• এ রাজ্যে জইশের জাল কত দূর? সমাজমাধ্যম চষে ফেলছে পুলিশ
    আনন্দবাজার | ১৩ নভেম্বর ২০২৫
  • দেশ, সন্ত্রাস, সীমান্ত সংঘাতের সঙ্গে যুক্ত বাছা বাছা শব্দ ধরে এলাকা ভাগ করে চলছে খোঁজ। মূলত গত এক বছরে সমাজমাধ্যমে কে, কী পোস্ট করেছেন, প্রথমে বিশ্লেষণ চলছে তার। আলাদা নজর রাখা হচ্ছে ‘হোয়াইট কলার’ পেশা বলে পরিচিত কাজের সঙ্গে যুক্তদের সমাজমাধ্যম প্রোফাইলের উপরে। দিল্লিতে বিস্ফোরণের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সমাজমাধ্যম কার্যত চষে ফেলেছে পুলিশ। সূত্রের খবর, এ রাজ্যে জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের জাল কত দূর বিস্তৃত, তা দ্রুত খুঁজে বার করতেই আলাদা করে সাইবার শাখাকে সক্রিয় হতে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য পুলিশের শীর্ষ স্তর। এ জন্যই বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কলকাতা পুলিশের নবরূপে গঠিতলালবাজারের সাইবার ল্যাবের উপরে। ব্যবহার করা হচ্ছে সমাজমাধ্যমের মন বোঝার কাজে ব্যবহার হয়েথাকা নানা ধরনের ‘সেন্টিমেন্ট অ্যানালিসিস টুল’।

    রাজ্য পুলিশের এক সূত্রের দাবি, শুধু উত্তর ভারত বা কাশ্মীরেই নয়, দিল্লির বিস্ফোরণের পরে গোটা দেশের সমস্ত প্রান্তে যুদ্ধকালীন তৎপরতা শুরু হয়েছে। তদন্তে নেমে এ রাজ্যের পুলিশ মাথায় রাখছে সম্প্রতি জইশ-প্রধান মাসুদ আজহারের বাংলাদেশে সংগঠন বাড়ানোর উপরে জোর দেওয়ার বিষয়টি। বাংলাদেশের সঙ্গে এ রাজ্যের বিরাট সীমান্ত রয়েছে। সেই সীমান্ত পেরিয়ে কেউ এ-পারে এসে জঙ্গি তালিম দেওয়া শুরু করেছে কিনা, আলাদা করে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে সে ব্যাপারে। সেই সঙ্গেই পুলিশকে ভাবাচ্ছে দিল্লির বিস্ফোরণে একের পর এক চিকিৎসকের গ্রেফতার হওয়া। নানা সূত্র মারফত পুলিশ জেনেছে, আলাদা করে ‘হোয়াইট কলার’ পেশায় যুক্তদের দলে নেওয়া শুরু করেছে বেশ কিছু জঙ্গি সংগঠন। যার মধ্যে অন্যতম জইশ। কিছু দিন আগেই এ রাজ্যের বেশ কিছু সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারকে তারা দলে নিয়েছে বলে সূত্র মারফত খবর রয়েছে পুলিশের কাছে।

    লালবাজারের এক সূত্রের দাবি, ‘‘মূলত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসার ক্লাস করানোর নামে কয়েক হাজার সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেল তৈরি করার খবর রয়েছে। তাতে পড়ানোর অছিলায় আদতে মগজধোলাই চলেছে। তার পরে ক্লোজ়ড গ্রুপে নিয়ে গিয়ে চলেছে জঙ্গি প্রশিক্ষণ। দেশের একাধিক প্রান্ত থেকে এমন তথ্য এসেছে। বিস্ফোরণের পরে এই সমস্ত তথ্য কাজে লাগিয়েই রাত-দিন খোঁজ চালানো হচ্ছে।’’ পুলিশেরই আর একটি সূত্রের দাবি, একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও নানা ধরনের ক্লোজ়ড গ্রুপ চালানোর যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছে। সেখানে কী তথ্যের লেনদেন হচ্ছে, তা জানতে নজরদারি চালানো হচ্ছে। ওই পুলিশকর্মীর মন্তব্য, ‘‘আপাতত কিছু দিন সর্বত্র গা-ঢাকা দেওয়ার একটা চেষ্টা চলবে। তার মধ্যেই কড়া হাতে খোঁজ চালিয়ে ধরপাকড়ের চেষ্টা চলছে।’’

    এর মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, অতীতে খাস কলকাতায় ভিন্ রাজ্যের পুলিশ এসে গুলশন কলোনি বা খিদিরপুর থেকে জঙ্গিদের ধরে নিয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত পুলিশের কাছে কোনও খবরই ছিল না। দিনের পর দিন এ শহরে হোটেল বদলে জঙ্গিরা থেকে গেলেও পুলিশ কিছুই টের পায়নি। এখন দিল্লিতে বিস্ফোরণের পরে সক্রিয় পুলিশ কি আদৌ কোনও জঙ্গি-মডিউলের খোঁজ পাবে? রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ অফিসারের মন্তব্য, ‘‘কোটি কোটি টাকায় লালবাজারের সাইবার শাখা ঢেলে সাজানো হচ্ছে। তাতে অত্যাধুনিক নানা যন্ত্র, কম্পিউটার কেনা হয়েছে। সেখানে দ্রুত হস্তাক্ষর মিলিয়েদুষ্কৃতীর সম্পর্কে তথ্য বার করে নেওয়া থেকে মোবাইল ফোনে নজরদারি চালিয়ে হাল-হকিকত নিমেষে বার করে নেওয়া সম্ভব। এই সাইবার ল্যাব থেকেই নানা পদ্ধতিতে দিন-রাত নজরদারি শুরু হয়েছে। সবটা দেখে রিপোর্টও জমা পড়বে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)