• ২৬ জানুয়ারি লাল কেল্লাই টার্গেট ছিল জঙ্গিদের? কী বলছেন গোয়েন্দারা?
    এই সময় | ১৩ নভেম্বর ২০২৫
  • এই সময়: আত্মবিশ্বাসই কি কাল হলো?

    সোমবার ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে দেশের হৃৎপিণ্ড কেঁপে ওঠার পরে এখন এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, দিল্লি থেকে মাত্র ৫৫ কিলোমিটার দূরে ফরিদাবাদে প্রায় ৩,০০০ কেজি বিস্ফোরক এবং বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম মেলার পরেও কী ভাবে সকলের নজর এড়িয়ে দিল্লি ঢুকে পড়লেন আত্মঘাতী জঙ্গি-চিকিৎসক উমর মহম্মদ নবি? শুধু তা-ই নয়, যে হুন্ডাই আই-২০ গাড়িতে করে তিনি বিস্ফোরক নিয়ে এসেছিলেন, তা নিয়ে শুধুমাত্র লাল কেল্লাতেই যাননি তিনি। সোমবার লাল কেল্লার পার্কিংয়ে গাড়ি রাখার আগে ময়ূর বিহার, রামলীলা ময়দান, কনট প্লেসের মতো জনবহুল জায়গায় বিস্ফোরক-বোঝাই গাড়ি নিয়ে ঘুরেছিলেন উমর। প্রশ্ন উঠছে, যে সময়ে ফরিদাবাদে বিস্ফোরক উদ্ধারের জেরে গোটা দিল্লি জুড়ে নাকা চেকিং তুঙ্গে, সে সময়ে কী ভাবে সব স্ক্যানার গলে বিস্ফোরক ঠাসা গাড়ি নিয়ে অক্লেশে ঘুরে বেড়াতে পারলেন ওই ডাক্তার? হাতে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় পেয়েও কেন ওই জঙ্গিকে ধরা গেল না?

    ধৃতদের জেরা এবং ফোন থেকে উদ্ধার করা তথ্য একত্র করে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, প্রাথমিক ভাবে দীপাবলিতে দিল্লিতে নাশকতা ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। কিন্তু প্রস্তুতি সে ভাবে না-হওয়ায় তা বাতিল করতে হয়। পরের টার্গেট হিসেবে বেছে নেওয়া হয় ৬ ডিসেম্বর (বাবরি মসজিদ ভাঙার দিন) বা ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসকে। এ ক্ষেত্রে অযোধ্যার রাম মন্দিরও জঙ্গিদের নিশানায় ছিল বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন তদন্তকারীরা। তবে ২৬ জানুয়ারির টার্গেট যে লাল কেল্লাই ছিল, সে বিষয়ে মোটামুটি গোয়েন্দারা নিশ্চিত।

    কিন্তু এর মধ্যেই গুজরাট এটিএসের হাতে ধরা পড়ে যায় তিন জঙ্গি। বিষাক্ত রিসিন তৈরি করে গণহত্যার ছক কষেছিল তারা। কাশ্মীরে মৌলবিকে পাকড়াও করে বিস্ফোরক উদ্ধারের যে তদন্ত শুরু হয়েছিল, তার সূত্র এসে জুড়ে যায় গুজরাটে ধৃত চিকিৎসক সৈয়দ আহমেদ মহিউদ্দিনের গ্রেপ্তারিতে। মহিউদ্দিনদের গ্রেপ্তারির সময়ে সমান্তরাল ভাবে ফরিদাবাদ নিয়ে তদন্তের জালও গোটানো হচ্ছিল। সোমবার সকালেই পরপর ডাক্তারদের গ্রেপ্তার করা হয়। এক্স হ্যান্ডলে সেই তালিকা টাঙিয়ে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের তরফে লেখা হয়, ‘ইউ ক্যান রান বাট ইউ কান্ট হাইড’ (তুমি পালাতে পারো, কিন্তু লুকিয়ে থাকতে পারবে না)।

    তদন্তকারীদের বক্তব্য, ফরিদাবাদকে ক্রমশ চারদিক থেকে নিঃশব্দে ঘিরে ফেলা হচ্ছিল। তাই আল ফালাহ ইউনিভার্সিটির জঙ্গি-চিকিৎসকেরা একেবারে শেষ মুহূর্তে তা টের পান। সে কারণেই তাঁদের তড়িঘড়ি পালাতে হয়। ইউনিভার্সিটির সামনে শাহিন শাহিদের গাড়ি ফেলে যাওয়া বা মুজ়াম্মিলের বাড়িতে প্রায় ৩৬০ কেজি বিস্ফোরক মেলা এই তাড়াহুড়ো করে পালানোরই পরিণাম বলে দাবি গোয়েন্দাদের। তবে তাঁদের বক্তব্য, শেষ মুহূর্তেও মিশন থেকে সরে আসতে চাননি উমর। তাই দ্রুত যতটা সম্ভব, বিস্ফোরক নিয়ে রওনা দেন দিল্লির পথে।

    বিস্ফোরক উদ্ধার হয় রবিবার রাত থেকে তল্লাশিতে। সোমবার সকালেই গাড়ি নিয়ে দিল্লি ঢোকেন উমর। মাঝে তেল ভরানো, পলিউশন সার্টিফিকেট করানো — বারবার থেমেছেন তিনি। নয়াদিল্লির প্রাণকেন্দ্র কনট প্লেসে দীর্ঘ সময় ঘুরপাক খেয়েছেন। অথচ কেউ ঘূণাক্ষরেও টের পেলেন না, এটা কী ভাবে সম্ভব, সেই প্রশ্ন উঠছে। তা হলে কি নাকা চেকিংয়ে ঢিলেমি ছিল? কারণ গাড়ির যে রুট বুধবার উঠে আসছে, সেখানে একাধিক নাকা চেকিং ছিল। রামলীলা ময়দানের কাছে একটি মসজিদের সামনে গাড়ি পার্ক করে নমাজ়ও পড়েন উমর। সেই মসজিদেও তিনি অনেকক্ষণ সময় কাটান। এত কিছুর পরেও কিন্তু উমর একবারও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েননি।

    এ সব প্রশ্নের পাশাপাশি বুধবার একটি লাল ফোর্ড ইকোস্পোর্ট (DL10CK0458) গাড়িও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। গোয়েন্দারা তদন্তে জেনেছেন, বিস্ফোরণে ব্যবহৃত সাদা গাড়িটি ছাড়া আরও দু’টি গাড়ি কিনেছিলেন জঙ্গি চিকিৎসকেরা। তার একটি আল ফালাহ ইউনিভার্সিটির সামনে উদ্ধার করা মারুতি সুইফ্ট হতে পারে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। ওই গাড়ি থেকেই একে-৪৭ রাইফেল এবং গুলি উদ্ধার করা হয়েছিল। গাড়িটি শাহিনের বলে জেনেছেন তদন্তকারীরা। বুধবার উদ্ধার লাল গাড়ি দ্বিতীয়টি কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

    এ দিকে এ দিনই জানা গিয়েছে, হালফিলে জৈশ-ই-মহম্মদের মহিলা উইং ‘জামাত-উল-মোমিনাত’-এ যোগ দিয়েছেন ২০১৯ পুলওয়ামা হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড উমর ফারুকের স্ত্রী আফিরা বিবি। তাঁকে সংগঠনের ‘সুরা’ (কাউন্সিল সদস্য) হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। জৈশ প্রধান মাসুদ আজ়হারের বোন সাদিয়া আজ়হারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রেখে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আফিরাকে।

  • Link to this news (এই সময়)