• লাদাখে ইতিহাস! চিনের মোকাবিলায় এ বার ‘গেম চেঞ্জার’ নিওমা, বিশ্বের সর্বোচ্চ বিমানঘাঁটি
    এই সময় | ১৩ নভেম্বর ২০২৫
  • উচ্চতা ১৩,৭০০ ফুট! বিশ্বের আর কোনও দেশে এই উচ্চতায় কোনও সামরিক বিমানঘাঁটি নেই। বুধবার বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল অমরপ্রীত সিংয়ের হাতে সম্পূর্ণ রূপে চালু হয়ে গেল লাদাখের চাংথাং নিওমা বিমানঘাঁটি। ভারত ও চিনের মধ্যে যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বা LAC আছে, তা থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই বিমানঘাঁটিটি। এর অর্থ, পূর্ব লাদাখে চিনের বিরুদ্ধে ভারতের প্রতিরক্ষা এবং আক্রমণ, দুই ক্ষমতাই বহুগুণে বেড়ে গেল।

    ১৯৬২ সালের চিন-ভারত যুদ্ধের সময়ে যাতে সেখানে বিমান নামতে পারে, এই রকম প্রাথমিক অবতরণের এয়ারস্ট্রিপ হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছিল নিওমা। এর পরে দীর্ঘদিন যুদ্ধের সময়ে তৈরি সেই এয়ারস্ট্রিপ অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল।

    ২০০৮ সালে ফের এর উপরে নজর পড়ে বাহিনীর। তবে ২০২০ সালে ভারত-চিন সীমান্তে দুই পক্ষের সেনার মধ্যে অচলাবস্থা চলার পরে কেন্দ্রীয় সরকার নিওমাকে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিমান ঘাঁটিতে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। এ দিন সেই ঘাঁটি চালু হয়ে গেল।

    বর্তমানে এতে ২.৭ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি পাকা রানওয়ে রয়েছে। এটি প্রস্থে ৪৬ মিটার বা ১৫১ ফুট। এ ছাড়া হ্যাঙ্গার, এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল, আবাসন, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামরিক ভবন তৈরি করা হয়েছে। এটি তৈরির দায়িত্বে ছিল বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন বা BRO।

    ইতিমধ্যেই এই ঘাঁটি থেকে সুখোই-৩০ এমকেআই (Su-30 MKI) যুদ্ধবিমান পরিচালনার ছাড়পত্র দিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা বা IAF। ভবিষ্যতে আরও বিভিন্ন ধরনের সামরিক বিমান ও হেলিকপ্টার এখানে অবতরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

    সামরিক পরিবহন বিমানও এখানে নামতে পারবে। আগে নিওমা এয়ারস্ট্রিপে AN-32-এর মতো মাঝারি মাপের সামরিক পরিবহন বিমান নেমেছে। এখন C-17 গ্লোবমাস্টার, IL-76 এবং C-130 সুপার হারকিউলিসের মতো বড় মাপের সামরিক পরিবহন বিমান নামার মতোই পরিকাঠামো রয়েছে।

    নিওমা লাদাখের তৃতীয় বিমানঘাঁটি। এর আগেই ছিল লেহ এবং থোয়েস বিমানঘাঁটি। তবে এই তৃতীয় ঘাঁটিটির কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম:

    নিওমায় সারা বছর IAF-এর জওয়ানরা থাকবেন। ফলে চিনের বিরুদ্ধে ভারতের প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা বেড়ে গেল।

    আগেই বলা হয়েছে IAF-এর বড় মাপের মালবাহী বিমান এখানে নামতে পারবে। ফলে অল্প সময়েই কোনও হামলার জবাব দিতে তৈরি থাকবে বাহিনী। ধরা যাক LAC-এর কাছের ডেমচোক সেক্টর বা ডেপসাং সমভূমিতে সেনা এবং সামরিক সরঞ্জাম পাঠাতে হবে। এই বিমানঘাঁটিতে বড় মাপের সামরিক পরিবহন বিমান পাঠিয়ে সহজেই তা করা যাবে।

    সীমান্ত বরাবর নজরদারি এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রেও খুবই সুবিধা হবে। এই ঘাঁটি থেকে ড্রোন উড়িয়েই তা করা যাবে। এ ছাড়া ড্রোন ঝাঁক পাঠিয়ে হামলা চালানোও যেতে পারে।

    LAC-র ওই পারে রয়েছে চিনের G219 মহাসড়ক এবং নাগারি কুনশা বিমানবন্দর। যা এতদিন ভারতের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। নিওমা ঘাঁটি চালু হওয়ার পরে এই অঞ্চলে বিমান শক্তিতে ভারসাম্য এল বলে মনে করা হচ্ছে।

    এই বিমানঘাঁটির যা সুবিধা, তা-ই আবার এর সমস্যার কারণও বটে— LAC-এর কাছাকাছি অবস্থান। LAC থেকে মাত্র ৩৫ কিমি দূরে অবস্থিত হওয়ায় সব সময়ই সীমান্তের ওই পার থেকে কামান বা ড্রোন আক্রমণের ঝুঁকি থাকবে।

    এ ছাড়া এই অঞ্চলের আবহাওয়াও সশস্ত্র বাহিনীর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। শীতকালে তাপমাত্রা নেমে যায় মাইনাস চল্লিশ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে।

    এই পরিবেশ মানুষের জন্য অত্যন্ত কঠিন তো বটেই, যন্ত্রপাতি, অস্ত্রশস্ত্রও কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে। বিমান চলাচলেও সমস্যা হতে পারে।

    তবে এই সকল চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে প্রস্তুত IAF। লাদাখে গত আট দশক ধরে এই ধরনের পরিস্থিতিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তাদের।

    সমস্ত প্রতিকূলতা থেকে রক্ষা পাওয়ার মতো করে আবাসনগুলি তৈরি করা হয়েছে। যে হ্যাঙ্গারগুলিতে বিমান থাকবে, সেগুলি উত্তপ্ত রাখার মতো ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া বিশেষ রক্ষণাবেক্ষণের কেন্দ্রও রয়েছে।

    কাজেই নিওমা বিমানঘাঁটি পুরোপুরি কাজের জন্য তৈরি হয়ে যাওয়াটা ভারতের সামরিক ইতিহাসে এক মাইলফলক বলে মনে করা হচ্ছে। হিমালয় সীমান্তকে শক্তিশালী করার জন্য ধারাবাহিক ভাবে যে চেষ্টা চলছে, তারই ফসল এই ঘাঁটি। এ বার এই অঞ্চলে পা বাড়াতে গেলে চিনকে দু’বার ভাবতে হবে বৈকি।

  • Link to this news (এই সময়)