একদিনেই কি ভোলবদল, মুখ খুলেও আচমকা সারাদিন ‘গৃহবন্দি’ পার্থ!
প্রতিদিন | ১৪ নভেম্বর ২০২৫
রমেন দাস: সংকটমোচনের দিন মঙ্গলবার জেলমুক্তি হয়েছে তাঁর। রাজ্যের একদা দাপুটে নেতা, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ঘরে ফিরেছেন প্রায় সাড়ে তিনবছর পর। হাউ হাউ করে কেঁদেছেন। কর্মীদের, বিশেষত পার্থ-অনুগামীদের স্লোগানে আবেগাপ্লুত হয়েছেন নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নাম জড়ানো পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু বাড়ি ফিরে আর তেমন বিশ্রাম নেননি তিনি। একের পর এক সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলেছেন, প্রায় প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন স্বভাবসিদ্ধ হাসিমুখেই। বান্ধবীর ফ্ল্যাটে টাকা উদ্ধার থেকে বেহালার জনতা, ‘দুয়ারে বিধায়কে’র সম্ভাবনার মধ্যেই মুখ খুলেছেন পার্থ। প্রায় দেড়দিন দিল্লি, এসআইআর পেরিয়ে তিনিই ট্রেন্ডিং থেকেছেন সর্বত্র।
কিন্তু আচমকা যেন ভোলবদল! নাকতলার খানপুর রোডের যে আড়াই তলা বাড়িতে একরাত আগেই পার্থ-কোলাহলে যেন মেলা বসেছিল, সেই বাড়িতেই সান্নাটা! অর্থাৎ নেই কোলাহল, কালো গ্রিলের ফাঁকে সতর্ক প্রহরায় কলকাতা পুলিশের কর্মীরা। মাঝে মাঝে কেউ দরজা খুলছেন, আবার অদৃশ্যও হচ্ছেন মুহূর্তেই! কিন্তু হলটা কী?
সকাল হতেই এদিনও বাংলা এবং জাতীয় সংবাদমাধ্যমের আনাগোনা তখন শুরু হয়েছে। বাড়ির উল্টো দিকের অপেক্ষার চেয়ারে বসে সকলেই ভাবছেন এই বুঝি তিনি আসবেন! ওই যে দোতলার বারান্দায় দেখা মিলবে দাদার! অস্থিরতা বাড়ছে কর্মীদের মনেও। টেলিভিশন চ্যানেলে বসা তৃণমূলপন্থী এক অধ্যাপক থেকে শুরু করে এক সংবাদপত্রের প্রাক্তন প্রধান, সকলেই খবর পাঠাচ্ছেন, দেখা করতে চাই! কিন্তু তাঁর দেখা নেই! কারও কোনও অনুরোধ তিনি আদৌ জানতে পারছেন কি পারছেন না, সেই প্রশ্নের আবহেও ‘পার্থদা’ কেমন যেন সকাল থেকেই বিলীন!
কেন এই অবস্থা, আচমকা পার্থ চট্টোপাধ্যায় কোথায় গেলেন? প্রায় ঘণ্টাকয়েক কাটানোর পর বাড়িতে এল একটি গাড়ি, তাতে ব্যবহৃত বহু জিনিসপত্রের ভিড়। সেই আওয়াজেও দেখা নেই তাঁর। একটু খোঁজ নিতেই জানা গেল, সকাল সকাল উঠেই নাকি তিনি বলেছেন, আজ কোনও কথা নয়! আর ওই বাড়ির কর্মীরা বলছেন, স্যরের শরীরটা খারাপ, বিশ্রামে আছেন! সেই কারণেই নাকি এক মিনিটের জন্যও তাঁর দেখা মেলেনি বাড়ির বারান্দা অথবা অতিপরিচিত অফিসেও। তাহলে কি পার্থ চট্টোপাধ্যায় এত কথা বলে ক্লান্ত! নাকি নেপথ্যে অন্য কারণ?
অন্য কেউ হলে অন্য কথা! কিন্তু তিনি তো পার্থ! তাঁকে ঘিরেই রাজনীতি! বান্ধবী থেকে টাকা, তিনি ছাড়া কে কোথায়! আচমকা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এই কথা না বলার কারণ কী? কানাঘুষো শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই! অনেকেই বলছেন, বলতে বলতে হয়তো বেশি বলে ফেলেছেন, আর সেই কারণেই কি পার্থকে কেউ বারণ করেছেন? নাকি বান্ধবীকে নিয়ে কিছু বেফাঁস বলেছেন তিনি? যদিও পার্থর এই একদিনের ‘লাগাম’, বেহালা পশ্চিমে এখনও না যাওয়া নিয়ে জল্পনা চলছেই! ফের রাত পোহালেই কি কথা বলবেন তিনি? এমন আশাও করছেন কেউ কেউ।
প্রসঙ্গত, জেলমুক্তির পর অর্পিতা প্রসঙ্গে মুখ খোলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “লোকের দু’টো বউ থাকতে পারে, আমার বান্ধবী থাকতে পারে না!” তা নিয়েও জলঘোলা হয় বিস্তর। ২০২২ সালে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একইদিনে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। অর্পিতার খাটের নিচ থেকে উদ্ধার হয় কোটি কোটি টাকা,গয়না। তারপরই প্রকাশ্যে আসে পার্থ-অর্পিতার সম্পর্কের কথা। যদিও পার্থ বরাবর দাবি করেন, অর্পিতাকে তিনি চিনতেন না। এদিকে অর্পিতা দাবি করেছিলেন, তাঁর খাটের নিচে পাওয়া টাকা পার্থর। তবে ভয়ে তিনি মুখ খুলতে পারেননি।