আর কোথায় বিস্ফোরক? দেশজুড়ে তল্লাশি, দিল্লি হানার প্ল্যান আল-ফালাহ ক্যাম্পাসেই
বর্তমান | ১৪ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: শুরু হবে দিল্লি থেকে। আগামী ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিনে পরপর ৬টি বিস্ফোরণ। প্ল্যান সফল হলে সেই মডেলই হবে আগামী ফর্মুলা। কী সেই ফর্মুলা? টিম তৈরি হবে আটজনকে নিয়ে। চারটি গ্রুপ। দু’জন করে থাকবে একটি গ্রুপে। চারটি গাড়ি। প্রতিটিই ভাড়া করা হবে। বুকিংয়ের সময় দেখানো হবে জাল আধার কার্ড ও ঠিকানা। আর অপারেশনের আগে নম্বর প্লেট বদলে ফেলাই প্রথম কাজ। দিল্লির পাইলট প্রজেক্ট হবে সবথেকে বড়। এরপর একই ফর্মুলা রাজ্যে রাজ্যে। অর্থাৎ জয়েশ-ই-ডক্টরস (মেডিকেল মডিউল) গোষ্ঠীর টার্গেট ছিল, দেশের একের পর এক শহরে এভাবে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চলা। ভারতের সিকিউরিটি সিস্টেম যাতে দিশাহারা হয়ে যায়। তাই একের পর এক গ্রেফতারি ও অভিযানের পর দিল্লি পুলিশ, এনআইএ, হরিয়ানা অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াড, কাশ্মীর স্পেশাল সেলের আপাতত তল্লাশির লক্ষ্য একটাই—আরও বিস্ফোরক কোথায় লুকিয়ে রাখা? কত পরিমাণ? আই-২০, ব্রেজা, ইকোস্পোর্টের পর আরও একটি গাড়ি তদন্তকারীদের স্ক্যানারে। সেটি সুইফট ডিজায়ার। জানা গিয়েছে, ২৯০০ কেজি বিস্ফোরক উপকরণ বাজেয়াপ্ত হওয়া এবং দুই ডাক্তার গ্রেপ্তার হওয়ার পর বাকি সদস্যরা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল এদিক ওদিক। ঠিক যেভাবে লালকেল্লার সামনে পার্কিংয়ে ছিল আই-২০। পুলিশের সন্দেহ, ফরিদাবাদের আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবের কাছাকাছি ছিল বিস্ফোরক। ল্যাবে পরীক্ষা করা হত তার কার্যকারিতা। সেইসব বিস্ফোরকের সন্ধানে মরিয়া তদন্তকারীরা।
আপাতত পাঁচ রাজ্যজুড়ে নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দেওয়া ছিল এই মেডিকেল (ডক্টর) মডিউলের প্ল্যান। আর এই গোটা প্ল্যানের এপিসেন্টার ছিল আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ১৭ নম্বর বিল্ডিং। রুম নম্বর ১৩। ডাঃ মুজাম্মিলের নামে বরাদ্দ ওই ঘর সন্ত্রাসের যাবতীয় প্ল্যানের আঁতুড়ঘর। সেখানে প্ল্যান চূড়ান্ত হওয়ার পর নতুন রিক্রুটদের পরবর্তী নির্দেশিকা এবং রাজ্যে রাজ্যে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার নিয়মাবলি জানানো হত একটি বিশেষ অ্যাপের মাধ্যমে। ‘থ্রিমা’!
জনপ্রিয় সব অ্যাপ ছেড়ে ‘থ্রিমা’ সকলকে ডাউনলোড করতে বলেছিল ডাঃ উমর নবি। কেন? কারণ, একমাত্র এই অ্যাপ ব্যবহার করতে ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হয় না। অর্থাৎ ফোন নম্বর এবং ইমেল ছাড়াই ব্যবহার করা যায়। ভিডিও কল, ভয়েস কল, ফাইল শেয়ার, গ্রুপ চ্যাট সব হবে। কিন্তু এন্ড টু এন্ড এনক্রিপ্টেড! অর্থাৎ, ‘মিনিমাম পার্সোনাল ডেটা, ম্যাক্সিমাম প্রাইভেসি’। কাশ্মীরের সোপিয়ানের মৌলবি ইরফান ছিল এই ডাক্তার মডিউল গড়ে তোলার প্রধান মাস্টারমাইন্ড।
কাশ্মীর থেকে দিল্লি, হরিয়ানা থেকে সাহারানপুর, প্রয়াগরাজ, কানপুর— প্রতিটি শহরে ছড়িয়ে দিল্লি বিস্ফোরণের শিকড়ের জাল। টাকা কোথা থেকে এসেছে? সূত্রের খবর, মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের মাউ জনপদের এক বন্ধ হওয়া চিটফান্ডের মালিক জাভেদ আহমেদ সিদ্দিকি তৈরি করেছিলেন এই আল-ফালাহ হাসপাতাল। চেয়ারম্যান এখনও সেই প্রাক্তন চিটফান্ড মালিকই। তাহলে সেখান থেকেই কি এসেছে টাকা?
লখনউয়ের শাহিদ শাহিনের উপর আবার দায়িত্ব ছিল নারীবাহিনি গড়ে তোলা। পুলিশ একটি সূত্র থেকে জানতে পারছে, মাসুদ আজহারের ভাগ্নি আফিরা বিবির সঙ্গে এই মহিলা চিকিৎসকের যোগসূত্র গড়ে উঠেছিল। কিন্তু অপারেশন সিন্দুরের সময় বাবা-মায়ের সঙ্গেই মারা যায় সেই আফিরা বিবিও। তারপর ভারতে এই প্রথম জাল ছড়িয়েছে জয়েশের নারী ইউনিট জামাত-ই-মোমিনাত, যার প্রধান উত্তর ভারতে রিক্রুটার শাহিন। দক্ষিণ ভারতেও এরকমই কেউ থাকবে নিশ্চয়ই। কে তিনি? দিল্লি বিস্ফোরণের আগে শাহিন এবং উমর নবি সংগ্রহ করেছিল ২৬ লক্ষ টাকা। সেই টাকা কোথায় এই মুহূর্তে? কার কাছে?