• অনেকের তো দুটো বৌ আছে, আমার কি একটা বান্ধবী থাকতে পারে না?
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৩ নভেম্বর ২০২৫
  • জেল থেকে মুক্তির পর নিজের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় নেমেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের বহিষ্কৃত নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নিজেকে ও নিজের আনুগত্যকেই তাঁর এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছেন নিয়োগ দুর্নীতি মামলা অভিযুক্ত পার্থ। তিনি জানিয়েছেন, মমতা যতদিন আছেন, তাঁকেই তিনি নেতা মানবেন। পাশাপাশি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দলের ‘অটোমেটিক চয়েস’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। বান্ধবী অর্পিতাকে যেভাবে অসম্মান করা হয়েছে তার নিন্দা জানিয়ে তিনি প্রশ্ন করেন, কারও দুটো বউ থাকলে আমার একটা বান্ধবী থাকতে পারে না? এ প্রসঙ্গে উদাহরণ হিসেবে শোভন–বৈশাখীর নাম উল্লেখ করেন পার্থ।

    মঙ্গলবার জেল থেকে বাড়ি ফেরার পরে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি চিঠি পাঠান পার্থ। চিঠিতে তিনি প্রশ্ন করেন, দলীয় সংবিধানের কোন নিয়মে তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে? এই চিঠির প্রতিলিপি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর কাছেও পাঠানো হয়েছে। যদিও ঘনিষ্ঠদের দাবি, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার সময়ই ওই চিঠি লিখেছিলেন তিনি। জেলমুক্তির পর খবরটি প্রকাশ্যে আসে।

    জেলমুক্তির পর বুধবার নিজের বিধানসভা কেন্দ্র বেহালা (পশ্চিম)–এর জনগণের উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা শুরু করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেই চিঠিতে তিনি জনগণের কাছ থেকে জানতে চেয়েছেন, চাকরি দেওয়ার বদলে তিনি কার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন? তাঁর নাম করে কেউ টাকা তুলেছেন কি না তা–ও জানতে চান পার্থ। প্রমাণ সহ এবিষয়ে তাঁকে জানানো হলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। পার্থ মনে করেন, তাঁকে মসীলিপ্ত করার চেষ্টা হয়েছে। যে বা যাঁরা এই কাজ করেছেন তাঁদের ছেড়ে দেওয়া সামাজিক অপরাধ হবে। তবে তিনি তাঁর বিধানসভা এলাকার বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত। সকলকে তিনি জানাবেন যে, তিনি নির্দোষ। প্রয়োজনে তিনি অটো নিয়ে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেহালাবাসীর কাছে পৌঁছে যেতে চান। প্রত্যেক বাড়িতে গিয়ে তিনি জানাবেন যে, তিনি সৎ পথে ছিলেন।

    পার্থ জানিয়েছেন, নিয়োগে কোনও দুর্নীতি হয়নি। দীর্ঘসময় শিক্ষামন্ত্রী পদে থাকাকালীন কেউ দুর্নীতির অভিযোগ করেননি। ২০২১ সালে পদ থেকে সরে যাওয়ার পর এত কিছু বলা হচ্ছে। বেনিয়ম, ত্রুটি হতে পারে কিন্তু দুর্নীতি হয়নি। তৃণমূল প্রসঙ্গে তিনি জানান, দলকে ক্ষমতায় আনার জন্য তিনি কাজ করেছেন। দল থেকে সাসপেন্ড হওয়ার বিষয়ে দলের তরফে কেউ কিছু জানাননি তাঁকে। ইডি আধিকারিকরা সবার প্রথমে এই খবর দিয়েছিলেন। কিন্তু এসব সত্ত্বেও তিনি দলের বিরুদ্ধাচারণ করেননি। দল তাঁকে ফিরিয়ে না নিলে সেই পরিস্থিতির জন্যও তিনি প্রস্তুত। অভিষেককে তৃণমূলের ‘অটোম্যাটিক চয়েস’ বলে উল্লেখ করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, বর্তমানে অভিষেকের সঙ্গে যাঁরা ঘুরে বেড়ান তাঁদের অতীতে দেখা যায়নি। আগে তিনি অভিষেকের পাশে থেকেছেন।

    পার্থর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিধানসভার আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে বিধায়ক হিসাবে যোগ দিতে চান পাঁচ বারের এই বিধায়ক। কিন্তু দল থেকে সাসপেন্ড হওয়ায় নিজের পছন্দের ট্রেজারি বেঞ্চে বসতে পারবেন না তিনি। তাই অধিবেশনে তাঁকে কোন আসনে বসতে দেওয়া হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মঙ্গলবার বাড়িতে ফেরার পর বুধবারই পার্থের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) এনুমারেশন ফর্ম দিয়ে এসেছেন বুথ স্তরের আধিকারিক (বিএলও)। পার্থ সেই ফর্ম গ্রহণও করেছেন বলে জানা গিয়েছে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)