• ধরা পড়া কচ্ছপ বাজারে এলেই উদ্ধার করে জলাশয়ে ছাড়েন দুর্গাপুরের বাসিন্দা
    বর্তমান | ১৪ নভেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, দুর্গাপুর: কোনও মৎসজীবীর জালে ধরা পড়া কচ্ছপ বাজারে আসলেই তা উদ্ধার করেন দুর্গাপুরের বাসিন্দা পল্টু ধীবর। কখনও নিজের পকেটের টাকা দিয়েও কিনে নেন বাজারে সেই আসা কচ্ছপ। উদ্ধার করা কচ্ছপগুলিকে সনাতন মতে পুজো করে অনুকূল পরিবেশে ছেড়ে দেন তিনি। পেশায় দুর্গাপুরের বেনাচিতি বাজারের ওই মাছের আড়তদার কচ্ছপ রক্ষায় বছরের পর বছর ধরে কাজ করে চলেছেন। পল্টুবাবুর দাবি, জীবজগতের মঙ্গল কামনায় বিষ্ণুর অবতার হিসেবে ওই কচ্ছপগুলিকে তিনি পুজো করে জলাশয়ে ছাড়েন। তাঁর এই কর্মকাণ্ডে বর্তমানে বেশ কয়েকজন যুবকও কচ্ছপের প্রাণ রক্ষার্থে কচ্ছপ উদ্ধার করে জলাশয়ে ছাড়ার কাজ শুরু করেছেন। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি মানব সমাজকে সচেতন করতে তাঁর এই অভিনব উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন দুর্গাপুর চেম্বার অব কমার্সের কার্যকরী সদস্য ভোলা ভগত।

    মাছ ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, কচ্ছপের মাংস সুস্বাদু হওয়ায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে একসময় এর ব্যাপক চাহিদা ছিল। ফলে কচ্ছপ প্রায় বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছিল। তাই কচ্ছপ সংরক্ষণে কচ্ছপ ধরা এবং বিক্রি করা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী বেআইনি ঘোষণা করা হয়। কচ্ছপ বিলুপ্ত হয়ে গেলে পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হবে। বাস্তুতন্ত্রেরেও প্রভাব পড়বে। তাই কচ্ছপ শিকার করা বা বিক্রি করা বেআইনি ঘোষণা করা হয়। এরই মধ্যে একসময় লুকিয়ে-চুরিয়ে দুর্গাপুরের বাজারগুলিতে মৎস্যজীবীরা বেআইনিভাবে বিক্রি করত। এমনকী, বেনাচিতি বাজারেও বেশকিছু বছর আগে বিক্রি হতো কচ্ছপ। কচ্ছপ বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকায় ও কচ্ছপ হিন্দু ধর্মের দেবতা বিষ্ণুদেবের অবতার হওয়ায় ব্যবসায়ী পল্টুবাবু কচ্ছপ ধরা ও বিক্রি করার বিরোধিতা করেন। ২০২২ সাল থেকে বাজারে কোনও মৎস্যজীবী কচ্ছপ বিক্রি করতে এলে পল্টুবাবু তাঁদের কাছ থেকে কচ্ছপ টাকার বিনিময়ে কিনতে শুরু করেন। পাশাপাশি ওই মৎস্যজীবীরা যাতে কচ্ছপ না ধরে তারজন্যও সতর্ক করেন। বর্তমানে ওই বাজারে লুকিয়ে-চুরিয়ে কচ্ছপ বিক্রি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তিনি বাজারে আসা কচ্ছপ উদ্ধার করে দুর্গাপুরের দামোদর নদে ও স্থানীয় জলাশয়ে ছেড়ে দেন। ইতিমধ্যেই তিনি এখনও পর্যন্ত প্রায় ১০টি কচ্ছপ উদ্ধার করে অনুকূল  জলাশয়ে ছেড়েছেন।

    পল্টুবাবু বলেন, আমি কচ্ছপ উদ্ধার করে অনুকূল জলাশয়ে ছেড়ে আসি। কচ্ছপ ছাড়ার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়ে কচ্ছপ শিকার করা থেকে বিরত থাকার জন্য সচেতন করি মানুষকে।

    দুর্গাপুর চেম্বার অব কমার্সের কার্যকরী সদস্য ভোলা ভগত বলেন, স্থানীয় পুকুরে কচ্ছপ ছাড়তে দেখেছি পল্টুবাবুকে। তিনি মাছ ব্যবসায়ী হয়েও  সমাজকে সচেতন করতে ভালো উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁর এই কর্মকাণ্ড সত্যিই  প্রশংসনীয়।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)