• দিল্লি বিস্ফোরণের জেরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে জোরালো হল নজরদারি
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৩ নভেম্বর ২০২৫
  •  দিল্লিতে ভয়াবহ গাড়ি বিস্ফোরণকাণ্ডের পর ভারত-বাংলাদেশ সীমানায় নজরদারি আরও কয়েকগুণ বাড়ানো হল। দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগণাসহ, বনগাঁ এবং বসিরহাটের বিভিন্ন জলপথে উপকূলরক্ষীবাহিনী এবং বিএসএফ আরও তৎপর হয়ে উঠেছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে নাকা চেকিং শুরু হয়েছে। পণ্যবাহী ট্রাক, লরি এবং প্রাইভেট গাড়িতেও তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

    বিএসএফ এবং কাস্টমস সারা বছর পেট্রাপোল সীমান্তে নজরদারি চালায়, যেহেতু এটি একটি আন্তর্জাতিক সীমানা।  সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লি থেকে  বিস্ফোরণের খবর পাওয়ার সঙ্গেসঙ্গে নতুন  করে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। সীমান্ত অতিক্রম করে যাতে কোনো জঙ্গি ভারত থেকে বাংলাদেশে পালাতে না পারে সেই উদ্দেশে সীমানায় নজরদারিতে কড়াকড়ি আনা হয়েছে।

    মঙ্গলবার সকাল থেকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা সব ট্রাক থামিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। ট্রাকের কেবিনে এবং গাড়ির নিচে কোনো বিস্ফোরক লুকোনো আছে কিনা তাও তল্লাশি করে দেখা হচ্ছে। পেট্রাপোল সীমান্তে চলছে নাকা চেকিং। ট্রাকগুলির নথিপত্র ভালো করে পরীক্ষা  করা হচ্ছে। ট্রাকচালক এবং ট্রাকের সহকারী কর্মীদের কাছে বৈধ নথি আছে কিনা তাও দেখা হচ্ছে।

    বাংলাদেশ থেকে ভারতে যে সব যাত্রীরা আসছেন তাঁদের পরিচয়পত্র যাচাই করে দেখা হচ্ছে। বনগাঁ-চাকদা, বনগাঁ–বাগদা, যশোহর রোডের নানান জায়গায় নাকা তল্লাশি চালানো হচ্ছে পুলিশের তরফ থেকে। জিআরপি এবং আরপিএফ বনগাঁ স্টেশনের আশপাশের এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছে। সব যাত্রীদের ব্যাগ খুলে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। স্টেশন চত্বরে পার্ক করা গাড়িগুলিকে মেটাল ডিটেক্টরের সাহায্যে পরীক্ষা করা হচ্ছে।

    মঙ্গলবার বসিরহাটের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতেও নাকা তল্লাশি চালানো হয় বসিরহাট ইছামতী সেতুর উপরে, মিনাখাঁর  বাসন্তী হাইওয়েতে, স্বরূপনগর, হিঙ্গলগঞ্জ ও হাসনাবাদ এলাকায় রাস্তায় গাড়ি  দাঁড় করিয়ে পুলিশ তল্লাশি চালায়। বসিরহাট মহাকুমায় জল ও স্থল মিলিয়ে মোট ১৩৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে ভারত–বাংলাদেশ সীমান্ত । বসিরহাটের পুলিশ সুপার হোসেন মেহেদি রহমান বলেছেন, ‘সারা বছরই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে পুলিশ নজরদারি করে।

    এখন জরুরি পরিস্থিতিতে সব’কটা থানা এলাকাতেই নাকা চেকিং চলছে। সব গাড়ি তল্লাশি করে দেখা হচ্ছে।’ ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক জলসীমা এলাকাতেও বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। দেশের উপকূলীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ জলপথে উপকূল রক্ষীবাহিনী, বিএসএফ ও সুন্দরবন উপকূল পুলিশ যৌথভাবে টহলদারি শুরু করেছে।

    মঙ্গলবার দুপুরে নামখানা ও ফ্রেজারগঞ্জ উপকূল থানার উদ্যোগে বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন নদীপথে স্পিডবোটে করে টহল দেন পুলিশকর্মীরা। মাছ ধরার ট্রলারগুলিতেও চালানো হয়েছে তল্লাশি। মৎস্যজীবীদের সতর্ক করা হয়েছে এবং তাঁদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কোনো সন্দেহজনক নৌযান দেখা গেলে যেন তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় উপকূল থানা, ফ্রেজারগঞ্জ ঘাঁটির উপকূলরক্ষী বাহিনীকে জানায়।

    সুন্দরবন পুলিশ জেলার এক আধিকারিক বলেছেন, ‘আমরা নদী, সমুদ্র, ও স্থল, তিন দিকেই নজর রাখছি। কোনোরকম অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টা করা হলে অনুপ্রবেশকারীর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ কাকদ্বীপ ফিশারম্যান ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজন মাইতি বলেছেন, ‘আমাদের মৎস্যজীবীরা এখন আরও সতর্ক হয়েছেন। তাঁরা সবসময় পুলিশ প্রশাসনের  সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। আন্তর্জাতিক জলসীমা দিয়ে যাতে কোনও অনুপ্রবেশ না ঘটে, সে দিকে কড়া নজর রাখছেন মৎস্যজীবীরা।’
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)