অর্ণবাংশু নিয়োগী: মুকুল রায় একসময় রাজ্য রাজনীতির বহুল চর্চিত নাম ছিল। তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়াসঙ্গী ছিলেন তিনি। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই বহু সংগ্রামের যোদ্ধা ছিলেন তিনি। প্রতিষ্ঠার সময় থেকে তৃণমূলের অন্যতম শীর্ষ নেতা ছিলেন মুকুল৷ ধীরে ধীরে দলের ভিতর তাঁর কাজের পরিধি বাড়তে থাকে ৷ রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশই মনে করত, গুরুত্বের বিচারে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরই ছিলেন মুকুল৷
কিন্তু মতানৈক্য়ের জেরে ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর তিনি তৃণমূল ছাড়েন ৷ দলের সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দেন ৷ রাজ্যসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডুর সঙ্গে দেখা করে সংসদের উচ্চকক্ষের সদস্য পদ থেকেও ইস্তফা দেন ৷ কয়েক সপ্তাহ বাদে ওই বছরের ৩ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে যোগ দেন মুকুল ৷
কিন্তু মোহভঙ্গ হতেই আবার তৃণমূলে ফিরে আসেন। ২০২২ থেকেই তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে অনুপস্থিত। করোনায় স্ত্রী বিয়োগের পর তিনিও অন্তরালে চলে যান।
মুকুলকে রাজ্য বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান করার বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছিল মামলা। কাজে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷
বিজেপি বিধায়ক মুকুল রায়কে অনৈতিক ভাবে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যান করেছেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এমন দাবি করে বিমানের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেছিলেন বঙ্গ বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা শুভেন্দু ৷
মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ খাদিজের আবেদন নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন বিরোধী দলনেতা ৷ দীর্ঘদিন ধরে হাইকোর্টে মামলার শুনানি হয় ৷ বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মোঃ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চে ৷ সেই মামলার শুনানিতে দুই পক্ষের আইনজীবীরা ইতিমধ্যে লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন ৷ বিরোধী দলনেতা যে হলফনামা দিয়েছেন, তাতে স্বাক্ষর করতে শরীরে কলকাতা হাইকোর্টে এসেছিলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক ৷
অবশেষে মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ খারিজ করল কলকাতা হাইকোর্ট। দলত্যাগ বিরোধী আইন অনুযায়ী মুকুল রায়ের বিধায়ক পথ খারিজ করল কলকাতা হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বিধানসভার অধ্যক্ষের সিদ্ধান্ত খারিজ কলকাতা হাইকোর্টের। পাবলিক একাউন্টস কমিটি তে মুকুল কে রাখাকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা হয়েছিল। নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি দেবাংসু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চের।
২০১৯ সালের লোকসভা ও ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে সামনে থেকে নেতৃত্বও দেন মুকুল ৷ ২০২১ সালে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে কৃষ্ণনগর উত্তর আসন থেকে জয়ী হন ৷ তৃণমূল প্রার্থী কৌশানী মুখোপাধ্য়ায়কে পরাজিত করেন ৩৫ হাজারেরও বেশি ভোটে ৷ এরপর ওই বছরের ১১ জুন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অন্যদের উপস্থিতিতে পুত্র শুভ্রাংশু রায়ের সঙ্গে মুকুল রায়ও তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরে আসেন ৷ খাতায় কলমে বিজেপি বিধায়ক হলেও তৃণমূলে নিজের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেন মুকুল ৷
ওই বছরের ২৫ জুন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্য়ায় তাঁকে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি-র সদস্য নির্বাচিত করেন ৷ পরে ৯ জুলাই বিজেপি বিধায়ক মুকুল রায়কে পিএসি-র চেয়ারম্যান করা হয় ৷ এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও বিজেপি নেতা অম্বিকা রায় ৷
প্রসঙ্গত, মুকুল রায় দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ও শয্যাশায়ী।