সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: একদিকে রেললাইন। অন্যদিকে হাইটেনশন লাইন। সবমিলিয়ে ওএলএস (অবস্টাকল লিমিটেশন সারফেস) সমীক্ষায় জমিজটে আপাতত থমকে পুরুলিয়ার ছড়রায় প্রস্তাবিত ছোট বিমানবন্দর। ২০২৩ সালে এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া এই ছড়রায় বিমানবন্দর গড়ে তোলার জন্য প্রি-ফিজিবিলিটি স্টাডি করে। তারপর রাজ্যের পরিবহণ দপ্তর ছড়রায় বিমানবন্দর তৈরির জন্য রাইটসকে দিয়ে সমীক্ষা করায়। সেই প্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে প্রকল্পস্থল ছড়রা এয়ারস্ট্রিপ ফের যৌথভাবে পরিদর্শন করা হয়। রূপায়ণকারী সংস্থা রাইটস ও সেইসঙ্গে পরিবহণ, ভূমি, বিদ্যুৎ ও বনদপ্তরের আধিকারিকরা
রীতিমতো ম্যাপ নিয়ে পরিদর্শন করেন। যে সব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনিক ভবনে জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠক হয়।
ছড়রায় প্রস্তাবিত ছোট বিমানবন্দরের জন্য রেললাইনের কাছে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের ১১ ব্যাটেলিয়ানের যে ক্যাম্পাস রয়েছে তা সরাতে হবে বলে এয়ারক্রাফট ইঞ্জিনিয়াররা এদিন জানিয়ে দেন। এই প্রকল্পের জায়গায় পিপিপি মডেলে ফ্লাইট ট্রেনিং অর্গানাইজেশন গড়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে রাজ্যের। যাতে পাইলট প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়। পুরুলিয়ার জেলাশাসক কোন্থাম সুধীর বলেন, “যৌথভাবে পরিদর্শন শেষে বৈঠক হয়েছে। যে সকল প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তার যাতে দ্রুত সমাধান হয় সেই জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।”
রিজিওনাল কানেক্টিভিটি স্কিম (আরসিএস)-র আওতায় দেশের প্রত্যন্ত ও দূরবর্তী এলাকার সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ গড়ে তোলার কাজে ‘উড়ান’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে কেন্দ্র। সেই প্রকল্পের অধীনেই ছড়রায় প্রস্তাবিত ছোট বিমানবন্দর গড়ে উঠবে। এই বিমানবন্দর গড়লে রাজ্যের সপ্তম বাণিজ্যিক বিমানবন্দর হবে। ছড়রা বিমানবন্দরের জন্য প্রায় ৩০০ একর জমি রয়েছে। সেই জমি এখন রাজ্যের হাতে। এই এয়ারস্ট্রিপের পূর্বদিকে রয়েছে হাইটেনশন লাইন। পশ্চিমে রেললাইন। পূর্বে যেখানে রানওয়ে শেষ হচ্ছে, সেখান থেকে আরও দেড় হাজার থেকে দু’ হাজার মিটার এবং একইভাবে পশ্চিমদিকে যেখানে রানওয়ে শেষ হচ্ছে, সেখান থেকে আরও দেড় হাজার মিটার জমি প্রয়োজন। যেহেতু পশ্চিম দিকে রেললাইন রয়েছে তাই ওইদিকে পরিকাঠামো বৃদ্ধির কোনও সুযোগ নেই। ফলে পূর্বদিকে জমি অধিগ্রহণও করতে হতে পারে। কিন্তু সেই অধিগ্রহণের অনুমতি রাজ্য দেবে কিনা, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।
দু’বছর আগের বৈঠকে জেলা প্রশাসন অধিগ্রহণের বিষয়ে সায় দেয়নি। যদিও এই বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত। রাজ্যের পরিবহণ দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকল্প রিপোর্ট অনুযায়ী এখানে ওয়ান বি অর্থাৎ ১১০০ মিটার রানওয়ে হবে। যদিও প্রকল্প রিপোর্টে আগামী দিনে টু সি ১৭০০ মিটার রানওয়ের প্রস্তাব রয়েছে। সবমিলিয়ে আপাতত পূর্ব ও পশ্চিমদিকে মোট ৩ হাজার ও রানওয়ের জন্য ১১০০ মিটার-সহ মোট ৪১০০ মিটারের ক্লিয়ারেন্স দরকার। ওই হাইটেনশন লাইনের ক্ষেত্রে উচ্চতা প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জ্বালানি নেওয়ার জন্য এখানে বিমান ওঠানামা করত। আপাতত ওই পরিত্যক্ত বিমানবন্দরে মূল রানওয়ে ছাড়া পিটিটি রানওয়ে রয়েছে। এদিন ওই রানওয়ে ঘুরে দেখার পাশাপাশি সমগ্র প্রকল্পস্থল সহ জমির খোঁজে বিভিন্ন দিক পরিদর্শন চলে। কারণ ছোট বিমানবন্দরের জন্য দমকল, এটিসি বিল্ডিং, ইলেকট্রিক সাব স্টেশন, নিরাপত্তা রক্ষীর ছাউনি, তিনটি ওয়াচ টাওয়ার, আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাঙ্ক ও বম্ব কুলিন পিট নির্মাণ করতে হবে। অর্থাৎ বোমা পাওয়া গেলে তা যাতে সুরক্ষিতভাবে নিষ্ক্রিয় করা যায়।
যেহেতু পরিকাঠামো নির্মাণ-সহ সমস্ত রকম পরিকল্পনা রূপায়িত করতে বাজেটের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পূর্ত দপ্তরকে। তাই এদিন পূর্ত দপ্তরের বাস্তুকাররা রাইটসকে জানিয়ে দেয়, রানওয়ের কংক্রিট পুনরায় নির্মাণ করতে হবে। কারণ, সেই ১৯৪২ সালে তৈরি হওয়া সেই সঙ্গে এই রানওয়ের উপর দিয়ে পণ্য বোঝাই লরি যাতায়াতে ক্ষতি হয়েছে। এখানে আপাতত যা পরিকাঠামো সেই বিষয়টিকে সামনে রেখে ১৯ আসনের বিমান নামতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে আরও জমি প্রয়োজন। তবে সর্বোচ্চ ৪২ সিটের বিমান যাতায়াতে সমস্যা হবে না বলে এই পরিদর্শন থেকে উঠে এসেছ। বৈঠকে তা জেলাশাসককে জানানো হয়েছে।