্ক গিয়েছিল। সেখানেই আফগানিস্তান থেকে হাজির হয় দু‌ই ঩জয়েশ-ই-মহম্মদ হ্যান্ডলার। তাদের সঙ্গে প্রাথমিক বৈঠক শেষে স্থির হয়, বাইরে থেকে কোনও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গি নয়, ভারতের মধ্যে থেকে ‘হোমগ্রোন টেরর মডিউল’ তৈরি করা হবে। আর সেই অপারেশনের এপিসেন্টার হবে দিল্লির নাকের ডগায়, ফরিদাবাদ। কার্যত সন্ত্রাসের ভরকেন্দ্র হয়ে উঠল ফরিদাবাদের আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়।

    ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে উমর নবি এবং মুজাম্মিল একাধিক দিন লালকেল্লায় পরিদর্শন করেছে। গিয়েছে ইন্ডিয়া গেট, লোটাস টেম্পল, কনট প্লেসেও। ২৬ জানুয়ারি যতই এগিয়ে আসবে, ততই দিল্লি পুলিশ সীমান্তে নজরদারি ও গাড়ি স্ক্যানিং বাড়িয়ে দেবে। তাই কয়েকমাস আগেই দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকায় বিস্ফোরক ঢোকানোর প্ল্যান হয়! সেই কারণেই সেপ্টেম্বর, অক্টোবর থেকেই বিপুল বিস্ফোরক মজুত শুরু। কিন্তু সব প্ল্যান ভেস্তে গেল জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের অভিযানে ২৯০০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার ও দুই ডাক্তারের গ্রেফতারিতে। দ্রুত বাকি বিস্ফোরক সরাতে গিয়ে লালকেল্লার পার্কিংয়ে রাখা হয় আই-২০। সন্ধ্যায় বেরতে গিয়েই আচমকা বিস্ফোরণ! ব্রেজা, আই-২০ ও ইকোস্পোর্ট! ডাক্তারদের গাড়ি। কে সন্দেহ করবে? তাই বারুদের মুখে দাঁড়িয়ে ছিল নিশ্চিন্ত রাজধানী! 
  • Link to this news (বর্তমান)