• রামমন্দির থেকে কাশীধাম, ২০০ ধর্মীয়স্থানে হামলার ছক জঙ্গিদের! সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা?
    প্রতিদিন | ১৩ নভেম্বর ২০২৫
  • নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: দু-বছর ধরে বিস্ফোরক সংগ্রহের পর আইইডি দিয়ে ২৬/১১-এর মতো দেশজুড়ে প্রায় ২০০টি বিস্ফোরণ করে হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল দিল্লি বিস্ফোরণে কাণ্ডে জড়িতদের। রাজধানীর লালকেল্লা, ইন্ডিয়া গেট, কনস্টিটিউশন ক্লাব এবং দিল্লির গৌরীশঙ্কর মন্দিরের মতো স্থানে বোমা হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর, কাশী, অযোধ্যার মতো ধর্মীয় স্থানগুলিতে হামলা চালিয়ে দেশে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দিতে চেয়েছিল সন্ত্রাসীরা। রাজধানী দিল্লির বিভিন্ন জায়গা তো বটেই, পাশাপাশি দিল্লি সংলগ্ন গুরুগ্রাম এবং ফরিদাবাদের বড় বড় মল, দেশের বড় রেলস্টেশনগুলিতে বিস্ফোরণ ঘটানোরও লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসীদের। এবং এই কাজের জন্য এবারে বেছে নেওয়া হয়েছিল কাশ্মীরের পুলওয়ামা, শোপিয়ান এবং অনন্তনাগের ডাক্তারদের, যাতে তারা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে। ফরিদাবাদের OL10CK0458 উমরের উদ্ধার হওয়া গাড়ি। পিটিআই আল ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়কেই এবারে নিজেদের ঘাঁটি করেছিল তারা।

    দিল্লি পুলিশ আগেই সন্দেহ করেছিল যে দিল্লি বিস্ফোরণে জড়িত উমরের একটি নয়, দুটি গাড়ি ছিল। যার মধ্যে ছিল একটি লাল ফোর্ড ইকোস্পোর্ট গাড়ি। বুধবার সকাল থেকেই দিল্লি পুলিশ দিল্লি এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্য উত্তরপ্রদেশ এবং হরিয়ানায় সতর্কতা জারি করে গাড়িটিকে খুঁজছিল। এদিন সন্ধ্যায় ফরিদাবাদের খাণ্ডাওয়ালি গ্রামের কাছে গাড়িটি পার্ক করা অবস্থায় পাওয়া যায়। ফরেনসিক টিম গাড়ি থেকে এদিন রাতেই প্রমাণ সংগ্রহ করেছে।

    সন্দেহ করা হচ্ছে যে এই গাড়িটির সঙ্গে বিস্ফোরণের মূল হোতা ড. উমর নবির কোনও যোগসূত্র আছে। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, এদিন দিল্লির গোবিন্দপুরী মেট্রো স্টেশনের কাছে বাস স্ট্যান্ডে একটি গাড়িতে দুটি বন্দুক, চারটি মোবাইল এবং বেশ কিছু নগদ-সহ দুজন সন্দেহভাজনকে আটক করেছে দিল্লি পুলিশ। সেই গাড়িতেও বিস্ফোরক ছিল বলে জল্পনা থাকলেও সরকারিভাবে কোনও তথ্য মেলেনি।

    এদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বুধবার ভুটান থেকে ফিরে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি এলএনজেপি হাসপাতালে যান। মোদি এলএনজেপি হাসপাতালে আধ ঘণ্টা সময় কাটান এবং বিস্ফোরণের সময় রোগীদের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। রাতে মোদির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে দিল্লি বিস্ফোরণের নিহতদের স্মৃতির উদ্দেশে দু-মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং একটি প্রস্তাবও গৃহীত হয়। সেখানে দিল্লি বিস্ফোরণকে সন্ত্রাসবাদী ঘটনা, দেশবিরোধী কার্যকলাপ বলে উল্লেখ করে অবিলম্বে দোষীদের খুঁজে বার করে শাস্তির কথা বলা হলেও সেখানে সীমান্তপারের সন্ত্রাসের কথা উল্লেখ করা হয়নি।

    বিশেষজ্ঞমহলের মতে, সরকার নিজের কথার জালে নিজেই আটকে গিয়েছে, পাকিস্তানের তরফ থেকে কোনও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হলে তা যে ‘অ্যাক্ট অফ ওয়ার’ বলে ধরে নেওয়া হবে সে কথা খোদ প্রধানমন্ত্রীই উল্লেখ করেছিলেন। তাই এবারে দিল্লি বিস্ফোরণ কাণ্ডে জইশ-ই মহম্মদ-এর যোগ থাকার ইঙ্গিত মিললেও সরকারের তরফ থেকে এখনও মুখ খোলা হয়নি। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠকে দিল্লি বিস্ফোরণ নিয়ে বিশদে আলোচনা হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে।

    অন্যদিকে, সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, দিল্লি বিস্ফোরণে ব্যবহৃত গাড়ি বিস্ফোরণটি আত্মঘাতী গাড়ি বোমা হামলা ছিল না। কারণ, গাড়িটি কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেনি বা কোনও ভবনে প্রবেশ করেনি, অর্থাৎ এটি কোনও আত্মঘাতী গাড়ি বোমা হামলা ছিল না। বিস্ফোরণে উমর নিহত হয়েছে। বিস্ফোরণের ধ্বংসাবশেষে পাওয়া দেহের অংশ শনাক্ত করার জন্য পুলিশ ইতিমধ্যেই তার মায়ের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছে। ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৪০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
  • Link to this news (প্রতিদিন)