মুখ্যমন্ত্রী বললে পদত্যাগ: রবি দলের বিরুদ্ধেই সরব ‘অপমানিত’ লক্ষপতি
বর্তমান | ১৪ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কোচবিহার, সংবাদদাতা, মাথাভাঙা ও হলদিবাড়ি: দলের জেলা সভাপতির নির্দেশে কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান পদ ছাড়তে নারাজ বর্ষীয়ান তৃণমূল কংগ্রেস নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক মেসেজ করে যে নির্দেশ দিয়েছেন তা তাঁর এক্তিয়ারের মধ্যেই পড়ে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন রবিবাবু। তাঁর কথায়, একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী বললে তিনি একমিনিটের মধ্যে ইস্তফা দিয়ে দেবেন। অন্যদিকে, বিস্ফোরক মাথাভাঙা পুরসভার চেয়ারম্যান লক্ষপতি প্রামাণিকও। জেলা সভাপতির চিঠি পেয়েছেন তিনিও। অভিমানী লক্ষপতিবাবুর বক্তব্য, দলের সিদ্ধান্তে অপমানিত বোধ করছি। তাছাড়া বিগত বিধানসভা ও লোকসভা ভোটের ফলাফল যদি পদত্যাগ করতে বাধ্য করার কারণ হিসেবে ধরা হয় তাহলে তো প্রথম পরিবর্তন করা উচিত শহর ব্লক সভাপতির। কিন্তু উনি নিজের পদে পুনর্বহাল রয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে চেয়ারম্যান বদল নিয়ে হলদিবাড়িতেও জট কাটেনি। ‘বিদ্রোহী’ কাউন্সিলারদের নিয়ে স্থানীয় বিধায়ক এবং জেলা তৃণমূল সভাপতির এদিনের বৈঠক কার্যত নিষ্ফলা হয়েছে। এককথায় পুরসভাগুলির চেয়ারম্যান বদল ইস্যুতে সরগরম কোচবিহারের রাজনীতি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে যথারীতি কোচবিহার পুরসভায় এসে নিজের চেম্বারে বসে কাজ করেন রবিবাবু। আগের দিনই তাঁর কাছে জেলা সভাপতির কাছ থেকে পদ ছাড়ার মেসেজ আসে। গোটা ঘটনায় বর্ষীয়ান এই নেতা যে রীতিমতো ক্ষুব্ধ তা এদিন আর চাপা থাকেনি। প্রকাশ্যেই বলেন, দলের যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়েছে। পাশাপাশি একথাও বলেন, দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললে হাওড়া সেতু থেকে গঙ্গায় ঝাঁপ দিতেও রাজি আছি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্য নেতৃত্বের থেকে পদ ছাড়ার কোনও বার্তা আসেনি। জেলা সভাপতি মেসেজ করেছেন। ২২ বছর দলের জেলা সভাপতি ছিলাম। আমিও কিছু সাংগঠনিক আইনকানুন জানি। জেলা সভাপতির এক্তিয়ারের মধ্যে এটা পড়ে না। মুখ্যমন্ত্রী যদি একটা ফোন করেন বা মেসেজ করেন সঙ্গে সঙ্গে সেটা কার্যকর করব।
এ ব্যাপারে জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিকের বক্তব্য জানতে চেয়ে ফোন এবং মেসেজ করলেও জবাব আসেনি। দলের জেলা চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মন বলেন, কাকে কী নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানা নেই। জেলা বা রাজ্য নেতৃত্ব কেউই কিছু জানায়নি।
অন্যদিকে, রবিবাবুকে অপসারণ করে তাঁর চেয়ারে যাঁকে বসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সেই কাউন্সিলার দিলীপ সাহা বলেন, জেলা সভাপতির কাছ থেকে চিঠি পেয়েছি। সেখানে আমাকে দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে। তবে এটা আইনি বিষয়। দায়িত্ব নিতে গেলে আগে তো বর্তমান চেয়ারম্যানকে পদত্যাগ করতে হবে।
অন্যদিকে, লক্ষপতি প্রামাণিক পদত্যাগের চিঠি পাওয়ার দু’দিন পর মুখ খুললেন। তাঁকে বলির পাঁঠা করা হয়েছে, এমনটাই দাবি করেন। বলেন, দুই দফায় ১০ বছর চেয়ারম্যান পদে রয়েছি। কী কারণে সরে যেতে হবে সেটাই বুঝতে পারছি না। অপমানিত বোধ করছি।
অন্যদিকে, শহর তৃণমূল সভাপতি বিশ্বজিৎ রায় বলেন, এদিন চেয়ারম্যান কি বলেছেন জানি না। দলের অনুগত সৈনিক হিসেবে দলীয় নির্দেশ সবার মেনে নেওয়া উচিত।
এদিকে, বৃহস্পতিবার মেখলিগঞ্জ পুরসভার হলঘরে হলদিবাড়ি পুরসভার ১১ জন কাউন্সিলকে নিয়ে বৈঠকে বসেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক, মেখলিগঞ্জের বিধায়ক পরেশচন্দ্র অধিকারী। ওই ১১জন কাউন্সিলারের মধ্যে আটজনই বর্তমান চেয়ারম্যান শংকরকুমার দাস ও ভাইস চেয়ারম্যান অমিতাভ বিশ্বাসকেই চাইছেন। অপরদিকে, বাকি তিন কাউন্সিলার দলের সিদ্ধান্তকে মান্যতা দেওয়ার জন্য বৈঠকে আওয়াজ তোলেন। তবে বৈঠকে কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি নেতৃত্ব। স্বভাবতই বৈঠক নিষ্ফলা হয়। জেলা সভাপতি, বিধায়ক কেউই কোনও কথা বলতে চাননি। এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ আঁটেন চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানও।