নেই ভোটার কার্ড, ২০০২ সালের তালিকাতেও নাম নেই দুশ্চিন্তায় স্বাধীনতা সংগ্রামী পরিবারেরই সদস্যা
বর্তমান | ১৪ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: দেশ স্বাধীন হওয়ার আগের বছর কলকাতায় জন্মেছিলেন কল্পনা বসু। তাঁর বাবা সহ পরিবারের একাধিক সদস্য স্বাধীনতা সংগ্রামে নানাভাবে অংশ নিয়েছিলেন। বর্তমানে এসআইআর আতঙ্ক চেপে ধরেছে কল্পনাদেবীকে। বাঁকুড়া-২ ব্লকের বৃদ্ধাশ্রমে বসে ওই বৃদ্ধা ইনিউমারেশন ফর্ম পাওয়ার আশায় দিন গুনছিলেন। কিন্তু ভোটার তালিকায় তাঁর নাম না থাকায় তাঁর নামে ওই ফর্ম আসেনি বলে স্থানীয় বুথ লেভেল অফিসার জানিয়ে দিয়েছেন। ২০০২ সালের এসআইআরেও কল্পনাদেবীর নাম ছিল না। যাঁর পূর্বপুরুষরা একসময় দেশ থেকে বৃটিশদের উৎখাত করেছিলেন, তাঁকেই নাগরিকত্ব হারানোর আশঙ্কায় দিনগুনতে হচ্ছে।
শুক্রবার বৃদ্ধাশ্রমের ছোট ঘরে বসে কল্পনাদেবী স্মৃতিচারণ করছিলেন। আট ভাইবোনের মধ্যে তিনি বাবা-মায়ের ষষ্ঠ সন্তান। ১৯৪৬ সালে কলকাতার সখের বাজারে তাঁর জন্ম। বর্তমানে ওই এলাকা ঠাকুরপুকুর থানার অন্তর্গত। বাবা জীতেন্দ্রনাথ বসু বিপ্লবী বারীন ঘোষ, অরবিন্দ ঘোষের নেতৃত্বে স্বাধীনতা আন্দোলনে কাজ করেছিলেন। তাঁরা ঋষি অরবিন্দের দূর সম্পর্কের আত্মীয় বলেও কল্পনাদেবী জানিয়েছেন। ফলে ছোট থেকেই জাতীয়তাবাদী ভাবধারা তাঁকে উদ্বুদ্ধ করে। পরে কল্পনাদেবীর মা কমলা বসু কংগ্রেসি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। অতুল্য ঘোষ সম্পর্কে কমলাদেবীর জামাইবাবু। ফলে বড় বড় কংগ্রেস নেতানেত্রীদের সঙ্গে কমলাদেবীর ওঠাবসা ছিল।
এদিন কল্পনাদেবী বলেন, মায়ের সঙ্গে শৈশবে বহু কংগ্রেস নেতার বাড়িতে যেতাম। তবে মা রাজনীতিতে আসতে বারণ করতেন। কলেজ জীবনে আবেগের বশে নকশাল আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ি। সেইসূত্রে কারবাসও হয়েছে। ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনা করার পরেও চাকরি করিনি। দেশ সেবার ব্রতকে পাথেয় করে সমাজের নানা কাজে নিজেকে নিয়োজিত করি। সমাজসেবা করতে গিয়েই সংসার পাতা হয়নি। এখন আত্মীয়দের সাহায্যে বৃদ্ধাশ্রমের খরচ মিটিয়ে থাকি।
তিনি আরও বলেন, গত ১১ বছর ধরে বিকনার বৃদ্ধাশ্রমে রয়েছি। শেষবার ১৯৯২ সালে কলকাতার বড়িশার একটি স্কুলে ভোট দিয়েছিলাম। শারীরিক অসুস্থতার কারণে পরে আর ভোট দিতে যাওয়া হয়নি। ২০০২ সালের এসআইআরেও নাম ছিল না। ২০২০ সালে বাঁকুড়ায় ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করি। সরকারের বিভিন্ন মহলে চিঠিও পাঠিয়েছিলাম। বিকনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুনানি হয়। কিন্তু তালিকায় নাম ওঠেনি। তারপর প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরেও ভোটার তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভূক্ত করতে পারিনি।
বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি তথা বিকনা গ্রামের বিধান সিংহ বলেন, এত তাড়াহুড়ো করে এসআইআর করার ফলে অনেকেই প্রয়োজনীয় কাগজ জোগাড় করতে পারছেন না। গত ২০ বছরে বহু মানুষ এক জায়গা থেকে অন্যত্র গিয়ে বসবাস করছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই সহায়স্বম্বলহীন। তাঁদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ওই আবাসিকের কী সমস্যা হয়েছে তা আমি দলের তরফে দেখব।
বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, আমরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। তবে স্থানান্তর না করা পর্যন্ত কলকাতার ভোটার তালিকাতেই ওই বৃদ্ধার নাম থাকার কথা। শেষবার তিনি যে বুথে ভোট দিয়েছেন, সেখানকার বিএলওর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। -নিজস্ব চিত্র