• জাতীয় পরিবেশ আদালতের ছাড়পত্র নিয়েই হবে পৌষমেলা
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৪ নভেম্বর ২০২৫
  • আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে ফের নিজের ঐতিহ্যে ফিরছে শান্তিনিকেতন। জাতীয় পরিবেশ আদালতের ছাড়পত্র নিয়েই এ বছর পূর্বপল্লীর মাঠে আয়োজিত হতে চলেছে বহুল প্রতীক্ষিত পৌষমেলা। ২৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে ছয় দিন চলবে এই ঐতিহ্যবাহী মেলা। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ও শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের যৌথ বৈঠকে নেওয়া হয়েছে এই সিদ্ধান্ত।

    মেলার প্রস্তুতি শুরু হলেও এবার একাধিক নতুন নিয়ম জারি করা হচ্ছে। বিশেষত প্লট বুকিংয়ে দীর্ঘদিনের দুর্নীতি রুখতেই নেওয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, টাকা জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্টলের জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হবে। কেউ নির্দিষ্ট জায়গা চাইলে, তাকে দ্বিগুণ টাকা দিতে হবে। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতীগ ঘোষ বলেন, ‘পৌষমেলা হোক, এটা সবাই চাই। তবে পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে তবেই মেলা হবে। আর প্লট বুকিংয়ে আগের থেকে অনেক বেশি কড়াকড়ি করা হবে।’

    বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিবেশ আদালতের সব নির্দেশ ও শর্ত মেনেই মেলার আয়োজন করা হবে। আদালতের অনুমোদন মিললেই বীরভূম জেলা প্রশাসনের সঙ্গে চূড়ান্ত বৈঠকে বসা হবে। উল্লেখ্য, ২০১৬ ও ২০১৮ সালে পরিবেশ কর্মী সুভাষ দত্তের করা মামলার রায়ে জাতীয় পরিবেশ আদালত মেলায় দূষণ নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু বিধিনিষেধ জারি করেছিল। সেই নিয়মই এ বছরও মানা হবে।

    বিশ্বভারতী গত বছর ইউনেসকো-র কাছ থেকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ স্বীকৃতি পাওয়ার পর এই দ্বিতীয় পৌষমেলা আয়োজন করতে চলেছে। মঙ্গলবার বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে উপাচার্য প্রবীরকুমার ঘোষের তত্ত্বাবধানে মেলা সংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উপস্থিত ছিলেন কর্মসচিব বিকাশ মুখোপাধ্যায়, শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সম্পাদক অনিল কোনার-সহ অন্যান্য আধিকারিকরা।

    ইতিহাস অনুসারে জানা যায়, ১৮৪৩ সালের ২১ ডিসেম্বর অর্থাৎ ৭ পৌষ মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রহ্মধর্মে দীক্ষিত হন। সেই দীক্ষার দিনটিকে স্মরণ করে রাখতে ১৮৪৫ সালে গোরিটির বাগানে ব্রহ্ম উপাসনা ও মেলার সূচনা করেন। পরে শান্তিনিকেতনে আশ্রম প্রতিষ্ঠার পর ১৮৯১ সাল থেকে এই মেলা প্রতি বছরই অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মহর্ষির নির্দেশ অনুযায়ী, এটি সর্বধর্মের মিলনক্ষেত্র— যেখানে মূর্তিপূজা, কুৎসিত আমোদ-উল্লাস, মদ্য-মাংস বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

    তবে ইতিহাসে এমনও সময় এসেছে, যখন পৌষমেলা বন্ধ ছিল। ১৯৪৩ সালের মন্বন্তর, ২০২০ সালে কোভিড পরিস্থিতি এবং ২০২১-২৩ সালে উপাচার্য-রাজ্য সংঘাতের জেরে মেলা হয়নি। ২০১৯ সালের পর প্রথমবার ২০২৪ সালে ফের বিশ্বভারতীর উদ্যোগে পৌষমেলা আয়োজিত হয়।

    এবারের মেলা সেই ধারারই পূর্ণ প্রত্যাবর্তন— ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ শান্তিনিকেতনের আত্মার সঙ্গে ঐতিহ্যের নতুন সংযোগ। স্থানীয় মানুষ থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের পর্যটক— সকলে এখন তাকিয়ে রয়েছেন পৌষের প্রথম প্রভাতের দিকে, যখন আবার ভেসে উঠবে শান্তিনিকেতনের মাটিতে গানের সুর— ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে।’
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)