• এক স্কুলের তিনজন মাত্র শিক্ষক, প্রত্যেকেই বিএলও-র দায়িত্বে, শান্তিপুরের স্কুলে লাটে পড়াশোনা, ক্ষোভ
    বর্তমান | ১৪ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা এসআইআরের জাঁতাকলে পড়ে বিভিন্ন সরকারি স্কুলে প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে পড়াশোনা। শান্তিপুর ব্লকের তিওয়ারি মাঠ ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষক সংকটে বন্ধ ক্লাস। তিনজন শিক্ষক নিয়ে চলা এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনজনকেই বুথ লেভেল অফিসার বা বিএলও হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ায় গত তিনদিন ধরে তালা পড়েছে ক্লাসে। আগামী ডিসেম্বর মাসেই স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা আগাম ঘোষিত। এই পরিস্থিতিতে পড়াশোনা ডকে ওঠায় দিশেহারা পড়ুয়া ও অভিভাবকরা। দ্রুত এই সমস্যার সমাধানে নির্বাচন কমিশনের সক্রিয় হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন তাঁরা।

    জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে রাজ্যজুড়ে চলছে এসআইআর বা ভোটার তালিকা সংশোধনের বিশেষ পর্যালোচনা। সেইমতো প্রতিটি বুথে সরকারি কর্মচারীদেরই বিএলওর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বহু জায়গায় মূলত প্রাথমিক শিক্ষকদেরই এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে স্কুলের নিয়মিত পাঠদান। তিওয়ারি মাঠ ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে মোট তিনজন শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক তপনকুমার মজুমদার, সহ শিক্ষক তুহিন ঘোষ ও অসীমকুমার প্রামাণিক। তিনজনকেই বিএলও হিসেবে কাজে পাঠানো হয়েছে। প্রায় ৬৮ জন ছাত্রছাত্রী সহ কেজি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। শিক্ষকরা বারবার প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করেছিলেন, যেন একজন শিক্ষককে অন্তত স্কুলে রাখা হয়। কিন্তু সেই অনুরোধে কর্ণপাত করা হয়নি। প্রধান শিক্ষক তপনকুমার মজুমদার বলেন, সমস্যা ভীষণ গুরুতর। হাতে অল্প সময়ের মধ্যে ফর্ম বিলি, সংগ্রহ ও ডিজিটাইজেশনের কাজ করতে হচ্ছে। এই অবস্থায় স্কুল চালানো অসম্ভব। ডিসেম্বরের পরীক্ষার আগে ছাত্রছাত্রীরা একেবারেই প্রস্তুতি নিতে পারছে না, এটাই সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা। একজনকে অন্তত স্কুল চালাতে দেওয়া হোক। কারণ ওই এলাকায় ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠনের জন্য আমাদের তিওয়ারি মাঠ ফ্রি প্রাইমারি স্কুল অন্যতম ভরসা। শিক্ষকদের পাশাপাশি অভিভাবকদের দাবি, পরীক্ষার আগে পড়াশোনার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ বেশিরভাগ পড়ুয়ার অভিভাবকদেরই সেই আর্থিক সামর্থ্য নেই যে, বাড়িতে গৃহশিক্ষক রেখে পড়াবেন। স্কুলে পড়াশোনা না হলে তার প্রভাব পড়তে পারে খুদে পড়ুয়াদের রেজাল্টে।

    শান্তিপুরের বিডিও সন্দীপ ঘোষ বলেন, একটি স্কুলের সমস্ত শিক্ষককে বিএলও হিসেবে নিযুক্ত করার কথা নয়। হয়তো ওই স্কুলে আরও শিক্ষক রয়েছেন। বিষয়টি সম্পর্কে আমি বিস্তারিত জানি না, খোঁজ নিয়ে দেখছি। অর্থাৎ সব মিলিয়ে, প্রশাসনিক দায়িত্বের চাপে শিক্ষাক্ষেত্রে দেখা দিচ্ছে নতুন সংকট। পরীক্ষার প্রাক্কালে পড়াশোনার এমন ব্যাঘাতে প্রশ্ন উঠছে— এসআইআরের এই চাপের বোঝা বইবে কারা, শিক্ষকরা না ছাত্রছাত্রীরা।
  • Link to this news (বর্তমান)